ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ১৮
চেলসিকে হারিয়ে ৪৫ বছর পর রেকর্ড ভাঙ্গল ফুলহাম
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে বড় রাত বলা হয় ‘বক্সিং ডে’কে। ফুটবল বিশ্ব যখন বড়দিনের ছুটিতে ব্যস্ত, তখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের তারকারা ব্যস্ত গেমউইক ১৮-এর ম্যাচ নিয়ে। বড়দিনের পরদিন কেমন কাটালো দলগুলো? দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
ম্যানচেস্টার সিটি ১-১ এভারটন
সিটি: বার্নাদো সিলভা ১৪’
এভারটন: ইলিমান এনদিয়ায়ে ৩৬’
পেপ হার্দিওলা যেন দেজা ভ্যু দেখছেন। ম্যাচের পর ম্যাচ পেরিয়ে যাচ্ছে, জয়ের কোনো দেখা নেই। বড়দিন ছোঁয়ায় হয়তো ভাগ্য ফিরবে নিজেদের দিকে। কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটি ঘুরপাক খাচ্ছে হার আর ড্রয়ের বৃত্তে। অন্যদিকে শন ডাইচের অধীনে এভারটন আছে ফুরফুরে মেজাজে। আর্সেনাল, চেলসির পর ম্যানচেস্টার সিটিকে আটকে দিয়েছে তারা। আগের দুটো ম্যাচ গোলশূণ্য ড্র হলেও এ ম্যাচে গোলের দেখা পেয়েছে তারা। অবশ্য শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল সিটি। ‘বক্সিং ডে’র সন্ধ্যায় গোলের খাতা খোলেন বার্নাদো সিলভা। ৩৬ মিনিটে সে গোল পরিশোধ করেন এনদিয়ায়ে। দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল সিটি। ৫৩ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টি মিস করেছেন আর্লিং হল্যান্ড। হল্যান্ডের পেনাল্টি থামাতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে। অবশেষে ১-১ গোলে ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় এভারটনকে।
বোর্নমাউথ ০-০ ক্রিস্টাল প্যালেস
খোদ অধিনায়ক যখন ম্যাচকে ‘রাবিশ’ আর ‘বোরিং’ বলে আখ্যা দেন, তবে সে ম্যাচ নিয়ে বেশিকিছু বলার থাকে না। গোলশুণ্য ড্র শেষে ক্রিস্টাল প্যালেসের অধিনায়ক মার্ক গুয়েহি ম্যাচটাকে ব্যখ্যা করেছেন এভাবেই। “অন্তত ‘বক্সিং ডে’তে মানুষ এমন খেলা দেখতে চায় না”। পুরো ম্যাচে দুই দলই ছিল সমতায়। খুব যে একটা আক্রমণে গিয়েছেন দুই দল, তেমনও নয়। দুই গোলরক্ষককে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো আক্রমণও ছিল না। বড় কোনো ঘটনা ছাড়া ড্র হয়েছে ম্যাচটি।
চেলসি ১-২ ফুলহাম
চেলসি: কোল পালমার ১৬’
ফুলহাম: হ্যারি উইলসন ৮২’, রদ্রিগো মুনিজ ৯০+৫’
গত সপ্তাহে এভারটনের সঙ্গে ড্র করে লিগের লড়াইয়ে হোঁচট খেয়েছিল চেলসি। সে তুলনায় ফুলহামের ম্যাচটা বেশ সহজই ছিল তাদের জন্য। নিজেদের মাটিতে শেষ ১৯ ম্যাচ ধরে অপরাজিত, সময়ের হিসেবে ৪৫ বছর! কিন্তু খেলার মাঠে এসব রেকর্ডের মূল্য বড্ড ঠুনকো। তা না হলে শেষ ৬ ম্যাচে মাত্র একটিতে জেতা দল ফুলহাম এভাবে কামব্যাক দেবে কে ভেবেছিল? কোল পালমারের গোলে ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল ব্লুজরাই। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও ছিল তাদের হাতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল সবটা। ফাঁকা জায়গা থেকে উইলসনের এক হেডে সমতায় ফেরে ফুলহাম। অতিরিক্ত সময়ে আবারও ফাকা হয়ে যায় চেলসি ডিফেন্স, সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নেয় ফুলহাম। ফাঁকা জায়গা থেকে গোল করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌছে দেন রদ্রিগো মুনিজ। এই জয় দিয়ে ৪৫ বছর পর স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে জয়ের দেখা পেল ফুলহাম। লন্ডনের দল হয়েও প্রায় অর্ধশতক ধরে অজেয় ছিল মাঠটি। সেই জয় এল বক্সিং ডের উদযাপন হয়ে।
নিউক্যাসেল ইউনাইটেড ৩-০ অ্যাস্টন ভিলা
নিউক্যাসেল: অ্যান্থনি গর্ডন ২’, অ্যালেকজেন্দার ইসাক ৫৯’, জোয়েলিংটন ৯০+১’
মাঝমাঠ থেকে পুরো ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণ করেছেন সান্দ্রো তোনালি। নিউক্যাসেলের জার্সিতে একের পর এক অসাধারণ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন এই ইতালিয়ান। অ্যাস্টন ভিলাকে বিশাল পরাজয় উপহার দেওয়ার পেছনে বড় অবদান তার। তবে হারের পেছনে ভিলার দায়ী করছেন রেফারির বাজে সিদ্ধান্তকে। ৩২ মিনিটে জন ডুরানকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। খালি চোখে সেটাকে ফাউল বলে মনেই হচ্ছিল না। এ নিয়েই হাফ টাইমের বিরতিতে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পরে দুই দলের কর্মকর্তারা। লাল কার্ড দেখেন দুই দলের দুই সহকারী কোচ। ১০ জনের দল নিয়ে আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি ভিলা। অন্যদিকে দ্বিতীয় মিনিটে এগিয়ে যাওয়া নিউক্যাসেল ব্যবধান করেছে তিনগুণ।
নটিংহাম ফরেস্ট ১-০ টটেনহাম হটস্পার্স
ফরেস্ট: অ্যান্থনি এলেঙ্গা ২৮’
যত সময় যাচ্ছে, গ্রিক কোচ আগ্নে পোস্তেকোগলুর সময়টা যেন ফুরিয়ে আসছে। একের পর এক হারে দ্রুতই তার পিঠ দেয়ালে ঠেকতে যাচ্ছে। মুদ্রার ঠিক উল্টোপিঠে আছেন ফরেস্ট কোচ নুনো এসপারিতো সান্তো। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে নটিংহাম ফরেস্টের কোনো এত কম ম্যাচে এত পয়েন্ট অর্জন করতে পারেননি। ৯ জয় নিয়ে মৌসুম শেষ করা দলটি মৌসুমের অর্ধেক পার করতে না করতে নিজেদের নামের পাশে যোগ করেছে ১০ নম্বর জয়। টটেনহামকে হারিয়ে টানা চতুর্থ জয়ের দেখা পেল ফরেস্ট। অ্যান্থনি এলেঙ্গার একমাত্র গোল যথেষ্ট ছিল টটেনহামকে হারানোর জন্য। পুরো ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে রেখেও গোলে দেখা পায়নি স্পার্স। উল্টো ম্যাচের শেষ মুহূর্তে লাল কার্ড দেখেছেন জেদ স্পেন্স।
সাউদাম্পটন ০-১ ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড
ওয়েস্ট হাম: জ্যারড বাওয়েন ৫৯’
নতুন কোচের অধীনে শুরুটা সুখকর হলো না সাউদাম্পটনের। ক্রোয়েট কোচ ইভান জুরিচ এসেও টেনে তুলতে ব্যর্থ হলেন প্রিমিয়ার লিগের তলানিতে থাকা সাউদাম্পটনকে। ‘বক্সিং ডে’র সন্ধ্যায় ওয়েস্ট হামের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। প্রথমার্ধেই গোলমুখে ১১টি শট নিয়েছিল সাউদাম্পটন। কিন্তু সবটা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে লুকাস ফ্যাবিয়ান্সকির সামনে গিয়ে। ওয়েস্ট হামের দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন পোলিশ গোলরক্ষক। অন্যদিকে হাতেগোণা যে কয়েকটা সুযোগ পেয়েছিল সাউদাম্পটন, সেটাই কাজে লাগিয়েছে তারা। ডিফেন্সের জটলা থেকে ওয়েস্ট হামকে এগিয়ে নেন জ্যারড বাওয়েন। তার একমাত্র গোলে জয় নিশ্চিত করে ওয়েস্ট হাম।
উলভস ২-০ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
উলভস: ম্যাথিয়াস কুনহা ৫৮’, হুয়াং হি-চান ৯০+৯’
যত দিন যাচ্ছে, সময়টা ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে রুবেন আমোরিমের জন্য। যে আশা নিয়ে তাঁকে দলের দায়িত্ব নিয়েছিল ইউনাইটেড, তার ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না খেলায়। বড়দিনের আগে বেশ লজ্জাজনক একটা রেকর্ড পারি দিতে হয়েছে ইউনাইটেডকে। সে ধারাবাহিকতা চলছে এখনও। টানা তিন হার দিয়ে তাদের অবস্থান এখন ১৪তম! অন্যদিকে নতুন কোচের অধীনে যেন প্রাণ খুঁজে পেয়েছে উলভস। ভিতর পেরেইরার অধীনে টানা দুই জয় দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অবনমনের সারি থেকে বেরিয়ে এল নেকড়েরা। ঘরের মাটিতে ১০ জনের ইউনাইটেডের বিপক্ষে বেশ হেসেখেলে জয় তুলে নিয়েছে উলভস। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন ব্রুনো ফার্নান্দেস। নেলসন সেমেদোকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ইউনাইটেড অধিনায়ক। সে সুযোগটা কাজে লাগায় উলভস। ৫৮ মিনিটে কর্নার থেকে সরাসরি গোল করেন কুনহা। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগ মুহূর্তে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হুয়াং হি-চান।
লিভারপুল ৩-১ লেস্টার সিটি
লিভারপুল: কোডি গ্যাকপো ৪৫+১’, কার্টিস জোনস ৪৯’, মোহাম্মদ সালাহ ৮২’
লেস্টার: জর্ডান আয়েউ ৬’
ম্যাচ শুরুর আগেই বাতাসে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, বাতিল হতে যাচ্ছে ম্যাচটি। কুয়াশায় ঢাকা অ্যানফিল্ডে এক হাত সামনের জিনিসও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। সেখানে ফুটবল খেলা রীতিমত অসম্ভব। প্রতিকূল পরিবেশকে সরিয়ে তবুও চলল ম্যাচ। ফলাফলে অবশ্য এর বিন্দুমাত্র প্রভাব পরেনি। লেস্টারকে হেসেখেলে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে লিভারপুল। শুরুতে লেস্টারকে এগিয়ে নিয়েছিলেন আয়েউ। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরে আর্নে স্লটের শিষ্যরা। ‘বড়দিনের পর গোল করতে পারে না’ অপবাদটা নিজের কাধ থেকে সরিয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ। লিভারপুলের হয়ে শেষ গোল করে জয় নিশ্চিত করেছেন তিনি। রুড ফন নিস্টারলয়ের হানিমুন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। টানা তিন হার দিয়ে আবারও তারা ফেরত এসেছে অবনমনের সারিতে। নিস্টারলয়ের যোগদান যে খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি, তা হয়তো বুঝতে শুরু করেছে লেস্টারের মালিকপক্ষ। দ্রুত অবস্থার উন্নতি ঘটাতে না পারলে হয়তো বরখাস্তের খড়গ নেমে আসবে তার ওপরেও।
ব্রাইটন ০-০ ব্রেন্টফোর্ড
সময়টা কোনোভাবেই ভালো যাচ্ছে না ব্রাইটনের। শীর্ষ চারের আশেপাশে ঘুরপাক খাওয়া ব্রাইটন কোনোভাবেই যেন ফর্মে ফিরতে পারছে না। ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ম্যাচ শেষ করেছে গোলশূণ্য ড্র নিয়ে। অন্যদিকে ব্রেন্টফোর্ডও খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। গত ম্যাচে নিজেদের দূর্গ হারিয়ে বেশ চাপে আছে তারা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গোলরক্ষক মার্ক ফ্লেকেনের চোট। প্রথমার্ধে চোট পেয়ে মাঠ থেকে উঠে যান তিনি। ফলে বাকি ম্যাচটা সামলাতে হয়েছে অভিষিক্ত গোলরক্ষক হ্যাকন ভালসিমারসনকে। বেঞ্চের গোলরক্ষকের বিপক্ষেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ব্রাইটন।
আর্সেনাল ১-০ ইপসউইচ টাউন
আর্সেনাল: কাই হাভার্টজ ২৩’
টানা দুই ম্যাচে হোঁচট খাওয়ার পর বেশ ভালোভাবে ফিরে এসেছে গানার্সরা। মিকেল আর্তেতার শিষ্যরা মাঠে নেমেছিল ‘বক্সিং ডে’র একদিন পর। ইপসউইচ টাউনের বিপক্ষে সহজ ম্যাচটা বেশ কঠিন করে জিতেছে তারা। নিজেদের মাটিতে ১-০ গোলে জয় দিয়ে ‘বক্সিং ডে ইভেনিং’-এর ইতি টেনেছে আর্সেনাল। চোটের কারণে বুকায়ো সাকাকে ছাড়া মাঠে নেমেছিল আর্সেনাল। আক্রমণে তার অভাব ভালোভাবে টের পেয়েছে তারা। কাই হাভার্টজের একমাত্র গোল শাপেবর হয়ে এসেছে তাদের জন্য। এই জয় দিয়ে আবারও প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় অবস্থানে ফেরত আসল আর্সেনাল।