ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ২০
আলোচনায় রেড ডার্বি
নতুন বছরের প্রথম ম্যাচ উইক। সেখানে আবার মুখোমুখি লিভারপুল আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ‘রেড ডার্বি’কে সামনে রেখে কেমন হতে চলেছে প্রিমিয়ার লিগের আগামী সপ্তাহ? দেখে নেওয়া যাক এক নজরে
টটেনহাম হটস্পার্স বনাম নিউক্যাসল ইউনাইটেড
২০০৮-০৯ মৌসুমের পর প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের নিচের সারিতে থেকে বছর শেষ করেছে টটেনহাম। তাদের ‘রবিনহুড’ মোডের প্রভাব পড়েছে দলের পারফরম্যান্সে। তবে এখনও অনেকটা সময় আছে ফিরে আসার। এখান থেকে চাইলেই ইউরোপিয়ান ফুটবল নিশ্চিত করা সম্ভব। অন্যদিকে নিউক্যাসেল আছে ফর্মের তুঙ্গে। বিশেষ করে তাদের মূল স্ট্রাইকার অ্যালেকজেন্দার ইসাকের দূর্দান্ত ফর্মে চ্যাম্পিয়নস লিগের লড়াইয়ে আছে তারা। গত কয়েক মৌসুম ধরে জমজমাট ম্যাচ উপহার দেওয়া দুই দলের ম্যাচটা এবারও হতাশ করবে না নিশ্চয়।
অ্যাস্টন ভিলা বনাম লেস্টার সিটি
টানা হার দিয়ে বেশ চাপে আছে লেস্টার সিটি কোচ রুড ফন নিস্টারলয়। যতটা আশা নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন ফক্সদের সঙ্গে, দিনে দিনে যেন তত ফিকে হচ্ছে স্বপ্ন। বরং অবনমনের সারিতে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। অন্যদিকে অ্যাস্টন ভিলার জন্যও সময়টা খুব একটা সুখকর নয়। বড়দিনের পর থেকে হার আর ড্র নিয়ে বেশ বিপাকে আছে তারা। এখন আছে প্রিমিয়ার লিগের নবম স্থানে। দ্রুত অবস্থার উন্নতি করতে না পারলে মিড টেবিলে ঘুরপাক খেতে হবে তাদের।
বোর্নমাউথ বনাম এভারটন
শিরোপাপ্রত্যাশী তিন দলকে আটকে দিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল এভারটন। কিন্তু শেষ ম্যাচে ফরেস্টের কাছে হেরে আবারও অবনমনের চিন্তা মাথায় প্রবেশ করেছে তাদের। অন্যদিকে শেষ ম্যাচটা ভালো যায়নি বোর্নমাউথের। ওপরে ওঠার সুযোগ হেলায় হারিয়েছে তারা। ফলে দুই দলের জন্যই ম্যাচটা সমান গুরুত্বপূর্ণ। বোর্নমাউথের সামনে সুযোগ ইউরোপিয়ান ফুটবল নিশ্চিত করার। আর এভারটনের সামনে সুযোগ অবনমনের সারি থেকে একটা ভালো অবস্থানে যাওয়ার
ক্রিস্টাল প্যালেস বনাম চেলসি
বড়দিনের আগেও প্রিমিয়ার লিগ জেতার স্বপ্ন উকি দিচ্ছিল চেলসি খেলোয়াড়দের মনে। অথচ নতুন বছর আসতে না আসতেই ইউরোপে খেলা নিয়ে চিন্তা জেঁকে বসেছে মাথায়। সময়টা কোনোভাবেই ভালো যাচ্ছে না এনজো মারেসকার শিষ্যদের জন্য। ড্র, হার–সবমিলিয়ে হুট করেই খেই হারিয়ে ফেলেছে তারা। তবে আশার কথা, নতুন বছরে অধিনায়ক রিস জেমস ও রোমিও লাভিয়াকে দলে পাচ্ছে তারা। অন্যদিকে সাউদাম্পটনকে হারিয়ে অবনমনের সারি থেকে আরেকধাপ ওপরে উঠে গিয়েছে ক্রিস্টাল প্যালেস। অফ ফর্মে থাকা চেলসিকে হারিয়ে আরেকধাপ উপরে উঠে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ম্যানচেস্টার সিটি বনাম ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড
টানা হারের বৃত্তে ঘুরতে থাকা সিটি অবশেষে শিকল ভেঙে বেরিয়েছে। লেস্টারের বিপক্ষে জয় দিয়ে অন্তত পুরোনো বছরটা শেষ করেছে স্বস্তি দিয়ে। এখন দেখার বিষয়, জয়টা কি ফ্লুক ছিল নাকি নতুন শুরুর পূর্বাভাস? ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে সিটির লড়াই নিন্দুকদের ভুল প্রমাণ করা। ওয়েস্ট হামও অবশ্য খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। হুলেন লোপেতেগির চাকরিটা এখনও ঝুলছে সুতোর ওপর। নতুন করে দলকে সাজাতে না পারলে এই মৌসুমেই হয়তোও কাটা পরতে পারে তার চাকরি।
সাউদাম্পটন বনাম ব্রেন্টফোর্ড
নতুন কোচের অধীনেও খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না সাউদাম্পটন। তার অধীনে দুই ম্যাচের দুটিতেই হার। ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষেও যদি ফলাফলের পরিবর্তন না হয়, তবে অবনমন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে সাউদাম্পটনের জন্য। ব্রেন্টফোর্ডও অবশ্য খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। ঘরের মাটিতে যেমন নিজেদের দূর্গ হারিয়েছে, তেমনই ঘরের বাইরের রেকর্ডটা একেবারেই ভুলে যাওয়ার মতো। সব মিলিয়ে বেশ হযবরল অবস্থার মাঝে রয়েছে তারাও।
ব্রাইটন বনাম আর্সেনাল
একটা সময় মনে হচ্ছিল, এই বুঝি লিগের লড়াই থেকে ছিটকে পরল আর্সেনাল। কিন্তু সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেও আবারও লড়াইয়ে ফিরে এসেছে মিকেল আর্তেতার দল। লিভারপুলের ৬ পয়েন্ট পেছনে অবস্থান তাদের। পা হড়কানোর বিন্দুমাত্র সুযোগ খোলা নেই তাদের সামনে। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই ফর্মে নেই ব্রাইটন। চ্যাম্পিয়নস লিগের লড়াই থেকে অনেকটাই ছিটকে পরেছে তারা। সেটাকে কাজে লাগানোর সূবর্ণ সুযোগ আর্সেনালের সামনে। সহজ একটা জয় তাদের কাছ থেকে আশা করাই যায়।
ফুলহাম বনাম ইপসউইচ টাউন
ঘরের মাঠে চেলসিকে হারিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে ইপসউইচ টাউন। ২২ বছর পর ঘরের মাটিতে জিতে নতুন বছরটা রাঙিয়ে রেখেছে তারা। অবনমনের সারিতে লড়লেও এক জয় তাদের দলে যোগ করেছে নতুন উদ্দীপনা। ফুলহামের বিপক্ষে সেই উদ্দীপনা কাজে লাগাতে পারলে আরেকটা জয়ও যুক্ত হতে পারে তাদের নামের পাশে। অন্যদিকে টানা ড্র করে ইউরোপের লড়াইয়ে লাগাম পরেছে ফুলহামের। ইউরোপের লড়াইয়ে টিকে থাকতে চাইলে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প খোলা নেই তাদের সামনে।
লিভারপুল বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে জমজমাট ম্যাচ বললেও বোধহয় কম বলা হয়ে যাবে। লিভারপুল আর ইউনাইটেডের লড়াইটা শুধু দুটো ফুটবল দলের লড়াই নয়। বরং ইংল্যান্ডের দুই অঞ্চলের সমর্থকদের মধ্যকার সম্মানের লড়াই। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর আভিজাত্যের এক মিশেল। এই মৌসুমে অবশ্য পাল্লাটা ঝুকে আছে লিভারপুলের দিকে। প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে, সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে ইউনাইটেড ঘুরে বেড়াচ্ছে হারের বৃত্তে। টানা চার হার দিয়ে প্রিমিয়ার লিগে লজ্জার রেকর্ড গড়েছে তারা। নতুন কোচের অধীনে এখনও নিজেদের খুঁজে বেড়াচ্ছে রেড ডেভিলরা। সুতরাং ম্যাচের আগে ফেভারিটের পাল্লা ধুকে আছে লিভারপুলের দিকে। কিন্তু ডার্বি বলে কথা, যেকোনো সময় ম্যাচের কাটা ঘুরে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
উলভস বনাম নটিংহাম ফরেস্ট
গত মৌসুমেও দুই দলের অবস্থান ছিল একসঙ্গে। অবনমনের সারিতে নিয়মিত লড়তেন দুজনে। এক মৌসুমের ব্যবধানে দুই দল এখন দুই অবস্থানে। নটিংহাম ফরেস্ট দেখছে ইউরোপ খেলার স্বপ্ন। পা ফসকালে হয়তো শিরোপাও! আর অন্যদিকে উলভস লড়ে যাচ্ছে সেই অবনমনের সারিতে। যদিও নতুন কোচ ভিতর পেরেইরার আগমনের পর কিছুটা বদলেছে অবস্থা। উলভসের সামনে এখন দ্রুত ওপরে ওঠার লড়াই। সেখানে পা ফসকানোর সুযোগ নেই বিন্দুমাত্র।