শেষ হয়েছে ইউরোপিয়ান দলবদলের মৌসুম। নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে দল ছেড়েছেন অনেকেই। ভিড়েছেন নতুন ঠিকানায়। গ্রীষ্মকালীন দলবদল পাল্টে দিয়েছে অনেক খেলোয়াড়ের গন্তব্যই। দলবদলে কতটুকু ওলটপালট হলো আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের গন্তব্য? একনজরে দেখে নাও আর্জেন্টিনার সেরা খেলোয়াড়েরা খেলছেন কোন লিগে, কোন দলে?
লিওনেল মেসি—ইন্টার মায়ামি
শুরুটা আর্জেন্টিনার অধিনায়ককে দিয়েই করা যাক। গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে আলোচিত দলবদলের তালিকায় ছিল লিওনেল মেসির নাম। পিএসজির সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি শেষ হয়েছে জুলাই মাসে। এর পর থেকেই জল্পনা-কল্পনা ছিল, কোথায় নতুন ঘর বাঁধছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। গুঞ্জনে উঠে এসেছিল অনেকের নামই, সৌদি আরবের আল-হিলাল, প্রথম প্রেম নিউওয়েল বয়েজ কিংবা পুরোনো ক্লাব বার্সেলোনা। সবাই উদ্গ্রীব হয়ে অপেক্ষায় ছিল কার প্রস্তাব গ্রহণ করেন বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। সবার প্রস্তাব উপেক্ষা করে মেসি চলে এলেন আমেরিকাতে। যোগ দিলেন ডেভিড বেকহামের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে।
মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে ফুটবলকে নতুন করে উপভোগ করা শুরু করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে ১১ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ১১ গোল আর ৫ অ্যাসিস্ট।
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ—অ্যাস্টন ভিলা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম বড় কান্ডারি ছিলেন তাদের গোলরক্ষক এমি মার্তিনেজ। ৩১ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক অ্যাস্টন ভিলার সঙ্গে আছেন ২০২০ সাল থেকে। এর আগে আর্সেনালের রিজার্ভ গোলরক্ষক হিসেবে ছিলেন ৯ মৌসুম। কালেভদ্রে খেলার সুযোগ মিলত সেখানে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই দলে নিয়মিত হওয়াই বোধ হয় আর্জেন্টিনার দুয়ার খুলে দিয়েছে তাঁর জন্য। বাকি গল্প তো সবারই জানা। কোপা আমেরিকা আর বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্স তাঁকে দিয়েছে বিশ্বসেরার খেতাব।
দি মারিয়া—বেনফিকা
ফুটবলারদের বয়স একটু পড়তির দিকে থাকলেই দলগুলো খুঁজতে শুরু করে বিকল্প। খেলোয়াড়েরাও শেষ বয়সে একটু বাড়তি টাকাপয়সার জন্য বেছে নেন দামি দলের দামি কোনো প্রস্তাব। এমএলএস বা সৌদি লিগ তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি দি মারিয়া। বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেওয়া তারকা বরং শেষ বয়সে ফেরত গিয়েছেন বেনফিকায়। আর্জেন্টিনা থেকে তাঁকে ইউরোপে স্থান করে দিয়েছিল পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকা। তাই তো শেষ বয়সে এসে সৌদি ও আমেরিকা থেকে আসা বড় বড় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বেছে নিয়েছেন বেনফিকাকে।
জুলিয়ান আলভারেজ—ম্যানচেস্টার সিটি
২১ বছর বয়সী তরুণ আলভারেজকে নিয়ে যখন বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করেছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি, তখন অনেকেই প্রশ্নবাণ ছুড়েছিলেন তাঁর দিকে। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সারপ্রাইজ প্যাকেজ হয়ে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে এই তরুণ তারকা খেলছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে। তাদের জার্সিতে জিতেছেন ট্রেবল, মাত্র ২৩ বছর বয়সেই ফুটবল ইতিহাসের সম্ভাব্য সব ট্রফি জেতা হয়ে গেছে তাঁর।
রদ্রিগো দি পল—আতলেটিকো মাদ্রিদ
ভক্তদের কাছে দি পলের একটা রাশভারী নাম আছে, ‘বডিগার্ড’! আর্জেন্টিনার জার্সিতে লিওনেল মেসি যেখানেই যান, সেখানেই দেখা মেলে দি পলের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম কথা হয়নি। মাঠের বাইরে মেসিকে যেমন আগলে রাখেন, তেমনই বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন মাঝমাঠকে আগলে রেখেছিলেন দি পল। ২০২১ সাল থেকে আর্জেন্টিনার পাশাপাশি আতলেটিকো মাদ্রিদের মাঝমাঠ দেখাশোনার দায়িত্বেও তিনি। যদিও কোচ ডিয়েগো সিমিওনের পরিকল্পনার সঙ্গে না যাওয়ায় এই মৌসুমে তাঁকে খুব কমই মাঠে দেখা গিয়েছে। তা সত্ত্বেও যতক্ষণ মাঠে থাকেন, ততক্ষণ আতলেটিকোর প্রাণভোমরা তিনি।
অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার—লিভারপুল
বিশ্বকাপে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডের ভরসার নাম ছিল অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। তাঁকে ছাড়া এক ম্যাচেই নেমেছিল আর্জেন্টিনা, সৌদির কাছে সেই ম্যাচ হেরেই বিশ্বকাপ থেকে প্রায় ছিটকে পড়তে যাচ্ছিল তারা। এর পর থেকে পুরো বিশ্বকাপে ম্যাক অ্যালিস্টার ছিলেন ‘অটো চয়েস’। এই দলবদলের মৌসুমে ব্রাইটন থেকে লিভারপুলে যোগ দিয়েছেন ম্যাক অ্যালিস্টার। বিশ্বজয়ী এই মাঝমাঠের তারকাকে কিনতে কত খরচ হয়েছে জানো? মাত্র ৩৫ মিলিয়ন ইউরো। হ্যাঁ, দুর্মূল্যের বাজারে ম্যাক অ্যালিস্টারের দাম চমক জাগিয়েছে সবার মনেই।
এনজো ফার্নান্দেজ—চেলসি
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠের পাজলের শেষ টুকরা ছিলেন এনজো ফার্নান্দেজ। দি পল, ম্যাক অ্যালিস্টার আর এনজো মিলে যে দুরূহ মাঝমাঠ সাজিয়েছিলেন, তা ভেদ করা ছিল অসম্ভব। যে কারণে বিশ্বকাপ শেষ হতে না হতেই এনজোর দিকে হাত বাড়ায় চেলসি। বেনফিকাও তাঁকে সহজে ছাড়তে চায়নি। প্রায় এক মাস দর–কষাকষির পর অবশেষে শীতকালীন দলবদলের শেষ দিনে এসে ১০৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে এনজোকে দলে ভেড়ায় চেলসি। যদিও চেলসি এবং এনজো, কারও মৌসুমটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তবে ফর্মে ফিরলে তাঁকে আটকানো বরাবরের মতোই দুঃসাধ্য হয়ে যাবে।