মাত্র তিন বছর আগেও কেউ চিনতেন না কাইসেডোকে। ইকুয়েডরের লিগে ইনদিপেন্দেন্তে দেল ভালের হয়ে খেলতেন এই ফুটবলার। কেউ না চিনলেও ঠিকই তাঁকে চিনেছিল ব্রাইটনের স্কাউটিং দল। স্কাউটিং করে মাত্র সাড়ে চার মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে কাইসেডোকে কিনে আনে তারা। আর এখন কাইসেডোর প্রাইস ট্যাগ ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড! এত দামের পরও তাঁকে পেতে মরিয়া হয়ে আছে চেলসি, আর্সেনালসহ বেশ কয়েকটি বড় ক্লাব।
মাত্র ২১ বছর বয়সে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেকে প্রমাণ করে ফেলেছেন ইকুয়েডর থেকে উড়ে আসা এই তরুণ। ২০২২-২৩ সিজনে ব্রাইটনের অসাধারণ নৈপুণ্যের পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর ছিলেন এই কাইসেডো। গত মৌসুমে তাঁর চেয়ে বেশি সময় খেলেছেন মাত্র দুই ব্রাইটন ফুটবলার—প্যাসকেল গ্রস এবং লুইস ডাঙ্ক। প্রায় ৩ হাজার ১৪০ মিনিট খেলেছেন কাইসেডো, মাত্র একটা ম্যাচ ছাড়া আর সব ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন মোইসেস কাইসেডো।
বেশির ভাগ সময় কাইসেডোর ভূমিকা ছিল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে, তা প্রায় ৬১ শতাংশ! সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলেছেন ৩০ শতাংশ, আর বাকি ৯ শতাংশ খেলেছেন রাইট ব্যাক হিসেবে। অর্থাৎ কিছুটা ভার্সেটাইলও। মিডফিল্ডে বেশির ভাগ সময়ই ছিলেন হোল্ডিং মিডফিল্ডারের ভূমিকায়। ব্রাইটনের ডাবল পিভট সিস্টেমে কাইসেডো বেশ ভালোই করেছেন। সঙ্গে থাকা পার্টনার পিভটে বেশির ভাগ সময় গ্রস কিংবা ম্যাকঅ্যালিস্টার খেলেছেন, যাঁদের কাজ ছিল ক্রিয়েটিভ রোল পালন করা। সেখানে কাইসেডো ছিলেন বল উইনিং মিডফিল্ডার। পজিশন হোল্ড করা, স্পেস ব্লক করা, প্রেস এবং বল উইন করা যাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল।
ডিফেন্সিভ মিড হিসেবে কাইসেডোর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, তিনি প্রচণ্ড গতিতে দৌড়াতে পারেন। যে কারণে প্রতিপক্ষ যখন কাউন্টার অ্যাটাক করছে কিংবা লাইন ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করছে, তখন মিডফিল্ড থেকে নিজের ডিফেন্সে নেমে বল উইন করতে কাইসেডোর কোনো সমস্যাই হয় না। পুরো মাঠ দৌড়ে খেলার বেশ ভালো স্ট্যামিনা আছে তাঁর। যেটা ব্রাইটনের পজেশনাল ফুটবলকে সাহায্য করেছে। তাঁর রিকভারিতেই বেশির ভাগ সময় পজেশন ফিরে পেত ব্রাইটন। তা ছাড়া বাঁ প্রান্তে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় খেলায়, লেফট ব্যাক এস্তোপিনিয়ান যখন সামনে এগিয়ে যান, তখন ফাঁকা হয়ে যাওয়া স্পেস কাভার করার দায়িত্বও তাঁর ছিল।
ডিফেন্সিভ স্ট্যাটের হিসাবেও কাইসেডো প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা। প্রিমিয়ার লিগে তাঁর চেয়ে বেশি ট্যাকল করেছেন মাত্র একজন—ফুলহামের পালহিনহা। আর তাঁর চেয়ে বেশি ইন্টারসেপশনও করেছেন একজন—ওয়েস্ট হ্যামের ডেকলান রাইস।
কেবল বল কেড়ে নেওয়াতেই কাইসেডোর কাজ সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং বল কেড়ে নেওয়ার পর সেটা থেকে ব্রাইটনের আক্রমণ তৈরি করাতেও কাইসেডোর অবদান অনেক। প্রিমিয়ার লিগে কাইসেডোর কেড়ে নেওয়া বল থেকে আক্রমণ তৈরি হয়ে শট পর্যন্ত গিয়েছে মোট ১৮ বার। এখানেও তাঁর সামনে মাত্র একজন মিডফিল্ডার—ম্যানচেস্টার সিটির রদ্রি করেছেন ১৯ বার।
এসব পরিসংখ্যানেই বোঝা যায়, বল পায়ে কতটা দক্ষ কাইসেডো। আর ৮৮.৯ শতাংশ পাসিং অ্যাকুরেসিতেও লিগে তাঁর সামনে কেবল রদ্রি। এর অন্যতম কারণ, ম্যানসিটির মতো ব্রাইটনেরও আক্রমণ তৈরি হয় ডিফেন্স থেকে। আর তখন ডিফেন্ডররা বেশির ভাগ সময় কাইসেডোকেই বল দিয়ে থাকেন। তারপর কাইসেডো তা পাঠিয়ে দেন কোনো ক্রিয়েটিভ সতীর্থকে। শারীরিক গঠনও বেশ ভালো কাইসেডোর। তাই বিপক্ষ দলের চাপ সামলাতে পারেন সহজেই। শারীরিক গঠন বাড়তি সুবিধাও দেয় তাঁকে।
গত জানুয়ারি থেকে অনেক আলোচনা হলেও এবার যে কাইসেডো ব্রাইটন ছাড়ছেন, সে কথা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়। আর ২১ বছর বয়সের এই ইঞ্জিনকে কিনলে অনেক অনেক দিন দলের ভারসাম্য থাকবে, এটা প্রায় সব বড় ক্লাবই বুঝতে পেরেছে। ম্যানসিটির ট্রেবল জয়ে যেমন নেপথ্যে আছেন রদ্রি, নতুন ক্লাবের সাফল্যের পেছনেও কাইসেডো সরাসরি অবদান রাখার মতো সামর্থ্য রাখেন। যে কারণে কান্তে চলে যাওয়ায় চেলসি কিংবা থমাস পার্তের জায়গায় আর্সেনাল কাইসেডোকে চিন্তা করছে। কাইসেডোর বয়স এবং পারফরম্যান্সের হিসেবে বর্তমান ট্রান্সফার মার্কেটের হিসাবে ৮০ মিলিয়নও আসলে খুব বেশি নয়। এখন দেখার পালা, শেষ পর্যন্ত তাঁকে দলে নেওয়ার লড়াইয়ে জেতে কারা।