টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪
যেভাবে নির্বাচিত হবে বিশ্বকাপের সুপার এইট
শেষের পথে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব। ইতিমধ্যে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের টিকিট কেটেছে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মতো হেভিওয়েট দল। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তী রাউন্ডে ওঠার স্বপ্ন দেখছে স্কটল্যান্ডও। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের বিশ্বকাপ যেন পরতে পরতে লুকিয়ে রেখেছে রোমাঞ্চ। সেই রোমাঞ্চে নতুন সংযোজন ‘সুপার এইট’। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসর বসেছে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আর যুক্তরাষ্ট্রে। নতুন দেশ, নতুন পরিবেশে ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের বিশাল আয়োজন জন্ম দিয়েছে রূপকথার। প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের মূল পর্বে দেখা মিলেছে ২০ দলের! ২০০৭ ওয়ান-ডে বিশ্বকাপের পর আবারও দেখা মিলেছে ‘সুপার এইট’ ফরম্যাটের। কী এই ফরম্যাট, কীভাবেই–বা কাজ করে?
‘সুপার এইট’ ফরম্যাট
‘সুপার এইট’ ফরম্যাটের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব নিয়ে কথা বলা জরুরি। এবারই প্রথম এত বড় পরিসরে বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে আইসিসি। এর আগে বিশ্বকাপের কোনো আসরেই ২০ দলের দেখা মেলেনি। হোক সেটা টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে।
বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া ২০ দলকে ভাগ করা হয়েছে ৪টি গ্রুপে। প্রতিটি গ্রুপে রয়েছে ৫টি করে দল। রাউন্ড রবিন ফরম্যাটে প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলবে। সেরা দুই দল চলে যাবে পরবর্তী রাউন্ড, অর্থাৎ ‘সুপার এইট’-এ।
সাধারণত বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব শেষ হলেই নক-আউট পর্ব শুরু হয়ে যায়। সুপার এইট ফরম্যাট এখানে যোগ করেছে ভিন্ন একটি স্বাদ। সুপার এইট কোনো নক-আউট ফরম্যাট নয়, বরং আরেকটি রাউন্ড রবিন লিগ। গ্রুপ পর্বের মতো এখানেও প্রতিটি দল প্রতিটি দলের মুখোমুখি হবে একবার। এখানেও সেরা দুই দল টিকিট পাবে পরবর্তী রাউন্ডের। প্রতিটি গ্রুপ থেকে সেরা দুই দল নিয়ে বিশ্বকাপের সেরা আট দলকে ভাগ করা হবে দুটি আলাদা গ্রুপে। প্রথম গ্রুপে সুযোগ পাবে গ্রুপ ‘এ’ ও গ্রুপ ‘সি’ এর প্রথম দল এবং গ্রুপ ‘বি’ ও গ্রুপ ‘ডি’র দ্বিতীয় দল। অন্য দিকে দ্বিতীয় গ্রুপে সুযোগ পাবে গ্রুপ ‘বি’ ও গ্রুপ ‘ডি’র প্রথম দল এবং এর গ্রুপ ‘এ’ ও গ্রুপ ‘সি’র দ্বিতীয় দল।
অর্থাৎ হিসাবটা এরকম:
গ্রুপ ১: A1, B2, C1, D2
গ্রুপ ২: A2, B1, C2, D1
এখানে A1, B1 দিয়ে কিন্তু গ্রুপের সেরা দল বোঝানো হয়নি। বরং দলগুলোকে আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছে আইসিসি। সুপার এইটের আট দলকে র্যাঙ্কিং অনুযায়ী আগে থেকেই দুই গ্রুপে ভাগ করে রেখেছে ক্রিকেটের বড় কর্তারা। গ্রুপ ‘এ’র উদাহরণ দিয়েই যদি বলি। গ্রুপ ‘এ’ থেকে ভারত যে অবস্থানে থেকেই কোয়ালিফাই করুক না কেন, সুপার এইটে তাদের A1 ধরা হবে। র্যাংকিং হিসেবে A2 ধরা হয়েছে পাকিস্তানকে। যদি পাকিস্তানের বদলে সেই গ্রুপ থেকে যদি যুক্তরাষ্ট্র উঠেছে সুপার এইটে। তাদের অবস্থান হবে A2।
একই ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেও করলেও তাদের অবস্থান হবে B2। এভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য C2 ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য D1 পজিশন আগে থেকেই বরাদ্দ করে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে অবস্থান থেকেই সুপার এইটে উঠুক না কেন, বাংলাদেশকে খেলতে হবে ‘গ্রুপ ১’-এ। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইতিমধ্যে জায়গা নিশ্চিত করেছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
গ্রুপ পর্ব থেকে কোনো পয়েন্ট সুপার এইটে যাবে না। সুপার এইট থেকে সম্পূর্ণ নতুন পয়েন্ট টেবিল। দুই গ্রুপের প্রতিটি দল মুখোমুখি হবে প্রত্যেকের। তিন ম্যাচ শেষে দুই গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দুই দল যাবে পাবে সেমিফাইনালের টিকিট।
সেমিফাইনালের ফরম্যাটটা আগের মতোই আছে। এখানে কোনো মারপ্যাঁচ রাখেনি আইসিসি। গ্রুপ-১–এর চ্যাম্পিয়ন মুখোমুখি হবে গ্রুপ-২–এর রানার্স-আপ দলের। একইভাবে গ্রুপ-২ –এর চ্যাম্পিয়ন মুখোমুখি হবে গ্রুপ-১–এর রানার্স-আপ দলের। তবে একটা মারপ্যাঁচ আছে, ভারত যদি সেমিফাইনালে ওঠে, তাহলে তাদের সেমিফাইনালটি হবে গায়ানার প্রভিন্স স্টেডিয়ামে। অন্য দলকে খেলতে হবে সান ফার্নান্দোর ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে।
ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ভার্সনে এমন ফরমেটের সুবিধা ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছে সবাই। বড় দলের ভরাডুবি, ডার্ক হর্সদের উত্থান; সব মিলিয়ে এক জমজমাট বিশ্বকাপ দেখছে পুরো দুনিয়া। ক্রিকেটের বিশ্বায়নের জন্য জমজমাট বিশ্বকাপই তো দরকার। আর তার জন্য এমন ফরম্যাটের বিকল্প নেই।