পেলে, কাকা, রোনালদিনহোদের আসল নাম কী?
ফুটবল খেলোয়াড়দের তো প্রতিদিনই দেখো। তাঁদের নাম সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। কেউ কেউ নিজ নামে বিশ্ব শাসন করেন, কেউ আবার ডাকনামেই তাবৎ দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেন। আজ এমনই কিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব, যাঁদের খেলা দেখেছ, গোলে উদ্যাপন করেছ; কিন্তু তাঁদের পুরো নাম জানার সৌভাগ্য হয়নি কখনো।
পেলে
আসল নাম: এডসন আরেন্তেস দো নাসিমেন্তো
পেলেকে আখ্যা দেওয়া হয় ফুটবলের মহারাজা হিসেবে। তিন বিশ্বকাপজয়ী একমাত্র ফুটবলার, যিনি পুরো বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন তাঁর পায়ের জাদুতে। অথচ তাঁর আসল নামে তাঁকে চিনত হাতে গোনা কয়েকজন। ডাকনামের গল্পটাও বেশ মজাদার। একদিন খেলার মাঠে সবাই নিজেদের প্রিয় খেলোয়াড়ের নাম বলছিলেন। পেলের প্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন চাস্কো দ্য সাও লরেন্সোর গোলরক্ষক বিলে। কিন্তু তিনি ‘বিলে’ বলতে গিয়ে উচ্চারণ করেন ‘পেলে’। ব্যাস, বন্ধুদের টিটকারি থেকে তাঁর নাম বদলে হয় ‘পেলে’। কে জানত এই টিটকারি করা নাম দিয়ে ব্রাজিলকে একদিন অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন তিনি।
কাকা
আসল নাম: রিকার্দো আইজ্যাকসন দস সান্তোস লেইতে
ব্যালন ডি’অর জয়ী ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার পরিচিত ছিলেন তাঁর ডাকনামে। ডাকনামের পেছনের গল্পটাও বেশ মজাদার। ছোটবেলায় তাঁকে সবাই রিকা বলে ডাকতেন। কিন্তু তাঁর ছোট ভাই রদ্রিগো ‘রিকা’ উচ্চারণ করতে পারত না। রদ্রিগো তখনো পুরোপুরি কথা শেখেনি। রিকা উচ্চারণ করতে গিয়ে সে বারবার ‘কাকা’ উচ্চারণ করত। সেই ভাই বড় হয়ে ঠিকই কথা বলতে শিখল বটে; কিন্তু রিকার্দো হয়ে উঠলেন ‘কাকা’। বাসা, বন্ধুবান্ধব, চার্চ; অতঃপর ফুটবলের মাঠ। রিকার্দো অজান্তেই হয়ে উঠলেন কাকা। মিলান, মাদ্রিদ থেকে রিও, কাকার নাম প্রতিধ্বনিত হয়েছে বারবার।
রোনালদিনহো
আসল নাম: রোনালদো দি এসিস মোরেইরা
রোনালদিনহো তাঁর আইকনিক নাম পেয়েছেন ফুটবল খেলতে এসে। ছোটবেলায় তাঁকে রোনালদ ইনহো বলে ডাকত। ‘ইনহো’ শব্দের অর্থ ছোট। গড়নে ও বয়সে ছোটখাটো হওয়ায় তাঁর ডাকনাম হয় রোনালদিনহো। কিন্তু পেশাদার ফুটবলে তিনি রোনালদো নামেই খেলতেন। বিপত্তি বাধে ব্রাজিল দলে অভিষেকের পর। ১৯৯৯ সালে রোনালদিনহোর যখন অভিষেক হয়, রোনালদো নাজারিও তখন বিশ্বের সেরা তারকাদের একজন। নাম যাতে গুলিয়ে না যায়, সে কারণে ব্রাজিল মূল দলে রোনালদিনহো জার্সিতে খেলা শুরু করেন তিনি। অতঃপর পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন দিনহো নামে। মজার ব্যাপার হলো, রোনালদো নাজারিও যখন ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, তখন তিনি খেলতেন ‘রোনালদিনহো’ নামের জার্সি পরে। পরে জাতীয় দলে এসে ‘রোনালদো’ নামের জার্সিতে খেলতে শুরু করেন।
পেপে
আসল নাম: কেপলার লেভরান লিমা ফেরেইরা
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম ভয়ানক ডিফেন্ডার ধরা হয় তাঁকে। প্রতিপক্ষের অ্যাটাকাররা রীতিমতো আতঙ্কে থাকতেন তাঁকে দেখে। পর্তুগিজ এই ডিফেন্ডারের জন্ম কিন্তু ব্রাজিলে। ছোটবেলায় তাঁর কঠিন নাম উচ্চারণ করতে পারতেন না তাঁর ভাই। যে কারণে তিনি ডাকনাম হিসেবে রাখেন পেপে। সেখান থেকে ফুটবলজগতের ত্রাস বনে গিয়েছেন ডাকনাম দিয়ে।
কাফু
আসল নাম: মার্কোস ইভেনজেলিস্তা দি মোরাইস
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা রাইট ব্যাক কাফু। ২০০২ সালে ব্রাজিলের অধিনায়ক হিসেবে পঞ্চম শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন তিনি। কাফু অবশ্য তাঁর ডাকনাম পেয়েছেন অন্য একজন খেলোয়াড়ের নামে। ক্যারিয়ারের শুরুতে কাফু ছিলেন রাইট উইঙ্গার। তাঁর খেলার ধরন ফ্লুমিয়েন্সের রাইট উইঙ্গার কাফুরিঙ্গার মতো ছিল বলে তাঁকে ‘কাফু’ বলে ডাকতেন অনেকে। আক্রমণ ছেড়ে ডিফেন্সে থিতু হলেও তাঁর ডাকনাম থেকে যায়। অতঃপর পৃথিবীজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন ডাকনামে।
বেবেতো
আসল নাম: হোসে রোবার্তো গামা দি ওভেইরা
১৯৯৪ বিশ্বকাপে আইকনিক ‘বেবি সেলিব্রেশন’ দিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন বেবেতো। অনেকে বলেন নামের সঙ্গে উদ্যাপনটা বেশ মানিয়েছে। মানাবে না-ই বা কেন? ‘বেবেতো’ অর্থ ‘বেবি ফেস’, অর্থাৎ বাচ্চাদের মতো মুখ। তাঁর বাচ্চাসুলভ চেহারা দেখে তাঁর এই ডাকনাম দিয়েছিলেন তাঁর সতীর্থরা।
হাল্ক
আসল নাম: জিভানিলদো ভিয়েরা দি সুসা
মার্ভেল কমিকসের পাতা থেকে উঠে আসা এক সুপারহিরোর নাম হাল্ক। রাগে ফুঁসে যিনি হয়ে ওঠেন দানব। খেলার মাঠেও দেখা মিলত এমন এক দানবের। তাঁর শটের জোরে শুধু জাল নয়, খেলোয়াড় পর্যন্ত উড়ে যেত প্রায়। ট্রেনিং সেশনে খেলোয়াড়েরা তাঁর শটের সামনে দাঁড়াতেও ভয় পেতেন। বলা বাহুল্য হাল্ক নামটা এসেছে তাঁর খেলার ধরন থেকেই। গোলমুখে তাঁর দুর্দান্ত শট পাওয়ার আর বিশালদেহী শরীর দেখে যে কেউ ভয় পেতে বাধ্য। ছোটবেলায় তাঁকে দেওয়া হাল্ক নামটা তাই রয়ে গেছে এত বছর পর এসেও।
পেদ্রি
আসল নাম: পেদ্রো গঞ্জালেজ লোপেজ
বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় তরুণ তারকাদের একজন পেদ্রি। কিন্তু তাঁর আসল নামের কোথাও পেদ্রি নেই। বরং তাঁর নাম ছিল পেদ্রো। কিন্তু ছোটবেলায় পেদ্রির ক্লাসে ছিল আরেকজন পেদ্রো। তাঁর ছোটখাটো গড়ন ও চিকনচাকন শরীর দেখে শিক্ষক তাঁর নাম দেন পেদ্রি। সেখান থেকে তিনি পরিচিত হন পেদ্রি নামে।