আজ নগদ কিআ কার্নিভ্যাল ২০২৩। ভোরের আলো ফোটার আগেই শিশু-কিশোরদের মধ্যে কার্নিভ্যালে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। সকাল সাতটা বাজে ভেন্যুতে দেখা গেল আরিয়ান ও সোহানকে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া দুই ভাই। এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুল থেকে এসেছে। আসার পথে কিআ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা। হাসিখুশি ভাব আর হাতে কার্নিভ্যালের টিকেট দেখে কথা হলো ওদের সঙ্গে। ওরা বলে, ‘আমরা কিশোর আলোকে ভালোবাসি। প্রতিমাসে কিশোর আলো পড়ি। কোনো আয়োজন যেন মিস না হয়, তাই ভোরে এসেছি।
কিআ কার্নিভ্যাল আয়োজিত হচ্ছে আলোকি কনভেনশন সেন্টারে। চত্বরে বসেছে দারুণ সব স্টল। কমিকস, খাবার-দাবার আর ম্যাগাজিন স্টলে কিশোর আলোর বন্ধুদের ভীড় দেখা গেল। এর মধ্যে কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবক, পাঠক ও অভিভাবকেরা মূল মঞ্চের সামনে এসে বসেছে। সকাল নয়টা বাজে শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান। মঞ্চে এল মনিকুন্তলা সংগীত বিদ্যায়তনের সদস্যরা। সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হলো নগদ কিআ কার্নিভ্যাল ২০২৩। দেশাত্মবোধক গান ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’ পরিবেশন করে তারা।
সূর্য তখন খানিকটা ওপরে উঠে গেছে। মিলনায়তনের জানালা দিয়ে আলো আসছে। এ অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে এলেন কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক। সঙ্গে ছিলেন নগদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার সিহাব উদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, চলচ্চিত্রনির্মাতা মোস্তফা সারয়ার ফারুকী ও গুণী অভিনয়শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা। সঙ্গে আরও ছিলেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন ও সাফজয়ী দুই নারী ফুটবলার সানজিদা আক্তার ও মারিয়া মান্দা। সবাই মিলে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করলেন কিআ কার্নিভ্যালের।
কিশোর আলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন সিহাব উদ্দীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা কিশোর আলোর সঙ্গে আছি। আমাদের ভালো মানুষ হতে হবে।’
হাবিবুল বাশার বলেন, ‘ছোটকাল থেকে আমার পড়ার অভ্যাস ছিল। তোমরা যা-ই করো, তোমাদের পড়তে হবে।’
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমি এখন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাই। আগে কখনো ভাবিনি যেতে পারব। তোমাকে যে বলবে পারবে না, তুমি বিশ্বাস করবে না। তুমি নিজের কাজ দিয়ে প্রমাণ করে দেবে, তুমি পারবে।’
কিশোর আলোর অনুষ্ঠান কখনো মিস করতে চান না বলে জানিয়ে নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, ‘সে জন্য সকাল সকাল উঠেই আমি তোমাদের কাছে চলে এসেছি।’
মারিয়া ও সানজিদা প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে অনুশীলন করার কথা জানান। বলেন, ‘সফল হতে হলে দরকার আত্মত্যাগ ও অনুশীলন। কোনোভাবেই হার মানা যাবে না।’
নাসির আলী মামুন বলেন, ‘আমি ১৩ বছর বয়সে ক্যামেরা হাতে নিয়েছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমাদের বিখ্যাত মানুষদের ক্যামেরার সামনে বসিয়ে আমি যেভাবে দেখতে চাই, সেভাবে তারা আমার সামনে বসবেন। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তোমরাও স্বপ্ন দেখবে। তোমাদের স্বপ্নও নিশ্চয় পূরণ হবে।’
এরপর শান্তির পায়রা উড়িয়ে কর্মশালা ও আড্ডায় চলে যায় কিশোর আলোর বন্ধুরা।
শিশু-কিশোরদের প্রিয় সাময়িকী ‘কিশোর আলো’র দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সারাদিন ধরেই থাকছে আনন্দ-আড্ডা-কর্মশালার আয়োজন। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীদের উল্লাসে জমবে এ অনুষ্ঠান। অংশ নিতে পারবে শুধু নিবন্ধিত নির্বাচিতরা।
অনুষ্ঠান হবে তিনটি মিলনায়তনে। মূল মঞ্চ, কর্মশালা ও কিআড্ডায় চলবে অনুষ্ঠান। উদ্বোধন শেষে নুসরাত ইমরোজ তিশা ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী যান অভিনয় নিয়ে আড্ডার মঞ্চে। সঙ্গে কর্মশালা মঞ্চে শুরু হয় মেজবাউর রহমানের চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মশালা।
সারাদিন থাকছে আরও অনেক মজার আয়োজন। গণিত ও প্রযুক্তি নিয়ে মূল মঞ্চে থাকছেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। স্থপতি ও অভিনয়শিল্পী অপি করিম কথা বলবেন স্থাপত্যে ক্যারিয়ার নিয়ে। থাকবে নগদের পক্ষ থেকে গেম শো, ঢাকা পাপেটের পাপেট শো। এ ছাড়াও থাকছে মানসুরা মুবাশ্বিরার ভেন্ট্রিলোকুইজম, বিটমসফিয়ারের বিট বক্সিং, স্বপন দিনারের জাদু, আরফান মৃধা শিবলু, আতিয়া আনিসা ও ব্যান্ড অড সিগনেচারের গান।
আলোকচিত্রবিষয়ক কর্মশালা নেবেন নাসির আলী মামুন; কার্টুন ও আঁকাআঁকি কর্মশালায় থাকবেন মেহেদী হক। ভাষা নিয়ে কর্মশালায় তারিক মনজুর, লেখালেখি কর্মশালায় আনিসুল হক, বিশেষ আড্ডায় তাসনিয়া ফারিণ, অভিনয় নিয়ে আড্ডায় নুসরাত ইমরোজ তিশা ও চঞ্চল চৌধুরী, ছড়া-কবিতা নিয়ে আড্ডায় আখতার হুসেন, সাইদুজ্জামান রওশন ও রোমেন রায়হান। লেখকের সঙ্গে আড্ডায় ইসমাইল আরমান, শিবব্রত বর্মন ও তানজিনা হোসেন। পাঠকের মুখোমুখি কিআয় থাকছেন আনিসুল হক, পাভেল মহিতুল আলম ও আদনান মুকিত। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শে আহমেদ হেলাল।
অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত নয়। তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির নিবন্ধিত কিশোর-কিশোরী, অভিভাবক, আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
নগদ কিআ কার্নিভ্যাল ভেন্যু সহযোগী আলোকি। সম্প্রচার সহযোগী এটিএন বাংলা।