বিকেলে পশু আশ্রয়কেন্দ্রের সোফায় বেশ আয়েশ করে বসে ছিল দুটি বিড়াল। হয়তো প্রতিদিনের মতো খাওয়ার পর একটু জিরিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল। হঠাৎ করেই প্রকাণ্ড আওয়াজ! আর তারপরই জানালার কাচ সব ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়তে শুরু করে। ভয় পেয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যায় বিড়াল দুটি।
৪ আগস্ট বিকেলে ‘অ্যানিমেলস লেবানন’ নামের পশু আশ্রয়কেন্দ্রের সিসি টিভিতে ধারণ হয় এই ভিডিও। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের সময়ের চিত্র এটি।
এর পরের ভিডিওতে দেখা যায় আশ্রয়কেন্দ্রের মেঝেজুড়ে বিড়ালের রক্তাক্ত পায়ের ছাপ। জানালার কাচ ভেঙে পা কেটে রক্ত বের হয় কয়েকটি বিড়ালের। চঞ্চল বিড়ালদের দেখা যায় চুপটি করে বসে থাকতে।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর মানুষ এই ভয়ার্ত পোষা প্রাণীদের সহানুভূতি জানায়। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত এর তীব্রতা লক্ষ করা যায়। বিস্ফোরণের কারণে অনেক ঘরবাড়ি, ছাদ, জানালা ভেঙে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। নিহত হয় শতাধিক মানুষ আর আহত হয় অনেক। পুরো শহর পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে।
কিন্তু ‘অ্যানিমেলস লেবানন’-এর পরিচালক জেসন মিয়ের এরই মধ্যে নেমেছেন অন্য রকম একটি কাজে। বিস্ফোরণের পর হারিয়ে যাওয়া ও আহত পোষা প্রাণীদের খুঁজে বের করছেন। তিনি বড় একটি দল তৈরি করে পাঠিয়েছেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। স্বেচ্ছাসেবকেরা শহরের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে ঘুরে খুঁজে বের করেন প্রাণীদের।
জেসন মিয়ের বলেন, ‘এই ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাণীদের খুঁজে বের করা সহজ কাজ নয়। তবু আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা এই কাজ করছে, কারণ অনেক মানুষের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, অনেকে প্রিয়জন হারিয়েছেন। তাঁদের এই ক্ষতি আমরা পূরণ করতে পারব না। তবে এই দুঃসময়ে তাঁদের পোষা প্রাণীদের ফিরিয়ে দিয়ে তাঁদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারলে আমাদের ভালো লাগবে। প্রত্যেকের কাছে তাঁর পোষা প্রাণী তাঁদের পরিবারের মতো।’
জেসন ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবকদের এই কাজের প্রশংসা করছেন অনেকে। নিজেদের হারানো পোষা প্রাণী ফিরে পাওয়ার অনুভূতির ভিডিওগুলো প্রকাশিত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। খুশি হচ্ছেন সব পশুপ্রেমী। জেসনের দল শুধু হারানো পোষা প্রাণীদের ফিরিয়ে দেওয়াই নয়, চিকিৎসা করছে আহত সব প্রাণীকে। যেসব পোষা প্রাণীর মালিক বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন বা আহত হয়েছেন, সেসব প্রাণীর চিকিৎসা ও আশ্রয় নিশ্চিত করেছে তারা।
দুদিন পর নিজের হারানো বিড়ালছানাকে খুঁজে পেয়ে কেঁদেই ফেলেন এক নারী। ভয়াবহ এই সময়ে নিজের আদরের বিড়ালকে কাছে পেয়ে দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পারবেন তিনি।
সূত্র : সিএনএন