২০১৪ সালের জুনের দিকে আমার মাথায় কিশোর আলো রাখার ভূত চাপে। এর আগে দেখেছি বান্ধবীদের হাতে, পত্রিকা কিংবা বইয়ের দোকানে। কিন্তু আমার বইয়ের আলমারিতে কিআর স্থান হয়নি কখনো। প্রথম আলো বাসায় ঠিকই নেওয়া হতো। কিন্তু কিশোর আলো নয়। একদিন সাহস করে আব্বুকে বললাম কিশোর আলো কিনে দেওয়ার কথা। আব্বুর সংসদে ‘না’ ভোটে জয়ী হলো সেটা। প্রথম কারণ, সামনে আমার জেএসসি পরীক্ষা এবং দ্বিতীয় কারণ, হাতে গল্পের বই পেলে আমি আর দুনিয়াদারির খবর রাখতে পারি না। যার জন্য জেএসসির এক বছর আগে থেকেই আমার বই আলমারিতে ঝুলছে সুদৃশ্য তালা, যার চাবি যে কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, তার হদিস সেই এক বছরে আমি পাইনি।
এরপর আর কিনে দেওয়ার প্রস্তাব আব্বুর সংসদে পেশ করলাম না। আম্মুর কাছে হালকা আবদার করলাম, সেটাও ফলপ্রসূ হলো না। ডিসেম্বর আসতেই আলমারির গল্পের বইগুলোর মুখ দেখতে পেলাম আমি। এবার আব্বুর সংসদে পেশ করলাম, প্রতি মাসে আমি কিশোর আলো চাই। এবার ‘না’ জয়ী হওয়ার কোনো কারণই নেই। ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হলো। ডিসেম্বরের সংখ্যা। আহা! যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। চুরি করে কতবার পড়েছি। বান্ধবীদের কাছ থেকে লুকিয়ে এনে, বইয়ের নিচে রেখে বহু কায়দা করে পড়তে হয়েছে। এখন যে আর এত কাণ্ড করে পড়তে হবে না, সে খুশিতে আমি আত্মহারা।
অবশেষে ডিসেম্বরের ২ তারিখ প্রথম আলো পত্রিকার ২ নম্বর পৃষ্ঠায় কিশোর আলোর ডিসেম্বর সংখ্যার বিজ্ঞাপন দেখতে পেলাম।
৫ তারিখ আসতে যেন বেশি দেরি করছিল। সাধারণত দিনকাল আমার খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। কিন্তু ৫ তারিখ যেন আর আসেই না। তিনটা দিন কাটল অপেক্ষায়।
অবশেষে ৫ তারিখ এল। ছুটির দিনে আমি সাধারণত সকাল নয়টা ছাড়া উঠতে পারি না। কিন্তু এবার উঠে গেলাম সকাল সাতটায়। ঠিক সাতটা বেজে ১০ মিনিটে বেল বাজল। বিয়েবাড়িতে বরের আগমন ঘটলেও মনে হয় কেউ এত খুশি হয় না, যতটা আমি হলাম হকার চাচার আগমনে। দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখি। প্রথম আলো ও কিশোর আলো খুব অবহেলিতভাবে নিচে পড়ে আছে। যেন তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দিন প্রথম আলো পত্রিকাটির ওপর এত মায়া হয় না, সেদিন হলো। আহা, সেই নীল মলাট! আহা, সে মেয়েটির গম্ভীর ছবি! মেয়েটিকেও যেন কোনো রূপসী রাজকন্যা মনে হলো। অতি যত্নসহকারে মেঝে থেকে উঠিয়ে নিয়ে বাসায় ফিরলাম। আহা, আমি আর আমার কিশোর আলো।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি ওমেন্স ফেডারেশন কলেজ, ঢাকা