গুণে ৪-এর যত কারিকুরি

যেকোনো সংখ্যাকে ৪ দিয়ে গুণ করা কতটা সহজ, তা এই কৌশল না দেখলে তোমার বিশ্বাস হবে না। ৪-এর গুণ একেবারে জলবৎ তরলং। মানে পানির মতো সহজ। আজ শুধু ৪ নয়, বরং ০.৪, ৪০ ও ৪০০ দিয়ে গুণের সহজ কৌশল শিখব।

সমস্যা: ১

৩২ × ৪

ধাপ ১: যে সংখ্যাকে ৪ দিয়ে গুণ করতে চাও, প্রথমে সেই সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করতে হবে। এখানে যেহেতু ৩২-কে গুণ করতে হবে, তাই ৩২-কে দ্বিগুণ করলে হবে ৩২x২=৬৪। তুমি চাইলে যোগও করতে পারো। উত্তর একই ৩২+৩২=৬৪ হবে। যেভাবে সহজ হয়, সেভাবে দ্বিগুণ করবে।

ধাপ ২: এবার গুণফল ৬৪-কে আবার দ্বিগুণ কর। মানে ৬৪+৬৪ =১২৮। ব্যস, হয়ে গেল উত্তর।

তুমি চাইলে যোগটাও কৌশলে করতে পারো। প্রথমে ৬০+৬০ করবে। আরও সহজ করতে চাইলে দুই পাশ থেকে শূন্য দুটি বাদ দিয়ে শুধু ৬+৬ করবে। অর্থাৎ ১২। এবার ১২-এর পাশে বসিয়ে দাও একটা শূন্য। গুণের মতো যতগুলো শূন্য বাদ দিয়েছ, ততগুলো আবার বসিয়ে দিয়ো না যোগের ক্ষেত্রে। যাই হোক, যোগ করে পেলে ১২০। আর বাকি রইল ৪। কারণ, তুমি ৬৪-এর থেকে শুধু ৬০ নিয়েছ। বাকি যে ৪, সেটা দ্বিগুণ করলে হবে ৮। এবার ১২০+৮=১২৮। অর্থাৎ তুমি একটু কৌশল করলে সবই করতে পারবে মাথার মধ্যে। শুধু একটু চেষ্টা করে শিখতে হবে।

সমস্যা: ২

১৮ × ৪

ধাপ ১: ১৮-কে দ্বিগুণ করলে হবে ১৮+১৮=৩৬।

ধাপ ২: এবার ৩৬-কে দ্বিগুণ করলে হবে ৩৬+৩৬=৭২।

এটাই উত্তর। খুবই সহজ। যোগের ক্ষেত্রে প্রথমে ৩০+৩০=৬০ করবে। আর বাকি ৬+৬=১২। অর্থাৎ মোট ৬০+১২=৭২।

সমস্যা: ৩

২.৪ × ৪০

ধাপ ১: ধরো, এই গুণে কোনো দশমিক সংখ্যা নেই। অর্থাৎ তুমি ২৪ ও ৪০ গুণ করছ। তাহলে গুণটা দাঁড়াল ২৪x৪০। এখন এই গুণটা কীভাবে করবে? যেহেতু ৪০-এর শেষে শূন্য আছে, তাই শূন্যটা বাদ দাও। তাহলে গুণটা দাঁড়াল ২৪x৪।

ধাপ ২: ৪-দিয়ে গুণের নিয়ম ইতিমধ্যে তোমরা শিখেছ। প্রথমে ২৪-কে দ্বিগুণ করতে হবে। অর্থাৎ ২৪+২৪=৪৮।

ধাপ ৩: এবার ৪৮-কে দ্বিগুণ করলে হবে ৪৮+৪৮=৯৬।

ধাপ ৪: এখন খেয়াল করো, প্রথম ধাপে ৪০-এর পাশের শূন্যটা বাদ দিয়েছিলে। ওই শূন্য ফেরত আনলে হবে ৯৬০। আবার প্রথম ধাপেই একটা দশমিক উঠিয়ে দিয়েছিলে। দশমিকের পরে ছিল একটি সংখ্যা। তাহলে ৯৬০-এর এক সংখ্যা বাঁয়ে একটি দশমিক বসবে। অর্থাৎ উত্তর ঘুরে ফিরে ওই ৯৬-ই হবে।

তোমরা যখন এ ধরনের গুণচর্চা করতে করতে দক্ষ হয়ে যাবে, তখন আরও সহজে দ্রুত করতে পারবে। যেমন, যখনই দেখবে তোমার দশমিকের পরে একটি সংখ্যা ছিল এবং তুমি একটি শূন্য বাদ দিয়েছ, তখন ওই একটি দশমিক ও একটি শূন্য বাদ হয়ে যাবে। আবার যদি দশমিকের পরে দুটি সংখ্যা থাকে এবং তুমি দুটি শূন্য বাদ দাও, তাহলে একই কথা প্রযোজ্য।

একটা উদাহরণ দিই। ধরো, তুমি ২.৪১x৪০০ করবে। এখানে দশমিকের পরে দুটি শূন্য আছে। আবার তোমার ৪০০ সংখ্যাও দুটি শূন্য আছে। এক্ষেত্রে দশমিকের পরের দুটি সংখ্যা আর ৪০০-এর দুটি শূন্যতে কাটাকাটা হয়ে যাবে। অর্থাৎ তুমি ২৪১ ও ৪ গুণ করে যা উত্তর পাবে, সেটাই উত্তর। এরপর আর তোমাকে কোনো দশমিক বা শূন্য বসাতে হবে না।

সমস্যা: ৪

১,৯০০ × ০.৪

ধাপ ১: শুরুতেই সব শূন্য ও দশমিক বাদ দিয়ে দাও। অর্থাৎ গুণটা দাঁড়াল ১৯x৪।

ধাপ ২: প্রথমে ১৯-কে দ্বিগুণ করো। অর্থাৎ ১৯+১৯=৩৮। এখানে বিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে ২০+২০=৪০ করবে। সেখান থেকে বিয়োগ করবে ২। অর্থাৎ ৪০-২=৩৮।

ধাপ ৩: এবার ৩৮-কে দ্বিগুণ করলে হবে ৩৮+৩৮=৭৬। এখানেও প্রথমে ৪০+৪০=৮০। সেখান থেকে ৪ বিয়োগ করলে হবে ৮০–৪ =৭৬।

ধাপ ৪: এখন খেয়াল করো, প্রথম ধাপ থেকে বাদ দিয়েছিলে দুটি শূন্য। আর দশমিকের পরে আছে একটি সংখ্যা। তাহলে প্রথমে দুটি বাদ দেওয়া শূন্যের বসালে হবে ৭,৬০০। আর দশমিকের পরে যেহেতু একটি সংখ্যা, তাই এক সংখ্যা বাঁয়ে দশমিক বসবে। অর্থাৎ ৭৬০.০ বা ৭৬০।

এখন তুমি এখানে একটু কৌশল খাটাতে পারো। যেহেতু দুটি শূন্যের বাদ দেওয়ার জন্য দুটি শূন্য বসবে, আবার দশমিকের জন্য একটি শূন্য বাদ যাবে, তাই তুমি আগেই দুটি শূন্য থেকে একটা শূন্য বাদ দেবে। তাহলে শুধু একটা শূন্য উত্তরের সঙ্গে বসাবে। অর্থাৎ ৭৬-এর পাশে একটা শূন্য বসালে হবে ৭৬০।

এই পদ্ধতিতে তোমরা ৪, ০.৪, ৪০, ৪০০ কিংবা ৪,০০০ দিয়েও গুণ করতে পারবে। পদ্ধতিটা খুব সহজ। শুধু তোমার জানা থাকতে হবে। এখানে যতগুলো একনজরে দেখানো হয়েছে, সবগুলোতে গুণের সাহায্যে দ্বিগুণ করা হয়েছে তোমাদের বোঝার সুবিধার্থে। আর ধাপে ধাপে বোঝানোর সময় যোগ করে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তুমি যোগ বা গুণ যেকোনো একটা করতে পারো। যেটা তোমার কাছে সহজ লাগবে, সেটা করবে। এবার নিচের সমস্যাগুলো নিজেই সমাধান করো।

অনুশীলন

১. ৯৫ × ৪ =

২. ৪ × ৮৩ =

৩. ৫৪ × ৪০ =

৪. ৩৬০ × ০.৪ =

৫. ৪ × ৫৭০ =

৬. ২.৫ × ৪০ =

৭. ৯৮ × ৪ =

৮. ৭.৫ × ৪ =

৯. ০.৪ × ৯১০ =

১০. ৪০০ × ৭.৯ =

সমাধান

১. ৩৮০

২. ৩৩২

৩. ২,১৬০

৪. ১৪৪

৫. ২,২৮০

৬. ১০০

৭. ৩৯২

৮. ৩০

৯. ৩৬৪

১০. ৩,১৬০