কিশোর আলোর ১০ বছর
তোমরা কে কে লেখক হতে চাও?
কিশোর আলোর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২২ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী ‘নগদ কিআ কার্নিভ্যাল ২০২৩’। জনপ্রিয় মডেল, অভিনেতা-অভিনেত্রী, লেখক আর পাঠকের পদচারণে আয়োজিত হয়েছে জমজমাট এক কার্নিভ্যাল। লেখক হওয়ার সূত্র নিয়ে কর্মশালা নিয়েছেন কিআ সম্পাদক আনিসুল হক। অধ্যাপক তারিক মনজুর নিয়েছেন ভাষা নিয়ে কর্মশালা। পাঠকদের সঙ্গে দিয়েছেন আড্ডা। কী বলেছিলেন তাঁরা?
আনিসুল হকের লেখালেখি কর্মশালা
আনিসুল হক প্রথমেই বলেন, ‘যে লেখক, সে–ই পাঠক!’ কিশোর-কিশোরীদের প্রশ্ন করেন, ‘তোমরা কে কে লেখক হতে চাও?’ উপস্থিত সবাই হাত তোলে। কিন্তু তিনি যখন জিজ্ঞাসা করেন, পূর্ণকালীন লেখক কে কে হতে চাও? তখন কেবল একজন হাত তোলেন। তিনি হলেন কিশোর আলোর সাবেক নির্বাহী সম্পাদক সিমু নাসের। কর্মশালায় উপস্থিত সব শিক্ষার্থী লেখক হওয়ার পাশাপাশি অন্য একটি পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায়। আনিসুল হক বলেন, ‘তোমরা সবাই বুদ্ধিমান। আমি কিন্তু শুধু লেখালেখির মধ্যেই থাকতে চাই। বর্তমানে আমাদের দেশে শুধু লেখক হিসেবে টিকে থাকা কঠিন। তোমরা বড় হলে হয়তো এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে।’
আনিসুল হকের কাছে নতুন লেখকদের উদ্দেশে কিছু পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানায় এক পাঠক। আনিসুল হক জানান, একবার সৈয়দ শামসুল হক ‘বিচিত্রা’ কলামে লিখেছিলেন, ‘লেখক হতে চাইলে প্রচুর পড়া লাগবে।’ কলামে এই কথা পড়ে তরুণ আনিসুল হক হাতে রেকর্ডার নিয়ে সৈয়দ শামসুল হকের কাছে পড়ার বাইরে তিনটি পরামর্শ জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে সৈয়দ হক নাটকীয়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘লেখকদের জন্য পড়ার বাহিরে আমার তিনটি পরামর্শ হলো—পড়া, পড়া এবং পড়া!’ আনিসুল হক জানান, লেখকের পড়া আর পাঠকের পড়া এক নয়। লেখক পড়ার সময় সাময়িক আবেগে মগ্ন থাকেন না; বরং একজন লেখক চিন্তা করেন, এই গল্প এল কীভাবে?
ভাষা কর্মশালা
লেখক হওয়ার একটা শর্ত, নির্ভুলভাবে লিখতে জানতে হবে। ভাষাটা আগে শিখতে হবে ভালোমতো। তাই কিআ কার্নিভ্যালে ছিল ভাষাবিষয়ক কর্মশালা, পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর। তিনি কিশোর আলোর পাঠকদের চারটি বিশেষ নিয়ম শেখান। এগুলো হলো যুক্তবর্ণ কখন হয়, বিসর্গসন্ধির চার রকমের কাজ, চন্দ্রবিন্দু কখন হয়, ব্যঞ্জনসন্ধির নিয়ম কী। নিয়মকে তিনি তুলনা করেন বাংলা প্রবাদ ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’-এর সঙ্গে। যেমন চলৎ+চিত্র=চলচ্চিত্র। এখানে ডান পাশে চিত্রের ‘চ’ থাকায় ‘ৎ’ ‘চ’–এ পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি প্রতিটি নিয়মের বেশ কতগুলো উদাহরণ দেখান। কোনো ব্যতিক্রম থাকলে সেটিও কারণসহ বিশ্লেষণ করেন। পাঠকদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খাতা–কলম নিয়ে লিখতে দেখা যায়। সবাই নিজ মাতৃভাষাকে আরও ভালোভাবে জানার অনুপ্রেরণা নিয়ে কর্মশালাটি শেষ করে।