আরাফের বাইক দেখে ইমাদের কেন মন খারাপ

স্কুল ছুটির পর সব বাচ্চা হইহুল্লোড় করে বেরিয়ে এল। কিন্তু ছোট্ট ইমাদ মন খারাপ করে চুপচাপ এসে দাঁড়াল গেটের কাছে। ইমাদকে নিতে এসেছেন তার বাবা। ছেলের মাথার পেছনে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইমাদ, কী হয়েছে বাবা?’ ইমাদ যেন ঘোরের মধ্যে ছিল, বাবার ডাকে হকচকিয়ে হাসির চেষ্টা করে বলল, ‘কিছু হয়নি তো, বাবা।’

কিন্তু ইমাদের বাবা বুঝে নিলেন একটা কিছু হয়েছে। তবু তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে বাবা, এসো, তাহলে বাসায় ফেরা যাক।’

বাবা তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘মন খারাপ কোরো না বাবা। অফিস থেকে ফিরে তোমার সঙ্গে গল্প করব।’

বাসায় মায়ের সঙ্গে টুকটুক করে গল্প করতে করতে ইমাদ ভুলেই গেল মন খারাপের কথা।

তার বাবা অফিস থেকে ফিরেছে। রাতের খাবার শেষ করে ইমাদকে নিয়ে রাতে বের হলে শহর দেখতে। ইমাদের ভীষণ ভালো লাগছে। বাবা বললেন, ‘আরাফের খুব দামি সুন্দর ছোট বাইকটি দেখে তোমার মন খারাপ ছিল, তাই না?’

মাথা উঁচিয়ে সে বাবার দিকে তাকায়, ‘সেটা তুমি কেমন করে জানলে, বাবা?’ ‘উমম...জেনেছি, কীভাবে জানতে পারি তুমিই বলো?’

—আম্মু ফোনে বলেছে নিশ্চয়ই।

—হুঁউউউ। ঠিকই ধরেছে বুদ্ধিমান ছেলে আমার।

বাবা হাতের ইশারায় ফুটপাতের দিকে তাকে দেখাল। ইমাদ বাবাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ছোট ছোট খোপের মতো এগুলো কী, বাবা?’ বাবা বললেন, ‘এগুলো ঘর।’

ইমাদ অবাক হয়ে দেখতে থাকে। শুধু এমন প্লাস্টিকের মোড়ানো পাখির বাসার মতো খোপ খোপ এসব ঘর হয় কী করে? যখন বাবা তাকে বললেন, ‘এখানে মানুষ ঘুমায়।’ তখন সে আরও বেশি অবাক হয়ে যায়। ইমাদের বাবা বলল, ‘দেখেছ, এরা প্রতিদিন তিন বেলা পেট ভরে খাবারও পায় না। অথচ আমাদের দেখো, সুন্দর পরিপাটি একটা বাসা আছে, আরামের বিছানা আছে, প্রতিদিন কত রকমের খাবার খেতে পারছি। তবু বিলাসিতা বা আহ্লাদের কোনো একটা জিনিসের অভাববোধ হলে আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। নিজেদের অসুখী ভাবা শুরু করি।

আরও পড়ুন

‘তোমার বাবা একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তোমার অনেক শখ হয়তো পূরণ হয় না। সেই স্বপ্ন নিয়ে কি তাহলে তোমার মন খারাপ করা চলবে?’

ইমাদ ছোট্ট করে হেসে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তা কখনো চলবে না, বাবা।’ বাবাও হাসিমুখে ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণি, সাতকানিয়া মডেল হাইস্কুল, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুন