মানুষের জীবনে কতই না বিচিত্র ঘটনা ঘটে! আমারও একবার এক অদ্ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা হয়। তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। আমরা আমাদের নিজেদের নতুন বাসায়। বাসাটা আমার মা যত্ন করে গড়ে তুলেছেন। তাই হয়েছেও অপূর্ব! আমাদের আশপাশে আরও বেশ কয়েকটা বাড়ি। সেগুলো নিয়েই গড়ে উঠেছে আমাদের এলাকা। এই এলাকাতেই ছিল ভয়ানক কুচকুচে কালো এক বিড়াল। কালো শরীরে জ্বলজ্বল করত সবুজ দুটো চোখ। যা দেখে যে কারোরই ভয়ে লোম খাড়া হয়ে যেত।
এ বিড়াল কার? কোথা থেকে এসেছে, কেউই জানে না। সবাই বলে তারা প্রথম যেদিন এসেছিল, সেদিন থেকেই বিড়ালটাকে দেখছে। রাতে বিড়ালটাকে প্রায়ই বাড়ির পাঁচিলে পাঁচিলে হেঁটে বেড়াতে দেখা যেত। তেমনি একদিন রাতে আমি আমার মায়ের পাশে শুয়ে আছি। আমার পাশেই জানালা। জানালার পেছনে পাঁচিল আর তার ওপারে আরেকটা বাড়ির দেয়াল। ঘুম আসছিল না বলে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম সেই কালো বিড়ালটা পাঁচিলের ওপর দিয়ে হেঁটে আসছে। খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ওটা। একবার আমাদের জানালার দিকে তাকাল। জানালা খোলাই ছিল। চোখে চোখ পড়তেই বুঝলাম দৃষ্টিটা খুব শীতল কিন্তু অত্যন্ত ভয়ানক। চোখ সরানোর চেষ্টা করেও পারলাম না। একদৃষ্টে তাকিয়েই রইলাম। বিড়ালটা কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল। তারপর এক লাফে উঠে গেল সানসেটের ওপর, তারপর এক লাফে ছাদে। ভাবলাম বাঁচা গেল। অলক্ষুণে বিড়াল একটা। কোথা থেকে যে এসেছিল? কিন্তু হঠাত্ চোখ গেল সামনের বাসার দেয়ালটার দিকে। বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বিড়ালটার ছায়া পড়েছে এবং স্পষ্ট দেখলাম বিড়ালটা ঠিক মানুষের মতো দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আছে!
ভাবলাম হয়তো চোখের ভুল। আবার তাকালাম। না, চোখের ভুল নয়। বিড়ালটা সত্যি সত্যি দাঁড়িয়েছে! তারপর দেখলাম বিড়ালটা আস্তে আস্তে সামনের পা দুটো (কিংবা হাত দুটো) ওপরে তুলল, মানুষ যেমন স্রষ্টার কাছে কোনো কিছু চাওয়ার জন্য তোলে ঠিক সেভাবে! হঠাৎ করে বিরাট এক বজ্রপাত আর তারপরই ঝুম বৃষ্টি। এটাই কি চেয়েছিল বিড়ালটা? হঠাৎ করে শুরু হলো মানুষের গোঙানি। ভয়ে মনে হলো চিৎকার করে উঠি। পারলাম না। মাকে ডাকতে চাইলাম, পারলাম না। মনে হলো যেন এই গোঙানিতে আমি জ্ঞান হারাব, তাও হারালাম না। কেন? তা আমি জানি না। নিষ্পলক চেয়ে রইলাম ওদিকেই! উপায় না পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কতক্ষণ চোখ বন্ধ ছিল জানি না, তবে যখন খুলল তখন বাইরে আকাশে ঝকঝকে সোনালি রোদ। সেই বিড়াল, গোঙানি, বৃষ্টি কিছুই নেই।
আজও সেই বিড়ালটাকে আমি প্রায় দেখি। সেই শীতল ভয়ানক দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে যেন সতর্ক করে দেয় সেই রাতের ঘটনা যেন কাউকে না বলি!