রাতে ঘুমোনোর সময় রুমে তুলকালাম অবস্থা। সবাই নিজ নিজ সিট নিয়ে ব্যস্ত। কেউ কেউ জায়গা পাচ্ছে না। আবার কেউ জায়গা পেয়েও অসন্তুষ্ট, ফ্যানের নিচে জায়গা হয়নি বলে।
বাসা থেকে এসেছি আজ। হোস্টেলে বছরের প্রথম দিন। নতুন ছাত্রদের পরিমাণ দেখে আমি পুরোই হতবাক। অন্যান্য বছরের তুলনায় চার-পাঁচ গুণ। রুমটা যেন গিজগিজ করছে।
ভালো একটা সিট পেয়েও হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় আমার মাথা তখন অগ্নিকুণ্ড। কোনো রকম একটা সিট পেয়ে সেখানে ঝিম মেরে বসে আছি। হইহুল্লোড় দেখে ইচ্ছা করছে মাছবাজারে চলে যাই, রুমের তুলনায় সেটা স্বর্গ হবে হয়তো। এমন সময় একটি ছোট্ট বাচ্চা সামনে হাজির হলো। প্রথমে একটু অবাকই হলাম, এই পুঁচকে আবার কে? পরক্ষণেই মনে পড়ল, ও ও ও...এ-ই আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ছোট ছাত্র। অনেক ফিসফাস শুনেছি সন্ধ্যা থেকে একে নিয়ে।
‘ভাই, মশারি টানানোর জন্য কোনো দড়ি হবে?’
বাচ্চা কণ্ঠটা কি আমাকেই সম্বোধন করল নাকি? ঘোর কাটতে একটু সময় লাগল।
‘না ভাই, কোনো দড়িটড়ি নেই আমার কাছে।’ একটু বেয়াড়াভাবেই উত্তর দিলাম, মেজাজে ছিলাম।
ছেলেটি সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে চলে গেল, যেন আবার পরাজিত সে। কেন জানি একটু মায়া লাগল তখন। কিছু না বলে নিজ থেকেই দড়ি-রশি খুঁজতে শুরু করলাম। পুরোনো ছাত্র হওয়ায় কোনো বেগ পেতে হলো না আমার। প্রয়োজনের চেয়ে কিছুটা বেশি দড়ি নিয়ে তাকে দিলাম। আমি স্বাভাবিকই ছিলাম, কিন্তু সে দড়ি পেয়ে খুব খুশি হলো।
পরবর্তী সময়ে এই ঘটনার কোনো প্রভাব না থাকলেও ওর সঙ্গে খুব ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনকি ক্লাসের সবাই আমাদের দুজনের জুটিটা দেখে ঈর্ষায় ফেটে পড়ত। এমন একটি জুটি হয়তো আর কখনোই পাব না।
আজ ও কাছে নেই, অনেক দূরে। খুব মিস করি ওকে। ভেতরে ওর জন্য একটা খারাপ লাগা কাজ করে। বড় কষ্টকর। তবে আমি চাই, সব সময় এই অনুভূতি জীবিত থাকুক। আমি এটাকে জিইয়ে রাখতে চাই।
হামযা বিন হেলাল
দশম শ্রেণি, দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা