হারিয়ে যাওয়া টিয়া পাখি

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

বাসার পরিবেশ থমথমে। বিকেলে বাসার ড্রয়িংরুমে আলোচনা বসবে। আলোচনার বিষয় টিয়া পাখি। বড় চাচা গত সপ্তাহে একটি টিয়া পাখি এনেছিলেন। কিন্তু টিয়া পাখিটি গত রাত থেকে উধাও। সবার সন্দেহের তির মিনির দিকে। মিনি আমাদের বাসার বিড়াল। কিন্তু কেউ মুখ ফুটে বলতে পারছে না। কেননা, বাসার সবাই অনেক ভালোবাসে মিনিকে। কিন্তু রহিমার মা হঠাৎ বলে ফেললেন, ‘আমার মনে হয়, বিলাইটা পাখিটারে খাইছে।’ রহিমার মা আমাদের বাসায় কাজ করছেন দেড় বছর। তিনি আসার পর বিড়ালটা বাসায় এসেছে। বিড়ালটাকে সহ্যই করতে পারেন না তিনি। রহিমার মায়ের কথায় সব কটা চোখ ঘুরল তাঁর দিকে। এমন পরিস্থিতি দেখে তিনিও চুপ করে গেলেন। এমন সময় মিনা আপু বললেন, ‘খাঁচাটা যেখানে ছিল, সেখানে তো মিনির পৌঁছানোরই কথা নয়। আর যদি পৌঁছায়ও, খেয়েও যদি ফেলে, তাহলেও তো খাঁচার নিচে পাখির পালক পড়ে থাকত।’ রূপকথার গল্পপড়ুয়া হাসান বলল, ‘পাখিটা হয়তো জাদুকরের পাখি ছিল। তাই জাদুকর জাদু করে পাখি নিয়ে গিয়েছেন।’ বড় চাচার ছোট মেয়ে তিন্নি তো কান্নাকাটি করে অস্থির। তার ওই টিয়া পাখিটাই চাই। অন্য টিয়া পাখি সে নেবে না।

কথার মধ্যে আমি খেয়াল করলাম, ছোট চাচা কোনো কথা বলছেন না। সেদিনের মতো সভা শেষ হলো। কিন্তু কোনো সমাধান হলো না। দুই দিন পর আমার বড় বোন বলল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে। সবাই তার প্রস্তাবে নারাজি। পরে ছোট চাচা সবাইকে রাজি করিয়ে বিজ্ঞাপন দিলেন। বিজ্ঞাপনে লেখা হলো পুরস্কারের কথা। তাই অনেকেই এলেন টিয়া পাখি নিয়ে। একেকজনের একেক কথা। একজন তো বললেন, পাখিটিকে নাকি তিনি গাছে দেখেছিলেন এবং অনেক কষ্টে পাখিটিকে নামিয়ে এনেছেন। তাঁদের আনা কোনো পাখিই আমাদের পাখি নয়। কারণ, আমাদের পাখির পায়ে গোলাপি রঙের রিং ছিল। দুই মাস কেটে গেল। এখনো পাওয়া গেল না পাখিটিকে। আমি জানতাম, আর পাওয়াও যাবে না। কারণ, পাখিটিকে আমিই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। ঠিক উড়িয়ে দেওয়া নয়। পাখি উধাও হওয়ার রাতে আমি আ্যাসাইনমেন্ট করছিলাম অনেক রাত পর্যন্ত। হঠাৎ পানির পিপাসা পাওয়ায় ডাইনিংরুমে গিয়ে পানি খাওয়ার পর টিয়া পাখিটির দিকে চোখ পড়ল। ভাবলাম, টিয়া পাখিটিকে একটু দেখে আসি। খাঁচার কাছে যেতেই পাখিটি ধরার ইচ্ছা হলো। তাই খাঁচার দরজা খুললাম। যেই পাখিটিকে ধরতে যাব, তখনই পাখিটি আমাকে ফাঁকি দিয়ে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল। আর আমি ধরার আগেই টিয়া পাখিটি উড়ে গেল জানালা দিয়ে।

তানিশা রহমান

অষ্টম শ্রেণি, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা