একবার পয়লা বৈশাখে আমরা সব ভাইবোন ছাদে রং খেলায় ব্যস্ত ছিলাম। খেলায় এতই মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম যে গরম টের পাচ্ছিলাম না। সবাই একে অপরকে রং লাগাতে ব্যস্ত। খেলতে খেলতে আমার খুব পানির পিপাসা পেল। রঙের বোতলটা ছাদে রেখে বাসায় যাচ্ছিলাম আমি। নিচে নামার সময় দেখি ঝুমু দুটি বোতল নিয়ে ওপরে উঠছে। ঝুমু ছোট চাচির বুয়ার মেয়ে। বয়স মাত্র ছয় বছর। কিন্তু কথাবার্তা একদম বড়দের মতো। আমাকে সিঁড়িতে দেখে সে থেমে গেল। আমি ঝুমুকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বোতলে কী ঝুমু?’ সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বোতলে রং ভরেছি আপু। এখন ছাদে গিয়ে সবার সঙ্গে রং দিয়ে খেলব। এখন আমি যাই আপু।’
‘যাও, মজা করে খেলো’ আমি বললাম।
এই বলে আমিও চলে গেলাম, ঝুমুও চলে গেল। বাসায় ঢুকে দেখি অনেক মেহমান এসেছে। আমি ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখি আম্মু, ছোট চাচি, বড় চাচি ও বুয়া কী যেন একটা খুঁজছেন। একজন ফ্রিজে খুঁজছেন, আরেকজন রান্নাঘরে খুঁজছেন। আর আম্মু বুয়াকে কী ব্যাপারে যেন বকছেন। আমি টেবিলের ওপর থেকে বোতলটা নিয়ে পানি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ আম্মু আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করল, সাদিকা তুই কি এখানে কোনো বোতল দেখেছিস। দুইটা বড় বোতল।’
‘না। আমি তো দেখিনি।’
‘এখন তো বাসায় আর জুস নেই। এই গরমে মেহমানদের কী দেব?’ ছোট চাচি বললেন।
‘কিন্তু আপা আমি বোতল দুইটা টেবিলের ওপরেই রাখছিলাম। কোথায় যে গেল কে জানে।’ বুয়া আম্মুকে বললেন।
‘বোতলের তো ডানা গজিয়েছে। তাই উড়ে উড়ে চলে গেছে তাই না?’ আম্মু বুয়াকে বললেন।
বুঝলাম, এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। তাই কেটে পড়লাম আমি। ছাদে যাওয়ার সময় মনে পড়ল বোতল দুটির কথা। তখন বুঝলাম, ঝুমুই বোতল দুটি রঙের বোতল ভেবে নিয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে সব ঘটনা বললাম। পরে সবাই ছাদে গিয়ে দেখি ঝুমু জুসকে রং ভেবে সবার গায়ে ছিটাচ্ছে। এক বোতল আগেই শেষ করে ফেলেছে। আম্মু আর বাকিরা দাঁড়িয়ে ঝুমুর কাণ্ড দেখছেন। বুয়া নিজেই তাঁর মেয়ের কাণ্ড দেখে অবাক।
‘এখন কী করব ভাবি। ঝুমু তো সব জুস শেষ করে ফেলেছে!’ ছোট চাচি বললেন।
‘কী আর করব। বুয়াকে জুস কিনতে পাঠাতে হবে।’ বড় চাচি বললেন। পরে আম্মু আর চাচি চলে গেলেন। আর বুয়া গেল জুস কিনতে। প্রথমবার দেখলাম কেউ রঙের পরিবর্তে জুসের খেলা খেলছে। এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মজার পয়লা বৈশাখ।