বই: হাউ টু বিল্ড আ টাইম মেশিন |লেখা: পল ডেভিস | ভাষান্তর: আবুল বাসার | দাম: ৩০০ টাকা | প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রখ্যাত বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখক এইচ.জি. ওয়েলস এবং আর্থার সি. ক্লার্কের লেখা পড়ে ছোটবেলায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক পল ডেভিস। পদার্থবিজ্ঞান সময় ভ্রমণ নিয়ে কী বলে, তা তাঁকে দীর্ঘদিন ধরেই আকর্ষণ করছিল। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি একটি বই লিখেছেন—হাউ টু বিল্ড আ টাইম মেশিন। এই বইয়ে তিনি দেখিয়েছেন, সময় ভ্রমণ আদৌ সম্ভব কি না; হলে কীভাবে সময় ভ্রমণ করা যেতে পারে। অবশ্যই ফিজিক্সের নিয়ম ভঙ্গ না করে এবং কোনো ভয়ংকর বিপর্যয় সৃষ্টি না করে এই ভ্রমণ সম্পন্ন হবে। পল ডেভিস দেখিয়েছেন, সময় ভ্রমণের জন্য দরকার একটি উপযুক্ত ব্ল্যাকহোল বা ওয়ার্মহোল। সঙ্গে লাগবে প্রবল সৌভাগ্য। এই দুইয়ের সমন্বয়ে কীভাবে বাস্তবসম্মতভাবে সময় ভ্রমণ করা সম্ভব হতে পারে, তাই নিয়েই এই বইয়ের আলোচনা।
‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’ সিনেমা বা ‘ক্রোনো ট্রিগার’ ভিডিও গেম আমাদের কাছে টাইম মেশিনের ধারণা বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে। সময় ভ্রমণের বিষয়টা অনেকদিন ধরেই দখল করে রেখেছে বহু মানুষের আগ্রহের জায়গাটুকু। কিন্তু এখন পর্যন্ত সময় ভ্রমণ করা সম্ভব হয়নি। মানে কেউ অতীতে ফিরে যেতে পারেনি বা ভবিষ্যতে উপস্থিত হয়নি। অন্তত, আমাদের জানামতে। তবে সিনেমা বা গল্পে অহরহ সময় ভ্রমণের ঘটনা ঘটছে। সিনেমার চরিত্রেরা অতীতে বা ভবিষ্যতে গিয়ে নানা কাণ্ডকারখানা করছে। সেখান থেকেই প্রশ্নটা আসে, সময় ভ্রমণ কি আদৌ সম্ভব?
এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আছে বিভক্তি। তবে সময় ভ্রমণ সম্ভব হওয়ার পক্ষেও অনেক যুক্তি আছে। কীভাবে তা করা সম্ভব, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম ভঙ্গ না করেই, বিষয়টি লেখক পল ডেভিস সুন্দর করে, সহজভাবে তুলে ধরেছেন। এককথায় সময় ভ্রমণের পরিকল্পনার জন্য এই বই অসাধারণ।
এই বইয়ে এমন কোনো যন্ত্রের কথা বলা হয়নি, যেখানে কেউ বসবে, একটা লিভার টানবে, আর পছন্দমতো যেকোনো সময়ে ফিরে যেতে পারবে। এমন যন্ত্রই তো আমরা টাইম মেশিন হিসেবে কল্পনা করি। বরং লেখক বিজ্ঞানসম্মত এবং বাস্তবধর্মী দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছেন। বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞান, মহাকাশ, পদার্থবিদ্যা এবং কোয়ান্টাম মেকানিকসের কিছু বিষয় সহজ করে ব্যাখ্যা করেছেন। এই বই থেকে সাধারণ পাঠকও সহজভাবে বুঝতে পারবেন, বিশেষ করে কিশোর পাঠকের পক্ষে বোঝা সম্ভব হবে, কীভাবে সময় ভ্রমণ করা যেতে পারে! সময় ভ্রমণ বলতে অতীতে ফিরে যাওয়া বা ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
প্রথম অধ্যায়ে লেখক ডেভিস সবচেয়ে সহজ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন—ভবিষ্যতে ঝাঁপ দেওয়া। তিনি ‘স্যাম এবং স্যালি’ নামের দুটি চরিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে কেউ ভবিষ্যতে যেতে পারে। সময়ের এই ভ্রমণে ভ্রমণকারীর বয়স না-ও বাড়তে পারে। এর পাশাপাশি তিনি কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য এবং সম্ভাব্য তত্ত্বও ব্যাখ্যা করেছেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে আরেকটু গভীরে গিয়েছেন লেখক। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে অতীতে ফেরা সম্ভব। এর জন্য তিনি ওয়ার্মহোল এবং ‘নেকেড’ বা ‘উন্মুক্ত’ সিংগুলারিটির ধারণা এনেছেন। তৃতীয় অধ্যায়ে সময় ভ্রমণের আগের ধারণাকে একত্রিত করে ‘সম্পূর্ণ টাইম মেশিন’ তৈরির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। যদিও বেশির ভাগ অংশ তাত্ত্বিক, কিছু কিছু বিষয় এমনকি অসম্ভব মনে হতে পারে। তবে সময় ভ্রমণ বিষয়টি পুরোপুরি জানার জন্য এই বই সহজ ও সুন্দর একটি মাধ্যম হবে। আমাদের ভাগ্য ভালো হলে হয়তো একদিন সত্যিই আমরা সময় ভ্রমণ করতে পারব।
চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক ব্যাখ্যা করেছেন, বিষয়গুলো কীভাবে বোঝা যাবে। অনেকটা সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনালেও এই বিষয়গুলো জরুরি। প্রকৃতির অনেক নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানি, কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমরা নতুন সম্ভাবনাগুলোর ব্যাপারে জানব না। এই সম্ভাবনাগুলো প্রচলিত নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। এটি মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে সত্যি। আমাদের জানা জগতে যা চলছে, তার বাইরেও অনেক কিছু রয়েছে, যা আমরা এখনো বুঝতে পারিনি। এই অধ্যায়ে সেসব বিষয় বিস্তারিত বলা হয়েছে।
এই বই থেকে মহাবিশ্ব নিয়ে নতুন অনেক কিছু শিখতে পারবে। নিজের জানা জগতের বাইরে তুমি জানবে, মহাবিশ্ব এক রহস্যময় জগৎ। এই জগতে একসময় আমরা হয়তো সময় ভ্রমণের দারুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারব। লেখক এই বইয়ে সময় ভ্রমণের ধারণাকে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। এ যেন এক রোমাঞ্চকর সম্ভাবনাময় যাত্রা।
বইটি খুব সুন্দর করে সহজ ভাষায় বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে। জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক ও অনুবাদক আবুল বাসার বইটি অনুবাদ করেছেন। তুমি যদি মহাবিশ্বের রহস্যময় জগতকে জানতে চাও, কল্পনা করতে পছন্দ করো, কিংবা এক বিকেলে বেরিয়ে পড়তে চাও সময় ভ্রমণে, তাহলে এই অসাধারণ বইটি তোমার জন্য।