আমার প্রিয় মানুষগুলো

ছোটবেলার স্মৃতি মনে হলেই আমার চোখে নানু আর মামার চেহারা ভেসে ওঠে। আমার ছোটবেলার সব স্মৃতি নানু আর মামাকে ঘিরেই। এই দুজন মানুষের সঙ্গেই বেশি সময় কাটত আমার। এই দুজন মানুষের কাছেই ছিল আমার যত আবদার। আব্বু–আম্মুর কাছে যত না আবদার করেছি, তার থেকেও বেশি করেছি নানু আর মামার কাছে। ভাইয়া আর আমি—আমরা দুই ভাইবোনই মামা আর নানুর জন্য পাগল ছিলাম (এখনো আছি আর থাকব)। আমার আর ভাইয়ার কাছে নানু যেন আলাদিনের চেরাগ আর মামা সেই চেরাগের জিন। আমাদের যখন যা খেতে ইচ্ছা হতো, যখন যা কিনতে মন চাইত, নানুর কাছে দৌড়ে যেতাম। নানু মামাকে ডেকে বলে দিতেই আমাদের জন্য সেটা নিয়ে আসত। মামা আর নানুর সঙ্গে অনেকবার ঘুরতে গিয়েছি আমি।

একবার কোরবানির ঈদে আমি নানুকে গিয়ে বলছিলাম, ‘নানু, গরু কিনবে না? চলো না আমরা গরু কিনতে যাই।’ নানু বলল, ‘আমার কাছে তো এখন একটুও টাকা নেই, আপু।’ এই কথা শুনে আমি দৌড়ে গিয়ে ঘর থেকে আমার মাটির ব্যাংক নিয়ে এলাম নানুর কাছে। ব্যাংকটা নানুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘আমার ব্যাংকের টাকাগুলো দিয়ে একটা গরু নিয়ে আসি নানু, প্লিজ চলো।’ আমার এই কথা শুনে নানু হাসতে হাসতে শেষ! আরেকটা গল্প। একদিন রাতে বিদ্যুৎ চলে গেল। ঘুমের মধ্যে টের পেলাম আমার গায়ে ঠান্ডা বাতাস লাগছে। সঙ্গে আসছে পানির ছিটা। আমি ঘুমের মধ্যে বললাম, ‘নানু, বৃষ্টি পড়ছে নাকি? পানি আসছে, জানালা বন্ধ করে দাও।’ নানু শব্দ করে হেসে বলল, ‘হ্যাঁ, বৃষ্টি হচ্ছে।’ বিদ্যুৎ আসার পর যখন নানু ঘুমিয়ে পড়ল আর আমার ঘুমটা হঠাৎ ভেঙে গেল, পাশে চেয়ে দেখি পানি দিয়ে ভেজানো একটা হাতপাখা। সেদিন রাতে কোনো বৃষ্টি হয়নি বরং পানি দিয়ে পাখা ভিজিয়ে নানু আমাকে বাতাস করছিল, যেন গরমে আমার ঘুম ভেঙে না যায়।

নানুকে কখনো বলা হয়নি আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। বলা হয়নি মামাকেও। নানুকে বলার সুযোগ হারিয়ে ফেলেছি, মামাকে বলার সুযোগটা হারাতে চাই না। আজকে এই লেখার মাধ্যমে বলতে চাই, নানু, মামা, আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি। আমার ছোটবেলাটা এত সুন্দর ছিল তোমাদের জন্যই। ৬ মে ২০২২ তারিখটা আমার সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই দিন থেকে আমি আমার নানুটাকে পুরো বাড়ির মধ্যে কোথাও খুঁজে পাই না। খুব দেখতে ইচ্ছা করে নানুকে। মাঝেমধ্যে প্রাইভেট পড়া শেষে বাসায় ফেরার পথে নানুর সঙ্গে দেখা করতে যাই। ওখানে অনেক অনেক মানুষ শুয়ে থাকে আমার নানুর সঙ্গে। সবার জন্য দোয়া করে আসি। আসার সময় পা অবশ হয়ে যায়, যেন আমার পা দুটো বাড়ি যেতে চায় না নানুকে একলা ফেলে। তবু এসে পড়তে হয়।

কে জানে, আমার নানুটা সেখানে একা একা কেমন করে থাকে। মামা যখন সেদিন ‘মা, মা’ বলে কাঁদছিল, সেদিন আমার খুব ইচ্ছা করছিল মামাকে অনেক আদর করি। মনে হচ্ছিল আমার ছেলে কাঁদছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলাম মামাকে। অনেক বছর পর মামাকে একটুখানি আদর করেছিলাম সেদিন। এপারে কিংবা ওপারে, আমার প্রিয় মানুষগুলো ভালো থাকুক সবখানেই। আমিন!

আরও পড়ুন