দশমিকের সঙ্গে পূর্ণসংখ্যার গুণের কৌশল
শেষে ৫ আছে, এমন সংখ্যার দশমিকের গুণ করা যাবে এই পদ্ধতিতে। যেমন, ১.৫, ২.৫ বা ৩.৫-এর মতো দশমিক সংখ্যার সঙ্গে যে কোনো পূর্ণ সংখ্যার গুণ করা যাবে। এ জন্য প্রথমে দশমিক সংখ্যাটি দ্বিগুণ করতে হবে। আর পূর্ণসংখ্যাটিকে ভাগ করতে হবে ২ দিয়ে। তারপর গুণফল ও ভাগফল আবার গুণ করলেই উত্তর পাওয়া যাবে। শুনতে কঠিন মনে হলেও আসলে এই গুণ অনেক সহজ। চলো দেখা যাক।
সমস্যা: ১ (সহজ)
৩.৫ × ১২
ধাপ ১: দশমিক সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করতে হবে। অর্থাৎ ৩.৫ × ২ = ৭। দ্বিগুণ করতে প্রথমে ৩-কে ২ দিয়ে গুণ করে তার সঙ্গে ১ যোগ করবে।
ধাপ ২: এবার পূর্ণসংখ্যাটিকে অর্ধেক করতে হবে। মানে ২ দিয়ে ভাগ। ১২ ÷ ২ = ৬।
ধাপ ৩: ওপরের দুই ধাপের গুণফল ও ভাগফল আবার গুণ করতে হবে। অর্থাৎ ৭ × ৬ = ৪২।
একনজরে দেখে নাও
৩.৫ × ১২ → ৩.৫ × ২ = ৭ → ১২ ÷ ২ = ৬ → ৭ × ৬ = ৪২
সমস্যা: ২ (সহজ)
৪.৫ × ১৬
ধাপ ১: দশমিক সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করলে হবে ৪.৫ × ২ = ৯।
ধাপ ২: পূর্ণসংখ্যাকে অর্ধেক করে পাবো ১৬ ÷ ২ = ৮।
ধাপ ৩: গুণফল ৯ × ৮ = ৭২।
একনজরে দেখে নাও
৪.৫ × ১৬ → ৪.৫ × ২ = ৯ → ১৬ ÷ ২ = ৮ → ৯ × ৮ = ৭২
সমস্যা: ৩ (কঠিন)
৮৫ × ২২
ধাপ ১: এখানে দুটিই পূর্ণসংখ্যা। একই পদ্ধতিতে এই গুণটিও করা যায়। ৮৫ × ২ = ১৭০।
ধাপ ২: আর ২২ ÷ ২ = ১১।
ধাপ ৩: এখন ১৭০ ও ১১ গুণ করতে হবে। আগে ১১-এর কৌশল শিখিয়েছি। ভুলে গেলে লিংক থেকে আবার দেখে নাও। ১৭০ × ১১ = ১,৮৭০।
একনজরে দেখে নাও
৮৫ × ২২ → ৮৫ × ২ = ১৭০ → ২২ ÷ ২ = ১১ → ১৭০ × ১১ = ১,৮৭০
সমস্যা: ৪ (কঠিন)
৭.৫ × ৩২০
ধাপ ১: দশমিক ও শূন্য বাদ দিয়ে গুণটি করা যায়। আবার দশমিক রেখে শুধু শূন্য বাদ দিয়েও করা যায়। আমরা দশমিক ও শূন্য উভয়ই বাদ দিয়ে করি। তাহলে গুণটা হলো ৭৫ × ৩২
ধাপ ২: ৭৫ × ২ = ১৫০।
ধাপ ৩: আর ৩২ ÷ ২ = ১৬।
ধাপ ৪: এখন ১৫০ ও ১৬ গুণ করতে হবে। এখানে ১৫-এর গুণের কৌশল ব্যবহার করতে পারো। ১৫০ × ১৬ = ২,৪০০। অথবা ১৫-কে পরপর ৪ বার ২ দিয়ে গুণ করে পাশে একটা শূন্য বসাতে পারো। তাহলে ১৫ × ২ = ৩০ → ৩০ × ২ = ৬০ → ৬০ × ২ = ১২০ → ১২০ × ২ = ২৪০। এর পাশে একটা শূন্য বসালে, মানে ১৫০-এর যে শূন্যটা বাদ দিয়ে শুধু ১৫ ধরেছিলাম, সেটি বসালে হবে ২৪০০।
ধাপ ৫: যেহেতু প্রথম ধাপে একটা শূন্য ও এক ঘর বাঁয়ের দশমিক বাদ দিয়েছি, তাই ওই দুটি কাটাকাটি হয়ে গেছে। অর্থাৎ উত্তরে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
একনজরে দেখে নাও
৭.৫ × ৩২০ → ৭৫ × ৩২ → ৭৫ × ২ = ১৪০ → ৩২ ÷ ২ = ১৬ → ১৪০ × ১৬ = ২,৪০০
প্রথম ধাপে বলেছিলাম, দুই ভাবে অঙ্কটি করা যায়। আমরা এক নিয়মে করেছি। বাকিটা তুমি নিজে চেষ্টা করে দেখো তো, পারো কি না!
মনে মনে যেভাবে করবে
ধরো, ২২ ও ৬.৫ গুণ করবে। প্রথমে ৬.৫-এর দিগুণ হবে ১৩ এবং ২২-এর অর্ধেক ১১। তাহলে ১৩ ও ১১ গুণ করলে হবে ১৪৩ (১১-এর গুণের কৌশল ভুলে গেলে লিংক থেকে আবার দেখে নাও)। ব্যস, সমাধান শেষ।
অনুশীলন (সহজ)
১. ১৪ × ১.৫ =
২. ৪৬ × ৫.৫ =
৩. ৩.৫ × ৫৭ =
৪. ৯.৫ × ৮৮ =
৫. ২.৫ × ৩৪ =
অনুশীলন (কঠিন)
১. ৬৪০ × ০.৮৫ =
২. ৪৬০ × ৪.৫ =
৩. ৫.৫ × ৫১ =
৪. ৮০ × ৯.৮ =
৫. ১৫০ × ৪.৮ =
সমাধান (সহজ)
১. ২১; ২. ২৫৩; ৩. ১৯৯.৫; ৪. ৮৩৬; ৫. ৮৫
সমাধান (কঠিন)
১.৫৪৪; ২.২০৭০; ৩.২৮০.৫; ৪. ৭৮৪; ৫. ৭২০
দশমিকের সঙ্গে পূর্ণসংখ্যার ভাগ
ভাগ করার ক্ষেত্রেও শর্ত একই। শেষে ৫ আছে, এমন সংখ্যার দশমিকের ভাগ করা যাবে এ পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে দশমিক সংখ্যা ও পূর্ণসংখ্যা উভয়ই দ্বিগুণ করতে হবে। তারপর পূর্ণসংখ্যার গুণফলকে দশমিক সংখ্যার গুণফল দিয়ে ভাগ করতে হবে।
সমস্যা: ১ (সহজ)
২৮ ÷ ৩.৫
ধাপ ১: প্রথমে পূর্ণসংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করি। অর্থাৎ ২৮ × ২ = ৫৬।
ধাপ ২: এবার দশমিক সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করলে হবে ৩.৫ × ২ = ৭।
ধাপ ৩: এখন পূর্ণসংখ্যার গুণফলকে ভাগ করতে হবে দশমিক সংখ্যার গুণফল দিয়ে। অর্থাৎ ৫৬ ÷ ৭ = ৮।
একনজরে দেখে নাও
২৮ ÷ ৩.৫ → ২৮ × ২ = ৫৬ → ৩.৫ × ২ = ৭ → ৫৬ ÷ ৭ = ৮
সমস্যা: ২ (সহজ)
২৬ ÷ ৬.৫
ধাপ ১: প্রথমে পূর্ণসংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করি। ২৬ × ২ = ৫২।
ধাপ ২: দশমিক সংখ্যাকে দ্বিগুণ করলে হবে ৬.৫ × ২ = ১৩।
ধাপ ৩: উভয় গুণফলের ভাগফল ৫২ ÷ ১৩ = ৪।
একনজরে দেখে নাও
২৬ ÷ ৬.৫ → ২৬ × ২ = ৫২ → ৬.৫ × ২ = ১৩ → ৫২ ÷ ১৩ = ৪
সমস্যা: ৩ (কঠিন)
২২৫ ÷ ৪৫
ধাপ ১: এখানে দুটিই পূর্ণসংখ্যা। সেক্ষেত্রে প্রথমে বড় পূর্ণসংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করতে হবে। ২২৫ × ২ = ৪৫০। প্রথমে ২০০-এর দ্বিগুণ করলে হবে ৪০০ এবং পরে ২৫-এর দ্বিগুণ ৫০। অর্থাৎ মোট ৪৫০।
ধাপ ২: এবার ছোট পূর্ণসংখ্যাকে দ্বিগুণ করলে হবে ৪৫ × ২ = ৯০।
ধাপ ৩: গুণফলদ্বয়কে ভাগ করলে পাবো ৪৫০ ÷ ৯০ = ৫। ভাগ করার ক্ষেত্রে উভয় পাশের শূন্য বাদ দিয়ে কল্পনা করো। অর্থাৎ ৪৫-কে ৯ দিয়ে ভাগ করো। তাহলে সহজ মনে হবে।
একনজরে দেখে নাও
২২৫ ÷ ৪৫ → ২২৫ × ২ = ৪৫০ → ৪৫ × ২ = ৯০ → ৪৫০ ÷ ৯০ = ৫
সমস্যা: ৪ (কঠিন)
৩১৫ ÷ ১০.৫
ধাপ ১: পূর্ণসংখ্যাকে দ্বিগুণ করলে হবে ৩১৫ × ২ = ৬৩০।
ধাপ ২: দশমিক সংখ্যাকে দ্বিগুণ করলে হবে ১০.৫ × ২ = ২১।
ধাপ ৩: ভাগফল ৬৩০ ÷ ২১ = ৩০। এখানেও ৬৩০-এর শূন্য বাদ দিয়ে ৬৩-কে ২১ দিয়ে গুণ করো। পরে ২১-এর পাশে বাদ দেওয়া শূন্যটা বসিয়ে দাও।
একনজরে দেখে নাও
৩১৫ ÷ ১০.৫ → ৩১৫ × ২ = ৬৩০ → ১০.৫ × ২ = ২১ → ৬৩০ ÷ ২১ = ৩০।
মনে মনে করবে যেভাবে
ধরো, ১২-কে ১.৫ দিয়ে ভাগ করবে। শুরতেই ১২ দুগুনে ২৪ ও ১.৫ দুগুনে ৩। এখন ২৪-কে ৩ দিয়ে ভাগ করলে ৮। মাত্র ২ সেকেন্ডের কাজ।
অনুশীলন (সহজ)
১. ৩৩ ÷ ৫.৫ =
২. ২২.৫ ÷ ২.৫ =
৩. ৪৪ ÷ ৫.৫ =
৪. ৩৮ ÷ ৯.৫ =
৫. ১৭০ ÷ ৮.৫ =
অনুশীলন (কঠিন)
১. ৪৯ ÷ ৩.৫ =
২. ১,৯৫০ ÷ ৬৫ =
৩. ১৮০ ÷ ৪.৫ =
৪. ২৫৫ ÷ ৮.৫ =
৫. ২৪.৫ ÷ ৩.৫ =
সমাধান (সহজ)
১. ৬; ২. ৯; ৩. ৮; ৪. ৪; ৫. ২০
সমাধান (কঠিন)
১.১৪; ২.৩০; ৩.৪০; ৪. ৩০; ৫. ৭