আমার আপা রেইন লিলি খুব ভালোবাসত। বৃষ্টিভেজা রেইন লিলির ছবি যে কত ঢঙে সে তুলত, বলে বোঝাতে পারব না। আমাদের ছাদবাগানে, ব্যালকনিতে আর গেটের সামনের যে একচিলতে উঠান ছিল, এর সবটা জুড়েই ছিল রেইন লিলির ছড়াছড়ি। হাসনাহেনা আর বকুলগাছও ছিল একটা করে। বিয়ের আগে প্রায়ই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আপা আমাদের বাসার পেছনের পুকুরপাড়ের বকুলতলা থেকে ফুল কুড়িয়ে বড় করে তোড়া বানাত, রোল করে চুলে বাঁধত, হাতের মুঠোয় কয়েকটি বকুল নিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিত। চোখ দুটোকে গোল গোল করে বলত, ‘তোকে একটা তোড়া বানিয়ে দিই?’
আজ আমার আপা নেই। পুরাণের মিথ অনুযায়ী আকাশের তারা হয়ে গেছে। এক নাম না-জানা তারা। মাঝেমধ্যে রাত হলেই আমি তারা গুনতে থাকি। মনে মনে খুঁজতে থাকি আমার হারিয়ে যাওয়া বোনটাকে। আমার তখন খুব কাঁদতে ইচ্ছা করে! চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, ‘তুই কোথায়, কেমন আছিস আপা?’
আমাদের উঠানে এখনো রেইন লিলির অনেকগুলো চারা আছে। থরে থরে ফুল ফুটে আছে সেগুলোয়। বাতাসে এলেই তাথৈ তাথৈ ছন্দে নৃত্য করতে থাকে ফুলগুলো। তখন আমার খুব মায়া জাগে, ইচ্ছা করে এই ফুলগুলোকে বুকে জড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। আপা চলে যাওয়ার পর থেকে আর কখনো বকুলতলায় বসা হয়নি। এখন কেমন গা ছমছম করে বকুলতলার কাছে যেতে। পুরোনো স্মৃতিরা খামচে ধরে আমাকে। হেঁচকি দিয়ে কান্না আসে। মরে যেতে ইচ্ছা করে। তবু আমি প্রতিদিন বাঁচতে চাই—সুন্দর একটা জীবন অতিবাহিত করতে চাই। একগুচ্ছ রেইন লিলি, একমুঠো বকুল আর কিছু হাসনাহেনা বুকে জড়িয়ে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া উমর বিন খাত্তাব (কওমি মাদ্রাসা) সাইনবোর্ড, ঢাকা