বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন কিশোর আলোর আব্দুল ইলা

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম সৈকত। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা। সাগরে নামেন ৪৩ জন সাঁতারু। যাদের লক্ষ্য ‘বাংলা চ্যানেল’ পাড়ি দেবেন। সমুদ্রপথে সাঁতার কাটবেন ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার। এই সাঁতারুদের দলে ছিলেন কিশোর আলোর প্রদায়ক, স্বেচ্ছাসেবক ও আলোকচিত্রী আব্দুল ইলা। একই সঙ্গে তিনি কিশোর আলো ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাবের সহসমন্বয়ক।

শাহপরীর দ্বীপ থেকে দলের সবার সঙ্গে সাঁতার শুরু করেন আব্দুল ইলা। ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সাঁতার কেটে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌছান তিনি। সাঁতার শেষে কিশোর আলোকে জানালেন অনুভূতি। উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বললেন, ‘আমি আগে কখনো সেন্টমার্টিন যাইনি। এই প্রথম সেন্টমার্টিন এলাম। ইচ্ছা ছিল, জাহাজ বা ট্রলারে নয়, সাঁতার কেটেই আসব। সাঁতার শেষ করতে পেরে তাই খুব ভালো লাগছে।’ ৪৩ জনের মধ্যে ৪২ জন এই সাঁতার শেষ করতে পেরেছেন। একজন পেশিতে টান লাগার (ক্র্যাম্প) কারণে সাঁতার শেষ করতে পারেননি।

গত এক মাস ধরে নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহরুল হক হলের পুকুরে সাঁতার অনুশীলন করেছেন ইলা। সমুদ্রের ঢেউ বা স্রোতে সাঁতারের অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না। তিনদিন আগে টেকনাফ পৌঁছে সমুদ্রে অনুশীলন করেছেন অন্যান্য সাঁতারুদের সঙ্গে। সোম ও মঙ্গলবার বিকেলে ইলা শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্রসৈকতে দল বেঁধে অনুশীলন করেছেন। ইলা জানান, অনুশীলনের সুফল পেয়েছেন। সাঁতারে প্রতিবন্ধকতা ছিল কি না জিজ্ঞেস করলে ইলা জানান, জেলিফিশের সমস্যা ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সমুদ্রসৈকত থেকে তাঁরা সাঁতার শুরু করেন। সাঁতারুদের দলে ছিলেন ২ নারীসহ ৪৩ জন। সাঁতার শেষ হয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উত্তর সৈকতে। আন্তর্জাতিক রীতি মেনে সাঁতারের আয়োজন করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল। সবার জন্য আলাদা করে নৌকা ও উদ্ধারকর্মী ছিল। নিরাপত্তা ও সহায়তা করার জন্য সঙ্গী হিসেবে ইলার সঙ্গে ছিলেন আশিক আহমেদ। তিনি গত পাঁচ বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার রেসকিউ দলের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইলা বললেন, তাঁর সাহায্য ছাড়া সাঁতার শেষ করতে পারতাম না। আব্দুল ইলার পৃষ্ঠপোষক ছিল মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’।

কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে স্রোতোধারাটির নাম ‘বাংলা চ্যানেল’। এই চ্যানেলের দূরত্ব ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার। এবার এই সাঁতারের আয়োজন করেছে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘এক্সট্রিম বাংলা’। আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘১৮তম বাংলা চ্যানেল সাঁতার ২০২৩’। আজ সকালে এর উদ্বোধন করেন টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরী।

বাংলা চ্যানেল সাঁতরে পাড়ি দেওয়া শেষে আব্দুল ইলা
ছবি: জাফর সাদেক

বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে এবং মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বাংলা চ্যানেলে প্রতি বছর সাঁতারের আয়োজন করে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার। বাংলা চ্যানেল সাঁতারের প্রধান সমন্বয়ক ও ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার। ২০ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার একক রেকর্ড গড়েছেন তিনি।

আব্দুল ইলা ছাড়া এবারের আয়োজনের সাঁতারুরা হলেন ফজলুল কবির সিনা, লিপটন সরকার, মো. মনিরুজ্জামান, আয়রনম্যানখ্যাত মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আরাফাত, শেখ মাহবুব উর রহমান, আল্লামা দিদার, সালাহ উদ্দিন, মো. কামাল হোসেন, জিহাদ হুসেন, আবাদুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন, মাহাদী হাসান, আবদুল্লাহ আল সাবিত, এস এম শারিয়ার মাহমুদ, হুমায়েদ ইছাহাক মুন, রচনা শর্মা, আতিকুল ইসলাম, ফজলে রাব্বি চৌধুরী, আবদুল মতিন, জয়তু দাস, মইজ উদ্দিন, ফরিদ আহমেদ খান, মোহাম্মদ তামিম পারভেজ, মুরাদ হোসেন, গোলাম হাফিজ, সবুজ কুমার বর্মণ, নাদিম মাহমুদ, মাহমুদুল হাসান, হাসান ইমাম, জামিল হোসেন, জাফর সাদেক, সৌরভ সমাদ্দার, মুশা আহমেদ, নাসির উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, আবুল্লাহ আল রোমান, সুমন বালা, ফারুক হোসেন, এম এস টি শোহাগী আক্তার, মো. নাজমুজ সাকিব ও উজ্জ্বল চৌধুরী। 

বঙ্গোপসাগরে দূরপাল্লার সাঁতারের উপযোগী ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করেন প্রয়াত কাজী হামিদুল হক। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সাঁতারে অংশ নিয়েছিলেন লিপটন সরকার, ফজলুল কবির সিনা ও সালমান সাইদ। ২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত দেশ বিদেশের অনেক মানুষ সাঁতরে পাড়ি দেন এই পথ।