জন্মদিনে আক্রমণ

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। সেদিন আবার আমার জন্মদিনও ছিল। জন্মদিন উপলক্ষে বন্ধুরা কী প্ল্যান করেছে, সেটা আমি জানতাম না। কিন্তু পরীক্ষার সময় জেনে গেলাম ওদের প্ল্যান। ওরা আমাকে পচা ডিম ছুড়ে মারবে। সেই সঙ্গে রংও মারবে। প্রায় ২০০টির মতো পচা ডিম নিয়ে এসেছিল তারা। সঙ্গে সাত–আট বোতল রং।

শুরুতে আমি বিশ্বাস করিনি। পরে দেখি ফুচকা বিক্রেতার দোকানে সেগুলো রেখে এসেছে ওরা।

সেদিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষা ছিল। ২৫টি নৈর্ব্যক্তিক মাত্র। পাঁচ মিনিটের ভেতর পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে গেলাম। এরপরই শুরু হলো আমার ওপর আক্রমণ। ঠিক তখন মাথায় বুদ্ধি এল। যেহেতু স্কুলে মাঠটা বড়, তাই সবাইকে একটু মাঠের মধ্যে ঘুরিয়ে আনি! দিলাম দৌড়। সবাই আমার পেছনে পেছনে দৌড় দিল। আমিও দৌড়াই। ওরাও দৌড়ায়। শুরুতে ১৫-১৬টি ডিম মেরে আমার সাদা শার্ট একেবারে রঙিন করে ফেলল ওরা। বেশ ঠান্ডা ছিল সেদিন। সঙ্গে একটু একটু বৃষ্টিও পড়ছিল। মাঠের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে ছিল। যেহেতু ডিমাবর্ষণে আমার শার্ট ময়লা হয়েই গেছে, তাই ওই পানির ওপর দিয়েই দৌড় দিয়েছিলাম। আক্রমণকারী বন্ধুরা তো আমার মতো দৌড়াতে পারছিল না। তারা তাদের প্যান্ট আর জুতা কাদাপানি থেকে বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত সতর্কভাবে দৌড়াচ্ছিল। ফলে তাদের গতি ছিল কম। তারা নিরুপায় হয়ে আমাকে দূর থেকে পচা ডিমগুলো ছুড়তে থাকল। কিন্তু একটিও আমার গায়ে লাগল না। বুঝলাম ওদের নিশানা ভালো না।

তারা এবার আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা করল। ততক্ষণে মনে হয় প্রায় ১০০-১২০টি ডিম শেষ। তারা যখন চারপাশ থেকে আসছে, তখন মনে হলো, এবার আমার খবর আছে! তবে আমি হাডুডু খেলার কৌশলে ওদের হাত থেকে বের হয়ে এসেছিলাম। তারপর আর রেহাই নেই। পরে আমি আর দৌড়াতে না পেরে আমাকে ঘিরে বাকি ডিমগুলো মারা শুরু করল এবং রং মারাও শেষ করল। তখন আমার অবস্থা মৃতপ্রায়। আমাদের এই জন্মদিন পালন দেখছিল স্কুলের বাকি ছাত্র-অভিভাবকেরা। তারা নিশ্চয় মজা পাচ্ছিল!

এরপর আক্রমণকারী বন্ধুরা আমাকে কোলে করে নিয়ে স্কুলের পেছনের পুকুরে ফেলে দিয়ে এল। ঠান্ডায় তো আমার অবস্থা খারাপ। এরপর ভেজা কাপড় নিয়ে আমাকে তারা স্কুলের সামনে নিয়ে গেল এবং কেক কেটে জন্মদিন উদ্‌যাপন করল।

খুব মজা হয়েছিল। কী বলব, এটাই বন্ধুত্ব। বন্ধু ছাড়া এসব হতোই না। বন্ধুদের নিয়ে অনেক মজার ঘটনাও ঘটেছে। তবে এটাই সেরা।

আরও পড়ুন