কিশোর আলোতে প্রকাশিত ‘অদ্রির অভিযান’ উপন্যাসের অদ্রির কথা মনে আছে? পাওয়ার প্ল্যান্ট ধ্বংসের মতো বিভিন্ন দুঃসাহসিক কাজ করে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিল সে। এই বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়ে আমাদের মধ্যে বেশ রোমাঞ্চ কাজ করেছিল। গল্পের সঙ্গে লেখক এত চমৎকারভাবে বিজ্ঞানটাও জুড়ে দিয়েছিলেন যে আমার মতো বিজ্ঞানবিমুখ মানুষও এই উপন্যাসের প্রতিটি পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত।
এই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির লেখক আসিফ মেহ্দী কিন্তু পুরোদস্তুর বিজ্ঞানের লোক। সম্প্রতি তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন। এই গবেষণার মূলে আছে আমাদের বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট। ২০৩০ সালের মধ্যে যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, তারই একটি হলো সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে যে জাতীয় টার্গেট নেওয়া হয়েছে, সেটিও বেশ ভালোভাবে উঠে আসবে লেখকের গবেষণায়।
আসিফ মেহ্দী স্নাতক করেছেন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ থেকে। কিন্তু বুয়েট থেকে অক্সফোর্ড যাত্রার মাঝখানে কেটে গেছে অনেক বছর। বুয়েটে পড়ার সময়ই তাঁর মনে এই বিষয়ে গবেষণার আগ্রহ জাগে। সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে শুরু করেন যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ম্যানেজমেন্ট পড়ার সময়। তারই ধারাবাহিকতায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করেন, এমন একজন অধ্যাপকের কাছে নিজের গবেষণা প্রস্তাবনা (রিসার্চ প্রপোজাল) ই–মেইল করে পাঠান। সেই প্রস্তাবনা ওই শিক্ষকের বেশ ভালো লাগে এবং এই বিষয়ে পিএইচডিতে তদারকি করতে তিনি রাজি হন। এরপর সেই গতানুগতিক ভর্তিপ্রক্রিয়া। কাগজপত্র জমা দিয়ে আবেদন করা, ভাইভা। অবশেষে ভর্তি।
অক্সফোর্ডের পিএইচডির যাত্রাটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটাও সহজ নয় আসলে। বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিএইচডির জন্য আসলেই ভালো মানের একটি রিসার্চ প্রপোজাল দরকার। অর্থাৎ কেউ কোনো বিষয়ে গবেষণা করতে চাইলে সেটি সুন্দর করে গুছিয়ে তুলে ধরতে হয়, যেন একজন অধ্যাপক বিষয়টিতে আগ্রহী হন।
পেশাগত দিক থেকে আসিফ মেহ্দী একজন প্রকৌশলী। কর্মরত বাংলাদেশ বেতারের গবেষণা ও গ্রহণ কেন্দ্রে উপস্টেশন প্রকৌশলী হিসেবে। দেশব্যাপী বেতারের রয়েছে বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সমিটার, স্টুডিও, মাস্টারকন্ট্রোল রুম (এমসিআর) এবং নানাবিধ ইলেট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ। এ কারণে পেশাগত জায়গায় তাঁর বিষয়টি নিয়ে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে লেখক মনে করেন। তিনি জানান, ‘বিশ্বজুড়ে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষ করে, পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এর বিকল্প নেই। বাংলাদেশ এ বিষয়ে এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমার শিক্ষা ও কর্মজীবন প্রকৌশল ক্ষেত্রে। তাই এ গবেষণা থেকে লব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতা আমার ক্যারিয়ারের অগ্রগতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক আসিফ মেহ্দীর জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করতে পারাটা নিঃসন্দেহে এক দারুণ সুযোগ। এটি তাঁর কর্মক্ষেত্রে যেমন ভূমিকা রাখবে, প্রভাব ফেলবে দেশের অগ্রগতিতেও। এতে তিনি বিজ্ঞানকেও আরও সহজভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন মানুষের কাছে। কে জানে, হয়তো আমার মতো বিজ্ঞানবিমুখ মানুষও তখন বিজ্ঞানের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে।