স্তব্ধ বিকেল

সূর্যাস্ত
অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

তিন ঘণ্টা ধরে ছাদে বসে আছি। পর্যবেক্ষণ করছি গ্রামের অপূর্ব সৌন্দর্য। নীরবতায় আচ্ছন্ন গ্রাম। মাঝেমধ্যে শোনা যাচ্ছে পাখিদের কলকাকলি। এরই মধ্যে বাবার ডাক। ছাদ থেকে নিচে গেলাম, ব্যাপার কী জানতে। বাবার ডাকার উদ্দেশ্য, বিস্তীর্ণ মাঠের মধ্যে হাঁটতে যাবেন। বেশ! আমিও যোগ দেওয়ার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করলাম। আমাদের গ্রামের বাড়ির ঠিক পেছনে বিস্তীর্ণ মাঠ। সেখানেই হাঁটতে যাব আজ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বেরিয়ে পড়লাম। সময়টা ছিল বিকেল চারটা কিংবা পাঁচটা। বিকেল বললে বোধহয় ভুল হবে, প্রায় সন্ধ্যা নামছে তখন। মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটছিলাম আমরা। চারপাশ কুয়াশায় আচ্ছন্ন। বিস্তৃত জনমানবশূন্য মাঠ। সন্ধ্যার সময় গ্রামবাসী বাইরে বের হন না। আকাশটা লাল আভায় ছেয়ে আছে। পাখিরা ফিরছে তাদের নিজ ঠিকানায়।

আরও পড়ুন

শীতকাল, তাই জমিতে এখন ধান নেই। একঝলকে প্রায় সম্পূর্ণ মাঠের এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তর দেখা যায়। একটি নিস্তেজ ট্রাক্টর পড়ে আছে মাঠের ঠিক মাঝখানে। আশপাশ থেকে ভেসে আসছে বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ডাক। গ্রামবাসী ধান উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে এই খেতে সবজি, ফল, শর্ষে, ডাল প্রভৃতি চাষ করেন। আবার কেউ কেউ পুকুর কেটে নানা প্রকার মাছ চাষ করেন। এ ছাড়া মুরগি, হাঁস ও কবুতর পোষার রীতি তো আছেই। চোখ পড়ল একটি সবজিবাগানে। বেশ সুসজ্জিত বাগানটি। এক পাশে চাষ হচ্ছে ডাল, আর অন্য পাশে ধনেপাতা। বাগান ঘেঁষে রয়েছে দুটি শিমগাছ।

আরও পড়ুন

এখন পাখিদের মতো আমাদেরও সময় হলো বাড়ি ফেরার। সূর্য অস্ত যাচ্ছে আর আমরা যাচ্ছি বাড়ি। এই সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করার অনুভূতিটাই অন্য রকম। খোলা আকাশের নিচে সূর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দেখার অনুভূতি আসলে বর্ণনা করা কঠিন। কাল যথারীতি আবার রওনা দিতে হবে ঢাকার উদ্দেশে। হয়তো এই বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম, অনন্য বিকেল ছিল এটা। কেবল একটা কথাই বারবার আমাকে ভাবিয়ে তুলছে, এই নীরবতা থেকে কোলাহলের মধ্যে প্রবেশ করে নতুন বছরটা শুরু করতে হবে নানান ব্যস্ততা দিয়ে, মুখোমুখি হতে হবে নানা চ্যালেঞ্জ। শুরু করতে হবে জীবনের ব্যস্ততার আরেকটি নতুন অধ্যায়।

মুবাশশিরা ওয়াজিহা আজিম

অষ্টম শ্রেণি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা