শৈশবের স্মৃতিমাখা দিন

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

আমি প্রথম চট্টগ্রাম যাই ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি। তখনো আমি হাঁটতে বা কথা বলতে পারতাম না। আমার বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক। আমরা থাকতাম কোয়ার্টারে। ছোট থেকে এই কোয়ার্টারেই বড় হয়েছি। এই কোয়ার্টার নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি।

বিশাল বড় মাঠ ছিল আমাদের কোয়ার্টারে। প্রতিদিন বিকেল হলেই মাঠে খেলতে যেতাম। বিকেল হলেই ডাকা শুরু করত আমার খেলার সঙ্গীরা, ‘রামিসা আপু, নিচে নামো।’ ওদের সঙ্গে খেলেই আমি বড় হয়েছি।

গ্রীষ্মকালে কখনোই আম, কাঁঠাল, লিচু কেনা লাগত না আমাদের। কোয়ার্টারের ভেতরেই আম, কাঁঠাল, লিচু ছিল ভরপুর। যখন আম খেতে ইচ্ছা করত, তখন একটা লাঠি নিয়ে গেলেই হলো। বিকেলে খেলার সময় যখন আমগাছ থেকে আম পড়ত, তখন দৌড়ানো শুরু করত সবাই, কে আগে আম নিতে পারে। আম খাওয়ার লোভে গাছেও উঠেছি। বিকেলবেলা সঙ্গীদের নিয়ে জামগাছের নিচে জাম কুড়াতাম। তারপর ধুয়ে লবণ-মরিচ দিয়ে খেতে সেই স্বাদ লাগত, আহ! অমৃত। তা ছাড়া ছিল বিলিম্বিগাছ। বেচারা বিলিম্বিগুলো আমাদের জন্য বড় হতে পারত না । গাছে বিলিম্বি দেখলেই দে দৌড়। আমি বড় ছিলাম দেখে সবাইকে পেড়ে দিতাম। তারপর বিলিম্বিগুলো ধুয়ে লবণ-মরিচ দিয়ে খেতে খুব ভালো লাগত।

গ্রীষ্মকালে যখন কালবৈশাখী শুরু হতো, তখন আমি, আমার বোন ও দাদা মিলে বারান্দায় বসে গল্প করতাম আর চা-বিস্কুট খেতাম। দাদা তার ছোটবেলার গল্প বলত, মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলত। শুনতে খুব ভালো লাগত গল্পগুলো।

কোয়ার্টারের মানুষগুলো খুব ভালো ছিল। খুব মিল ছিল সবার মধ্যে। একজনের বিপদে এগিয়ে আসত আরেকজন। দেখে মনে হতো সবাই একটাই পরিবারের অংশ।

বছরের শুরুতে কোয়ার্টারের মাঠে পিকনিক হতো। ছোটরা মাঠে খেলত। গল্প করত বড়রা। বড় ও ছোট সবার জন্য বিভিন্ন খেলার আয়োজন থাকত। ছোটরা যারা পুরস্কার পায়নি, তাদের জন্য উপহারের ব্যবস্থা ছিল, যেন কেউ মন খারাপ না করে। সবশেষে সবাই মিলে খেতে বসতাম। প্রতিবছর সবাই মিলে বান্দরবান, রাঙামাটি ঘুরতে যেতাম। খুব মজা হতো সেখানে।

ঈদের সময় সকালবেলা গোসল করে নতুন জামা পরে বের হতাম আমার বন্ধু-প্রতিবেশীদের বাসায় যাওয়ার জন্য। সবার বাসায় ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে যেত। ছোট থেকেই এই কোয়ার্টারে ছিলাম। ১৩ বছরের বেশি স্মৃতি জমে আছে এই কোয়ার্টার নিয়ে। আজ দুই বছর হলো ঢাকায় এসেছি, কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনো মনে নাড়া দেয়। এখন আর বিকেলবেলা কেউ ডাকতে আসে না। গ্রীষ্মকালে আর জাম কুড়ানো হয় না। আর কালবৈশাখী? ঢাকায় তো ঠিকমতো বৃষ্টির দেখাই পাওয়া যায় না, কালবৈশাখী তো দূরের কথা! ভুলতে পারি না সেখানে কাটানো সেই মধুর দিনগুলো। কত স্মৃতি এই কোয়ার্টারের আনাচকানাচে! ফিরে যেতে চাই সেই কোয়ার্টারে, যেখানে জমে আছে হাজারো স্মৃতি।

লেখক: শিক্ষার্থী, নবম শ্রেণি, শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

আরও পড়ুন