প্রাথমিক গণিত
মূলদ, অমূলদ ও বাস্তব সংখ্যা যেভাবে চিনব
গণিত আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ। গণিতে ভালো করতে হলে এর ভিত্তি মজবুত হতে হবে। ভিত্তি দুর্বল হলে গণিত দেখলে ভয় লাগে। তোমাদের গণিতভীতি দূর করতে এবং ভিত্তি মজবুত করতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে ‘প্রাথমিক গণিত’।
এর আগে আমরা প্রাকৃতিক সংখ্যা, স্বাভাবিক সংখ্যা ও পূর্ণসংখ্যা শিখেছি। আজ শিখব বাস্তব সংখ্যা। এই ধারাবাহিকতায় শিখব মূলদ ও অমূলদ সংখ্যা। প্রথমে দেখা যাক, বাস্তব সংখ্যা কী? তুমি যে কোনো একটা সংখ্যা বা অঙ্ক কল্পনা করো। যা-ই কল্পনা করো না কেন, ওটা বাস্তব সংখ্যা। একটি সংখ্যারেখাও কল্পনা করতে পারো। সংখ্যারেখার মাঝে থাকে শূন্য (০)। এর ডানে ধনাত্মক সংখ্যা ও বাঁয়ে ঋণাত্মক সংখ্যা। এই সবই বাস্তব সংখ্যা।
বাস্তব সংখ্যা আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। মূলদ সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যা। যেকোনো পূর্ণসংখ্যাই মূলদ সংখ্যা। মানে ১, ২, ৯০, ৫২৮৫—সবই পূর্ণসংখায়। আর পূর্ণসংখ্যা মানেই তা মূলদ সংখ্যা। তবে দশমিক সংখ্যাও মূলদ সংখ্যা হতে পারে। মূলদ সংখ্যা হওয়ার দুটি শর্ত আছে। প্রথমত, দশমিক সংখ্যা যদি সসীম হয়, মানে দশমিকের যদি শেষ থাকে, তাহলে সেটা মূলদ সংখ্যা। যেমন ১.৫৪ বা ৬.৩৬৯। দ্বিতীয়ত, দশমিক সংখ্যার মধ্যে যদি ধারাবাহিকতা থাকে, তাহলেও সেটি মূলদ সংখ্যা হবে। একে গণিতের ভাষায় পৌনঃপৌনিক বলে। যেমন ১.৬৩৬৩৬৩৬৩৬৩৬৩ সংখ্যার মধ্যে ১-এর পরে সবগুলো ৬৩, ৬৩, ৬৩… আকারে আছে। তাই এটিও মূলদ সংখ্যা।
মূলদ সংখ্যার সংজ্ঞাও দেওয়া যায়। তবে তা ওপরের উদাহরণের মতো হয়তো সহজ লাগবে না। পাঠ্যবইয়ের ভাষায় বললে, যে সংখ্যাকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায়, তাকে মূলদ সংখ্যা বলে। অর্থাৎ যে সংখ্যাকে ভগ্নাংশ আকারে (p/q আকারে) প্রকাশ করা যায়, তাকে মূলদ সংখ্যা বলে। তবে এখানে p ও q দুটিকেই হতে হবে পূর্ণসংখ্যা এবং q-এর মান ০ হতে পারবে না। বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলা দরকার।
ধরো, ১/৪ একটা ভগ্নাংশ। এর ওপরে আছে ১ ও নিচে ৪। এই ১ ও ৪-কে p ও q আকারে প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে ওপরের সংজ্ঞায়। তুমি চাইলে p ও q-এর পরিবর্তে অন্য যেকোনো অ্যালফাবেট বা বর্ণ ধরতে পারো। তবে q-এর পরিবর্তে মানে ভগ্নাংশের নিচে শুধু ০ দেওয়া যাবে না। এককথায় ০ দিয়ে কিছু ভাগ করা যাবে না। কারণ, ০ দিয়ে ভাগ করলে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। পরের পর্বে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
যাহোক, মূল আলোচনায় ফিরি। ১/৪-কে আমরা মূলদ সংখ্যা বলছি। কিন্তু ওপরের কথার সঙ্গে একটু মিলিয়ে দেখতে চাই, আসলেই ১/৪ মূলদ সংখ্যা কি না। ১-কে ৪ দিয়ে ভাগ করলে হয় ০.২৫। অর্থাৎ এই ভগ্নাংশের শেষ আছে, তাই এটি মূলদ সংখ্যা। আবার ২/৩ একটি মূলদ সংখ্যা। ২ ÷ ৩ = ০.৬৬৬…। এই দশমিকের পরে ৬-এর কোনো শেষ নেই। কিন্তু এখানে সবগুলো সংখ্যাই ৬, মানে একই সংখ্যা বারবার আসছে। তাই এটিই একটা মূলদ সংখ্যা।
আর অমূলদ সংখ্যা হলো মূলদের বিপরীত। এ ক্ষেত্রে দশমিক সংখ্যার কোনো শেষ থাকবে না। মানে অসীম হবে। একই সংখ্যা বারবার আসবে না। অমূলদ সংখ্যাকে দুটি পূর্ণসংখ্যার ভাগ আকারেও প্রকাশ করা যাবে না। অমূলদ সংখ্যার শেষে সবসময় থ্রি ডট (…) দিতে হবে। এই ডট মানে সামনে আরও সংখ্যা আছে যার কোনো শেষ নেই। যেমন ৫.৬৩৯৮৫৪১২৫৮৯৬৪…একটি অমূলদ সংখ্যা, কারণ এই সংখ্যার কোনো শেষ নেই। আবার দশমিকের পরের অঙ্কগুলোর মধ্যে কোনো মিলও নেই।
অমূলদ সংখ্যাকে রুট (বর্গমূল) আকারে প্রকাশ করা হয়। যেসব পূর্ণসংখ্যাকে বর্গমূল আকারে প্রকাশ করা যায় না, সেটাই অমূলদ সংখ্যা। যেমন √২ একটা অমূলদ সংখ্যা। একই সঙ্গে √২-এর বিপরিত (-√২) একটা অমূলদ সংখ্যা। √২-এর মান পাবে ক্যালকুলেটরে ১.৪১৪২১৩৫৬২৩৭…। এরপর আর ক্যালকুলেটরে ধরে না। কিন্তু এর পরে এই মান আরও অনন্তকাল লিখেও শেষ করতে পারবে না। তাই এটি একটি অমূলদ সংখ্যা। যেমন পাই-এর মান। ৩.১৪১৫৯… এভাবে চলতেই থাকে। এটি একটি অমূলদ সংখ্যা।
তবে √৪ কিন্তু অমূলদ সংখ্যা নয়। কারণ √৪ = ২, যা পূর্ণসংখ্যা। অর্থাৎ কোনো অঙ্ক বা সংখ্যাকে রুট বা বর্গমূল করলে যদি পূর্ণসংখ্যা পাওয়া যায়, তাহলে সেটি অমূলদ সংখ্যা হবে না। যেমন √৯, √১৬, √৩৬ ইত্যাদি। কারণ এগুলোকে বর্গমূল করলে যথাক্রমে √৯ = ৩, √১৬ = ৪ ও √৩৬ = ৬ পাওয়া যাবে।
π ও e দুটি জনপ্রিয় অমূলদ সংখ্যা। গণিতে এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। তোমরা হয়তো ইতিমধ্যে পাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। এই দুটির কোনোটির মান লিখে শেষ করা যায় না। π = ৩.১৪১৫৯২৬৫৪… এবং e = ২.৭১৮২৮১৮২৮…। এগুলোর যেমন কোনো শেষ নেই তেমনি দশমিকের পরে কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন নেই।
এবার একনজরে বাস্তব সংখ্যার পরিবারের সঙ্গে একটু পরিচিত হওয়া যাক। নিচের ছবিটি দেখলেই বুঝতে পারবে আমি কি বলতে চাইছি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সবার ওপরে রয়েছে বাস্তব সংখ্যা। সেটাকে দুই ভাগ ভাগ করা হয়েছে— মূলদ ও অমূলদ। এই দুটি সংখ্যা নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করলাম। বাকি পূর্ণসংখ্যা, প্রাকৃতিক সংখ্যা ও স্বাভাবিক সংখ্যা নিয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে। অর্থাৎ এই পর্বের মাধ্যমে আমরা বাস্তব সংখ্যা সম্পূর্ণ শেষ করলাম।
এখন তোমাদের একটু পরীক্ষা নেব। নিচে কিছু সংখ্যা আছে। সেগুলো কোন ধরণের সংখ্যা তা তোমরা বলবে।
ক. ০
খ. ০.৭৫
গ. -২৫
ঘ. ৩৬
ঙ. -০.৩৫
চ. ২/৩
ছ. -১৬২/৩৪১
জ. √১১৭০
সমাধান
ক. ০ স্বাভাবিক সংখ্যা, পূর্ণসংখ্যা, মূলদ সংখ্যা ও বাস্তব সংখ্যা
খ. ০.৭৫ মূলদ সংখ্যা ও বাস্তব সংখ্যা
গ. -২৫ পূর্ণসংখ্যা, মূলদ সংখ্যা ও বাস্তব সংখ্যা
ঘ. ৩৬ প্রাকৃতিক সংখ্যা, স্বাভাবিক সংখ্যা, পূর্ণসংখ্যা, মূলদ সংখ্যা ও বাস্তব সংখ্যা
ঙ. -০.৩৫ মূলদ ও বাস্তব সংখ্যা
চ. ২/৩ মূলদ ও বাস্তব সংখ্যা
ছ. -১৬২/৩৪১ মূলদ ও বাস্তব সংখ্যা
জ. √১১৭০ অমূলদ ও বাস্তব সংখ্যা