ফেলা আসা স্কুলের স্মৃতি

২০ ডিসেম্বর ২০২২। যেদিন ওই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। বেশ নার্ভাস লাগছিল। কারণ, আগে কোনো ভর্তি পরীক্ষা দিইনি। কেমন প্রশ্ন আসবে, তা সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। ‍ওই দিন স্কুলটাকে কত বিশাল মনে হয়েছিল! তারই তিনতলার একটা রুমে বসে আমরা অপেক্ষা করছিলাম, কখন ভাইভার জন্য ডাকবে। সেদিনই জীবনের প্রথম ভাইভা দিলাম। এত্ত সহজ প্রশ্নগুলোও কেমন জানি তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। পরীক্ষা-টরীক্ষা দিয়ে বাসায় এলাম। কয় দিন পর শুনলাম, সিলেক্ট হয়ে গেছি! সেই থেকে শুরু, আমার আরসিপিএসসির সঙ্গে পথচলা।

প্রথম কিছুদিন একটু একা লাগলেও একদিন একটা মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো, যার সঙ্গে ভাইভার দিনই পরিচয় হয়েছিল, তাজকিয়া। তার কিছুদিন পর আরও একজনের সঙ্গে কথা হলো, যার নাম ফাতেমা। তার পর থেকে তিনজন সব সময় একসঙ্গেই থাকতাম। কত্ত মজা করেছি দিনগুলোতে! স্কুলে থেকেও কীভাবে ক্লাস ফাঁকি দেওয়া যায়, তা তো ওদের কাছ থেকেই শিখেছিলাম। তিনজনে মিলে বেতন দেওয়ার কিউতে দাঁড়িয়ে থাকার ভান করে ফাজলামি করে বেড়াতাম। ক্লাসের মাঝখানে কীভাবে টিচারদের থেকে লুকিয়ে কথা বলা যায়, তা বোধ হয় আমাদের চেয়ে ভালো কেউ জানত না। স্কুলের লাইব্রেরিতে বসে অপাঠ্যপুস্তক পড়া, যে বইয়ের ডাবল-ট্রিপল কপি আছে, তার একটা নিয়ে টানাটানি করা, একজনের টিফিন বাকি দুজন মিলে ফিনিশ করে দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ছিল আমাদের দৈনন্দিন কাজ (বা অকাজ)। এই ছোট ফাজলামিগুলো যেন স্কুলের আনন্দটাকে আরও বাড়িয়ে দিত। মাত্র একটা বছর অথচ এর মধ্যেই স্কুলটা, স্কুলের ফ্রেন্ড, বাগান-লাইব্রেরি—সবকিছুই কত আপন হয়ে গিয়েছিল!

আরও পড়ুন

আমি যে স্কুলটা ছেড়ে চলে আসব, তা কেউই বুঝতে পারেনি শেষ দিনে। আমি নিজেও তো জানতাম না! তারপরও কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছিল। হয়তো এটুকু অনুভব করতে পারছিলাম যে এখানে, এই স্কুলটাতে আর আসা হবে না। আগামী বছরের সেভেনের হাজিরা খাতায় আমার নামটা লেখা হবে না।

এখনো সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে ঠিকই, তবু তো আর একসঙ্গে ক্লাস করা হচ্ছে না। ক্লাসের খুনসুটি, গুঁতোগুঁতিগুলোর মজা কি আর মোবাইলের মাধ্যমে পাওয়া যায়?

সেই স্কুলের যত আনন্দের স্মৃতি আছে, সেগুলোকে নতুনভাবে সাজাতে আমি আবার ওই স্কুলে ফিরে যেতে চাই, আরসিপিএসসিতে, রামু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ‍ও কলেজে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সপ্তম শ্রেণি, আবুল কালাম আজাদ উচ্চবিদ্যালয়, কক্সবাজার

আরও পড়ুন