হাসতে গিয়ে কি কেউ মারা যেতে পারে

হাসি ক্ষতিকর নয়আঁকা: তুলি

বন্ধুদের সঙ্গে গল্পের আসরে বসে প্রায়ই আমরা হাসিতে গড়িয়ে পড়ি। অট্টহাসিতে মাঝেমধ্যে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। প্রায়ই বলি, ‘হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি।’ কিন্তু এ কথাটি কি শুধুই অতিরঞ্জন? নাকি কিছুটা হলেও এ কথার সত্যতা আছে? আসলেই কি মানুষ হাসতে হাসতে মরে যেতে পারে?

বিজ্ঞানীদের মতে, দুর্ভাগ্যবশত মানুষ হাসতে হাসতে মারা যেতে পারেন। অন্তত প্রযুক্তিগতভাবে এটা সম্ভব। অতীতে মানুষের হাসতে হাসতে মারা যাওয়ার রেকর্ডও আছে।

অট্টহাসিতে জ্ঞান হারানোর ঘটনা প্রথম ঘটে ১৯৯৭ সালে। ৬২ বছর বয়স্ক এক লোক সিনফিল্ড নামের একটি টেলিভিশন শো-তে গিয়ে বেশ কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ছিলেন ওই ব্যক্তি। পরে ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত হাসার কারণে তিনি জ্ঞান হারিয়েছেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে ওলে বেন্টজেন নামের ৫৬ বছর বয়সী এক ড্যানিশ অডিওলোজিস্ট হাসতে হাসতে মারা গেছেন। একই ঘটনা আছে ১৯৭৫, ১৯৬৫, ১৯২০, ১৬৬০, ১৫৫৬ ও ১৪১০ সালেও। ফলে অট্টহাসিতে মারা যাওয়ার সংখ্যাটা খুব বেশি না হলেও অন্তত সম্ভব। কিন্তু অতিরিক্ত হাসির কারণে কেন মৃত্যু হয়?

এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এমন হাসিখুশি মুখগুলো দেখে মন জুড়িয়ে যায়
ছবি: প্রথম আলো

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কার্ডিওলজির প্রধান টড কোহেন। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে রোগীর মৃত্যু না হলেও কয়েক মিনিট অজ্ঞান থাকতে পারে। তবে অট্টহাসির কারণে হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে।

২০০৯ সালে ১০৫ জন শ্বাসকষ্টের রোগী নিয়ে গবেষণা করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৪০ ভাগ রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়েছিল হাসির কারণে। আশপাশে ইনহেলার না থাকায় সমস্যা আরও জটিল হয়।

কিন্তু অতিরিক্ত হাসলে মৃত্যু বা শ্বাসকষ্ট কেন হয়? টড কোহেনের মতে, হাসার সময় বুক ওঠানামা করে। বুকের ভেতরে চাপের পরিবর্তন হয়। অতিরিক্ত হাসির কারণে রক্তচাপ কমে যায়। ফলে ফুসফুস বা হৃৎপিণ্ডের মতো স্নায়ুতন্ত্র থেকে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছাতে পারে না। এতে মানুষ সাময়িকভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া রোগীর আগে থেকে উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্‌রোগ থাকলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া হেলথের হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ মেগান কামাথ বলেন, তাত্ত্বিকভাবে অট্টহাসির কারণে স্বরতন্ত্রের ওপর আকস্মিক টান পড়তে পারে। হাসির সময় যথেষ্ট অক্সিজেন না পেলে শ্বাসরুদ্ধ হতে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তি। তবে এতে মৃত্যুর আশঙ্কা খুব কম। তা ছাড়া এখনো কোনো স্বাস্থ্যবান মানুষ হাসতে হাসতে মারা গেছেন বলে শোনা যায়নি।

আসলে হাসি ক্ষতিকর নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাসা প্রয়োজন। তা ছাড়া একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন গড়ে ২০ বার হাসেন। শিশুদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা যোজন যোজন বেশি। তারা প্রতিদিন গড়ে ৪০০ বার হাসে। তাই হাসতে কোনো মানা নেই। তবে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ বা ইনহেলার ব্যবহারকারী হলে টানা অনেক সময় অট্টহাসি না হাসাই উত্তম।