আমার বিড়ালটা যখন বেশ ছোট, তখন ওকে একবার এক কুকুর কামড় দিল। কুকুরের কামড়ে পেট ছোট্ট বিড়ালটার পেট গেল ফুটো হয়ে। বিড়ালটাকে একটা জুতার বাক্সে নিয়ে আমি গেলাম হাসপাতালে। রিসিপশনে বসা লোকটা বললেন, ‘বাক্সের ঢাকনাটা খুলে দেন। কাটা জায়গাটা খোলা থাক।’ আমি বললাম, ‘বাক্স খুললে যদি দৌড় দেয়?’ লোকটা বললেন, ‘এর ইনজুরির যে অবস্থা, দৌড়ানোর মতো শক্তি নাই। খোলেন আপনি।’ আমি ঢাকনা খুললাম। বিড়াল দিল দৌড়। তারপর আর কেউ তাকে ধরতে পারে না। ফুটো পেট নিয়ে হাসপাতালের ভেতর এদিক–ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে বিড়ালটা। বেশ কিছুক্ষণ দৌড়ঝাঁপ করার পর বহু কষ্টে বিড়ালটাকে ধরা গেল। ওকে নিয়ে গেলাম ভেতরে।
ইনজেকশন, কাটা–ছেঁড়ার পর কেমন যেন হয়ে গেল বিড়ালটা। আগের মতো চঞ্চল আর নেই। চুপচাপ হয়ে গেল একদম। টানা চার দিন তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম আমি। তারপর সিরিয়াল জটিলতায় হাসপাতাল বাদ দিয়ে নিজেই ড্রেসিং করা শুরু করলাম বাসায়। অনেকেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল, কিন্তু কদিন পর ঠিকই সুস্থ হয়ে গেল বিড়াল। তবে দুষ্টুমি আর করে না। আগে যে বিড়াল ছিল বিরাট কোহলি, সে একবারে হয়ে গেল চেতেশ্বর পূজারা। এককথায় বলতে গেলে, ঠান্ডা মাথার বিড়ালে পরিণত হলো সে। খাবার দিলে খায়। না দিলে চুপচাপ রান্নাঘরের সামনে বসে থাকে। ক্যাওম্যাও করে না। জানে, ‘চিল্লাইয়া মার্কেট পাওয়া যাবে না’। একটু দেরি হলেও খাবার আসবেই।
তবে বুদ্ধিও একটু কমই ছিল মনে হয় বিড়ালটার। গত বছর বাচ্চা দিল চারটা। বাচ্চা রাখল লম্বা একটা বাক্সের ভেতর। আমি এত সুন্দর করে ঘর বানিয়ে দিলাম, সেটা ওর পছন্দ হলো না। ওপর থেকে লাফ দিয়ে বাক্সে গিয়ে পড়ে। মায়ের চাপ খেয়ে চারটা বাচ্চাই মারা গেল একে একে। তাতে অবশ্য একটুও কাঁদল না বিড়ালটা। কয়েকদিন চুপচাপ বসে থাকল রান্নাঘরের সামনে। আমার আম্মা বলল, ‘এ তো নিজের বাচ্চা রাখতে পারল না। এমন ব্যাক্কল বিড়াল।’
দুই সপ্তাহ আগে আবার বাচ্চা দিল বিড়ালটা। এবার অবশ্য তিনটা বাচ্চাই ঠিক আছে। মোটামুটি সারাদিন বাচ্চাদের কাছেই বসে থাকে বিড়ালটা। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলাম, সে নেই। বাচ্চা রেখে তো যাওয়ার কথা নয়। অফিসে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলাম। রেস্কিউ করা বিড়াল। নাম রাখা হয়নি। ‘বিড়াল কই?’, ‘বিড়ালকে খাওয়া দিয়েছ?’ বলতে বলতে ‘বিড়াল’ই হয়ে উঠেছিল ওর নাম। তবে আমি শিষ বাজালেই সাড়া দেয় বিড়ালটা। শিষ বাজিয়ে বাসার আশেপাশে খুঁজলাম কিছুক্ষণ, পেলাম না। অফিসে গিয়ে কিশোর আলোর কর্মী আকিবকে বললাম, ‘বাচ্চা রেখে বিড়াল পালিয়ে গেল নাকি?’ বিকেলে আম্মা ফোন করে বলল, ‘বিড়ালটা তো এখনও আসে নাই।’ তখন কিশোর আলোর সাবেক নির্বাহী সম্পাদক সিমু ভাইকে বিষয়টা জানালাম। ভাই বললেন, ‘বাচ্চা রেখে তো যাওয়ার কথা নয়। কোথাও হয়তো আটকা পড়েছে বা আঘাত পেয়েছে।’ সিমু ভাইয়ের ধারণাই যে ঠিক তা টের পেলাম রাতে। আম্মা ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘বিড়ালটাকে মেরে ফেলে রেখেছে। দোকানদার বলল, গেট খোলা পেয়ে কুকুর নাকি মেরেছে।’ ফোন রেখে বাসার দিকে এগোলাম দ্রুত। কী আশ্চর্য, এই দফা বাচ্চাগুলা বেঁচে আছে, বাঁচল না বিড়ালটাই।