নীরবে পড়া ভালো, নাকি শব্দ করে
তুমি কীভাবে পড়বে? শব্দ করে, নাকি নীরবে? কোনটা ভালো।
আমরা ছোটবেলায় শব্দ করে পড়তাম। আমাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসের বাইরে খোলা আকাশের নিচে দাঁড় করাতেন শিক্ষকেরা। তারপর জোরে জোরে নামতা পড়া হতো। এখনো অনেকেই জোরে জোরে পড়ে।
তবে বেশির ভাগ বয়স্ক মানুষ পড়েন নিঃশব্দে।
সরবে পড়া ভালো, নাকি নীরবে। বিবিসিতে প্রকাশিত এক খবরে বলা হচ্ছে, শব্দ করে পড়া ভালো।
বিবিসি বলছে, ইতিহাসে পড়া জিনিসটা মানেই ছিল শব্দ করে পড়া। প্রায় চার হাজার বছর আগে প্রাচীন ইরাক ও সিরিয়ায় লেখা মাটির ফলকগুলোয় যা লেখা ছিল, তা ‘পড়তে বলার’ অর্থ ছিল ‘চিৎকার করা’ বা ‘শ্রবণ করা’।
গবেষকদের মতে, উচ্চ স্বরে পড়লে মনে থাকে বেশি।
কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনোবিজ্ঞানী কলিন ম্যাকলিওড স্মৃতিশক্তি ও জোরে পড়ার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন।
সেই গবেষণায় উঠে এসেছে, কোনো কিছু জোরে জোরে পড়লে তা স্মৃতি ধরে রাখে সহজে। এটা কেবল শিশুদের বেলায় প্রযোজ্য নয়, বড়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
অস্ট্রেলিয়ায় একটি গবেষণায় ৭ থেকে ১০ বছর বয়সী একটি দলকে শব্দের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। কিছু শব্দ নীরবে পড়তে বলা হয়েছিল। এবং অন্যগুলোকে উচ্চ স্বরে পড়তে বলা হয়েছিল।
পরে এই ছেলেমেয়েরা উচ্চ স্বরে পড়া শব্দগুলোর ৮৭ শতাংশ সঠিকভাবে চিনতে পেরেছিল। কিন্তু নীরবে পড়া শব্দগুলোর মধ্যে তারা মাত্র ৭০ শতাংশ মনে রাখতে পেরেছিল।
অন্য একটি গবেষণায় ৬৭ থেকে ৮৮ বছর বয়সী ব্যক্তিদের একই কাজ দেওয়া হয়েছিল—শব্দগুলো নীরবে বা উচ্চ স্বরে পড়া। তাঁরা উচ্চ স্বরে পড়া শব্দগুলোর ২৭ শতাংশ মনে করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু যেগুলো তাঁরা নীরবে পড়েছিলেন, তার মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মনে রাখতে পেরেছিলেন। যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তাঁরা কোনটি চিনতে পেরেছে, তাঁরা উচ্চ স্বরে পড়া শব্দগুলোর ৮০ শতাংশ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে নীরবে পড়া শব্দগুলোর মধ্যে মাত্র ৬০ শতাংশ তাঁরা চিনতে পেরেছিলেন।
এই জন্য কোনো কিছু মনে রাখার জন্য পড়তে হলে তুমি জোরে জেরে শব্দ করে পড়তে পারো। কোনো কিছু জোরে জোরে পড়লে তা তোমার স্মৃতিতে থাকবে সহজে ও দীর্ঘদিন।
শুধু তা–ই নয়, জোরে জোরে পড়লে তোমার উচ্চারণ ভালো হবে। পরে কথা বলতে, বক্তৃতা করতে, কোথাও কোনো কিছু উপস্থাপন করতে এই জোরে পড়া তোমার কাজে লাগবে।
তবে মুখস্থ করার আগে জিনিসটা বুঝতে হবে। না বুঝে কোনো কিছু মুখস্থ করা উচিত নয়। আমরা সাধারণত মুখস্থ করাকে নিরুৎসাহিত করি। কিন্তু কোনো কোনো জিনিস মুখস্থ রাখতেই হয়। যেমন নামতা!
তিন-চারে কত হয়, তা যদি তোমাকে ক্যালকুলেটর টিপে বের করতে হয়, সেটা খুব কাজের কথা হলো না। তেমনি, তুমি মঞ্চে উঠেছ নাটক করতে, সংলাপ মুখস্থ না করে উঠলে মারা পড়বে। গণিতে অনেক সূত্র মুখস্থ রাখতেই হয়। কবিতা মুখস্থ রাখাও খুব ভালো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা ছড়া আছে। ছড়াটা এ রকম:
ভোলানাথ লিখেছিল
তিন-চারে নব্বই
গণিতের মার্কায়/কাটা গেল সর্বই।
তিন-চারে বারো হয়,
মাস্টার তারে কয়;
‘লিখেছিনু ঢের বেশি’ এই তার গর্বই।
তিন-চারে যে ১২ হয়, এটা আমরা মুখস্থ বলে দিই। কাজেই কিছু কিছু জিনিস আমাদের মুখস্থ রাখতেই হয়। যদি জোরে জোরে নামতা পড়ি, তা হলে তা সহজেই মনে রাখা যাবে।