মোনালিসার সেতুরহস্য

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত ছবি মোনালিসাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের সীমা নেই। মোনালিসার হাসি ভুবনমোহিনী। ল্যুভর মিউজিয়ামে ঘুরতে যাওয়া প্রায় সবাই মোনালিসার রহস্যময় হাসিকে প্রাধান্য দেন। ছবিটির দিকে তাকালে দেখা যায় মোনালিসার মনোমুগ্ধকর চোখ আর তার মুখে আছে রহস্যময় হাসি। এটিই সাধারণভাবে মোনালিসা ছবিটির পরিচয়। সাধারণ দর্শকের মতো গবেষকেরাও মোনালিসা নিয়ে দারুণ আগ্রহী। মোনালিসা দেখতে গিয়ে সাধারণভাবে যেসব দিক সহজে চোখে পড়ে না, গবেষকেরা দীর্ঘ সময় ধরে সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

মোনালিসা এমন এক রহস্যময় ছবি, যার মধ্যে সব সময়ই নতুন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব। মোনালিসার ছবিটি ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যায় একটি সেতু। ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড বা পটভূমিতে এই সেতুর অবস্থান। মোনালিসার পেছনে অনেক দূরে একটি খিলানযুক্ত সেতু দেখা যায়।

বাস্তবে সেতুটি ঠিক কোথায় অবস্থিত, দীর্ঘ সময় ধরে এটি একটি রহস্য হয়েই ছিল। জোর সম্ভাবনা আছে, সেতুটি খুঁজে পাওয়া গেছে। সেতুরহস্যের সমাধান হয়েছে।

শিল্প–ইতিহাসবিদ সিলভানো ভ্যান্সেলি রেনেসাঁ যুগের ছবি নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি দাবি করেছেন, ইতালির পার্বত্য অঞ্চল তাসকানির লাতেরিনা শহরে একটি প্রাচীন পাথরের সেতুর অবশিষ্ট একটি খিলানই মোনালিসার পটভূমির সেতু। তাসকানি শহরেই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির জন্মস্থান।

সেতুর এই কাঠামো কমপক্ষে দুই হাজার বছর পুরোনো। প্রাচীন রোমান ও এটরুস্কান আমলে সেতুটি তৈরি। ভার্চ্যুয়ালি আবারও তৈরি করা হয়েছে সেতুটি। ভার্চ্যুয়াল ছবি দেখে অনুমান করা যায়, ১৬ শতকে মোনালিসা আঁকার সময় পুরো সেতুটি কেমন ছিল। পুরোনো নথি থেকে ধারণা করা হয়, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ১৫০১ থেকে ১৫০৭ সাল পর্যন্ত এখানে কাজ করেছিলেন।

এই রহস্য উদ্ধারের পর মোনালিসা ব্রিজের মধ্যযুগীয় শহর লাতেরিনায় বেশ গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা দাবি করছেন, শহরটি এত দিন ঘুমিয়ে ছিল। এখন পর্যটকদের আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

আসলেই কি পর্যটকেরা মোনালিসার সেতু দেখতে ছুটে আসবেন? এমন না-ও ঘটতে পারে। যদিও সেতুটির অবশিষ্ট অংশ মোনালিসার বাম কাঁধের পেছনের অংশের সঙ্গে মিল আছে। তবু ভিন্নমতের কিছু শিল্পবিশেষজ্ঞ যুক্তি দেন, মোনালিসার ছবির সেতুটির সঙ্গে অন্য আরেকটি সেতুর মিল আছে। লাতেরিনা শহরের নদীর উজানে কয়েক মাইল গেলে পাওয়া যায় সেই সেতু। সেতুটি বুরিয়ানো সেতু হিসেবে পরিচিত। এখনো মানুষ এই সেতু ব্যবহার করে।

বছরের পর বছর ধরে বিখ্যাত ইতিহাসবিদেরা ভিঞ্চির কাজ বিশ্লেষণ করেছেন। এর মধ্যে অধ্যাপক রেনাটো ভিসকোভো বলেন, এর মধ্যে ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি খালি চোখেও এটি দেখা যায়। ব্রিজটির বক্রতা পেইন্টিংয়ের সঙ্গে মিলে যায়। অন্য সেতুর খিলানগুলোর বক্রতা মোনালিসার সেতুর তুলনায় অনেক বেশি খাড়া ও উঁচু।

রেনাটো ভিসকোভোর যুক্তি, বুরিয়ানো ব্রিজের নিচের নদীর আকৃতি এবং দিকও চিত্রটির সঙ্গে মিলে যায়। পাহাড়ের ওপর থেকে দেখলে ৫০০ বছর আগে ভিঞ্চির সময়ের ব্রিজের মতোই দেখা যায়। এই শহরের দুর্গে বসে তিনি মোনালিসা এঁকেছিলেন। দুর্গের অতিথি হিসেবে ছিলেন তিনি।

LigaDue ds SI

অধ্যাপক ভিসকোভো অবশ্য দাবি করেন, এটি পর্যটক আকর্ষণের জন্য ইতিহাস পরিবর্তনের চেষ্টা। ভিঞ্চির মোনালিসার পটভূমি কোনো বাস্তব স্থান ছিল না। এটি একটি রূপক সেতু। প্রকৃতি এবং নারীর রূপের মধ্যে সংযোগ হিসেবে সেতুটি আঁকা হয়েছে।

তবে এই বিতর্কে আর কিছু হোক না হোক, মোনালিসাকে নিয়ে আগ্রহ বাড়বে আরও। প্রতিবছর ১০ মিলিয়নের বেশি মানুষ মোনালিসা দেখতে ল্যুভর মিউজিয়ামে যান। তাই এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্ম। এই ছবির সেতুরহস্য কিছু পর্যটককে এই শহরের দিকে টানতেও পারে।

সূত্র: সিবিএস নিউজ