সারাহর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় উদ্যোগ
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘ব্রেন ডেড’ ব্যক্তির দান করা কিডনি অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বুধবার রাতে। এই কিডনি দান করে গেছেন ২০ বছর বয়সী তরুণী সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য। আর এর মধ্য দিয়েই সারাহ অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, নাম লিখিয়ে গেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা পর্যন্ত কিডনি প্রতিস্থাপনের এই অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। আজ শনিবার বিকেলে কিশোর আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কিশোর আলোর মাসিক সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। উপস্থিত কিশোর-কিশোরীদের শোনান সারাহর সাহসের গল্প।
বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি জানান, সারাহকে স্মরণ করে ছয়টি উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। সেগুলো হলো:
১. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের নাম পরিবর্তন করে ‘সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেল’ নামকরণ করা হবে।
২. সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্যের মা শবনম সুলতানাকে আজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেবে হাসপাতালটি।
৩. বিএসএমএমইউর গুরুত্বপূর্ণ সব অনুষ্ঠানে শবনম সুলতানা বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হবেন।
৪. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সারাহ ইসলামের নামে একটি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
৫. মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে স্থাপন করা হবে ‘সারাহ কর্নার’। থাকবে সারাহর নামে ফলক।
৬. সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্যকে সরকার কর্তৃক মরণোত্তর জাতীয় পুরস্কার প্রদানের জন্য বিএসএমএমইউর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, ‘সারাহর যে অবদান, এ উদ্যোগ তার কাছে কিছুই না। গত ৩০ বছরেও আমরা এই কাজ করতে পারছিলাম না। আমাদের দুরূহ একটি কাজ সহজ করে গেছে সারাহ। ওর কাছে আমরা ঋণী।’
হাবিবুর রহমান জানান, এই উদ্যোগগুলো প্রক্রিয়াধীন। হাসপাতালের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উদ্যোগগুলো অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।
সারাহ টিউবেরাস স্ক্লেরোসিস নামক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত ছিল। ১০ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কের টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। পরবর্তী সময়ে অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় বিএসএমএমইউর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখানে তাঁকে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার, ১৮ জানুয়ারি রাত ১০টায় তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়। রোগশয্যায় থেকেই নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অন্যকে দান করার ইচ্ছা মাকে জানিয়েছিলেন সারাহ। সেই সূত্রেই, তাঁর দুটি কিডনি ও দুটি কর্নিয়া চার ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করেছেন দেশের চিকিৎসকেরা।
বৃহস্পতিবার তাঁর মরদেহ আজিমপুর নতুন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
করোনার কারণে কিশোর আলোর অফলাইন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত সারাহ কিশোর আলোর নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে কিশোর আলোর সঙ্গে তাঁর পথচলা শুরু হয়। কিআর মাসিক সভা কিআড্ডায় এসেছিল তিনি। তারপর ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন কিশোর আলো পরিবারের একজন। কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে।
সারাহ আঁকতে ভালোবাসতেন। অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি আর হলি ক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর সারাহ তাই ভর্তি হয়েছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের চারুকলা বিভাগে।