১.
সৈয়দ মুজতবা আলী তখন ভারতবর্ষের বারোদা রাজ্যের অধীনে শিক্ষকতার চাকরি করতেন। তাঁর কলেজ ছুটির কয়েক দিন আগে বাড়ি থেকে টেলিগ্রাম যেত, ‘বাবা অসুস্থ। তাড়াতাড়ি চলে এসো।’ মুজতবা আলী তড়িঘড়ি করে বাড়ি এসে হয়তো দেখতে পেতেন, তাঁর বাবা খান বাহাদুর সৈয়দ সেকান্দর আলী বাইরের ঘরে বসে খোশগল্প করছেন।
সৈয়দ মুজতবা আলী বাবাকে সালাম করে টেলিগ্রামের ব্যাপারে মৃদু অনুযোগ করতেই তাঁর বাবা জবাব দিতেন, ‘মনে হচ্ছে আমাকে অসুস্থ দেখলেই তুমি খুশি হতে।’
২.
সৈয়দ মুজতবা আলীর জ্যেষ্ঠ পুত্র সৈয়দ মোশারফ আলীর ডাকনাম ফিরোজ। ফিরোজ ষাটের দশকে তাঁর বাবার সঙ্গে থেকে শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় হঠাৎ শিবরাম চক্রবর্তীর খুব ভক্ত হয়ে উঠলেন। একদিন তিনি বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আব্বু, তুমি শিবরামকে চেনো?’ ‘চিনব না কেন? সে তো আমার বন্ধু’, মুজতবা আলী উত্তর দিলেন। ‘অসম্ভব, এ হতেই পারে না’, ফিরোজ বললেন, ‘তোমার মতো আজেবাজে লেখকের সঙ্গে শিবরামের কোনো সম্পর্কই থাকতে পারে না।’
অগত্যা মুজতবা আলী শিবরামকে আগেই জানিয়ে শিবরামের মেসে একদিন ফিরোজকে নিয়ে হাজির হলেন। ফিরোজের জন্য শিবরামের আতিথেয়তার বহর দেখে মুজতবা আলী বলতে লাগলেন, ‘ভাই, তুমি এত সব করতে গেলে কেন?’
শিবরাম চক্রবর্তী হেসে জবাব দিলেন, ‘ফিরোজ কি আর ফি-রোজ আসে?’