হাতে ব্রেসলেট বা বালা পরলে মা-বাবারা রেগে যান। আর কিশোর হলে তো ঝাড়ির সঙ্গে কানমলা একদম ফ্রি। তবে আজকাল ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে। কিশোর থেকে তরুণ—সবার কাছেই রিস্টব্যান্ড জনপ্রিয় একটা স্টাইল। পুরোনো স্টিলের ব্রেসলেট বা তামার বালার জায়গা এখন রাবারের রিস্টব্যান্ডের দখলে। নানা ধরনের স্টাইলিশ এসব রিস্টব্যান্ড পরলে মা-বাবারাও খুব বেশি আপত্তি করছেন না বলে জানা যাচ্ছে কিশোরদের সঙ্গে কথা বলে। আর যাদের বাড়িতে আপত্তি তোলার আশঙ্কা আছে, তাদের জন্য একটা বুদ্ধি তো আছেই। বুদ্ধিটা আবশ্য আমার না, পিকে র! পিকে চলচ্চিত্রে আমির খান যেমন দুই গালে দেবতার ছবি সেঁটে মারের হাত থেকে রক্ষা পায়, তেমনি ‘বাবা, আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বা ‘বাংলাদেশ’ লেখা রিস্টব্যান্ড পরে দেখতে পারো। মনে হয় না এতে মা-বাবা রাগ করবেন। রিস্টব্যান্ড নিয়ে গুরুজনদের ধারণা যেমনই হোক, এর চল কিন্তু বেশ পুরোনো। ১৯৮০ সালের পরে টেনিস বা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়েরা কাপড়ের তৈরি বিশেষ ধরনের রিস্টব্যান্ড হাতে পরতে শুরু করেন। এটা মূলত স্টাইলের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের মুখের ঘাম মোছার জন্যও দারুণ কাজ করে। তবে, নানা ধরনের ব্যবহারের ফলে রিস্টব্যান্ড ব্যপক জনপ্রিয়তা পায় ২০০০ সালের পর থেকে। আর ২০০৭ সালের পর থেকে সেটা নাক সিটকানোর বদলে বরং সবখানে বাহবা পাচ্ছে । কারণ, এই সময়ে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে রিস্টব্যান্ড দেওয়ার চল দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদেরও একই ধরনের রিস্টব্যান্ড পরতে দেখা যায়।
দলগত ভ্রমণের সময়েও কমন রিস্টব্যান্ড তৈরি ও পরার বিষয়টি আজকাল হরহামেশাই চোখে পড়ছে। ফলে গুরুজনদের চোখেও এখন এটা গর্হিত কোনো অপরাধ বা বাজে ফ্যাশন না। বরং রিস্টব্যান্ডে এখন সৃজনশীলতার ছোঁয়া লেগেছে। কাপড়, কাঠ বা ধাতবের বদলে এখন জনপ্রিয় প্লাস্টিক বা রাবারের রিস্টব্যান্ড।
রিস্টব্যান্ডের ডিজাইন
অনলাইনে রিস্টব্যান্ড বিক্রির দোকান রিস্টব্যান্ড হাউসের একজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে যানা যায়, ‘বিশেষ দিন ধরেই রিস্টব্যান্ড তৈরি হচ্ছে আজকাল। আর সাধারণ প্লাস্টিকে তৈরি রিস্টব্যান্ড ব্যাবহার না করে পরিবেশবান্ধব রাবারে বা প্লাস্টিকে তৈরি রিস্টব্যান্ড পরা উচিত। দেশপ্রেমবিষয়ক নানা ধরনের উক্তি দিয়ে তৈরি রিস্টব্যান্ড বাজারে বেশি চলছে। সবাই পছন্দ করছে একুশে ফেব্রুয়ারি, ষোলোই ডিসেম্বর, বাংলাদেশ ক্রিকেট, গো টাইগার গো, মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১, রক্তঝরা মার্চ বা পয়লা বৈশাখবিষয়ক লেখা। আছে একরঙা রিস্টব্যান্ড। নানা ধরনের ফুল, পাখি, কবিতার লাইন, খাবারের ছবি, গিটার, তবলা, সেভ গ্রিন বা ফেসবুকের নানা সিম্বল বসিয়েও নকশা করা হয়েছে। এক ইঞ্চি, আধা ইঞ্চি বা তার চেয়েও চিকন মাপের রিস্টব্যান্ড ফরমাশ দিয়ে তৈরি করেও নিতে পারো। নকশা করে দিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব রিস্টব্যান্ড তৈরি করে দেবে।
বন্ধুরা মিলে একই লেখা ও ডিজাইন করা রিস্টব্যান্ড পরতে পারো। রিস্টব্যান্ড পরার পোকা আইডিয়াল স্কুলের মিফতাহুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাড়িতে পঞ্চাশের বেশি নকশার রিস্টব্যান্ড আছে তার। বিভিন্ন দিবস বা অনুষ্ঠান বুঝে সেখান থেকে কয়েকটি পরে নেয় সে। অনেকে টি-শার্টের সঙ্গে মিল দিয়েই রিস্টব্যান্ড পরে। তা ছাড়া বন্ধুর জন্মদিনে ‘শুভ জন্মদিন’ মুখে না বলে একটা রিস্টব্যান্ড দিয়েও বোঝাতে পারো।
রিস্টব্যান্ডের দরদাম
খুব বেশি দাম না বলে অনেকে অনেকগুলো কিনতে পারে। রিস্টব্যান্ডের দাম শুরু হয়েছে ১৫ টাকা থেকে। ২০ টাকা, ৩০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম আছে রিস্টব্যান্ডের। গুণগতমান ও ও পরিমানের ওপর নির্ভর করে এর দাম।
কিনতে পাবে যেখানে
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রিস্টব্যান্ড চোখে পড়বে। বসুন্ধরা সিটি থেকে গুলিস্তানের মোড়, পল্টন, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, গুলশান ডিসিসি মার্কেট এলাকায় চোখে পড়বে রিস্টব্যান্ড। এ ছাড়া বনানীর ৭ নম্বর রোডে রিস্টব্যান্ড হাউসে গিয়ে ইচ্ছামতো বেছে কিনতে পারো। চাইলে রিস্টব্যান্ড হাউসের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজে গিয়েও ফরমাশ করতে পারো। আজিমপুর, নীলক্ষেত ও কাঁটাবনের কয়েকটি দোকানে কেনা ও ফরমাশ দেওয়া যাবে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের কাছে ঝুড়িতে করে রিস্টব্যান্ড বিক্রি করতে দেখা যায়।
কিশোর আলোর রিস্টব্যান্ড
কিশোর আলোর প্রথম জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে ‘কী আছে জীবনে’ ও ‘কিপ কাম আন্ড রিড কিআ’ লেখা দুটি রিস্টব্যান্ড। আর নানা সময়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠানেও থাকে কিআর স্টল। চাইলে সেখান থেকেও সংগ্রহ করা যাবে কিআর রিস্টব্যান্ড।
মডেল : দ্রাহা, ঋতু, ফাহাদ ও রাফি
ছবি: কবীর শাহরীয়ার