প্রযুক্তির সহজলভ্যতা আমাদের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে বিশ্বের অপার জ্ঞানভান্ডার। লেখাপড়া, যোগাযোগ থেকে শুরু করে বিনোদন—সব ক্ষেত্রেই আমরা ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট আমাদের জন্য উন্নয়নের দ্বার যেমন উন্মোচন করেছে, তেমনি ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে নানা অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে নেটওয়ার্কভিত্তিক অপরাধ বা ‘সাইবার ক্রাইম’-এর মাত্রা।
যোগাযোগের দ্রুততম এই মাধ্যমে সহজে বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে তথ্য। দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে অবাধে ও স্বল্পমূল্যে নিজের পরিচিতি গোপন রেখে তথ্য আদান-প্রদানের সুযোগসহ নানা কারণে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থার ‘হাইওয়ে’ হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইন্টারনেট বা সাইবার স্পেস। আমাদের দেশে প্রতি ১২ সেকেন্ডে ফেসবুকে একজন নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত হচ্ছেন, যা দেশের জন্মহারের চেয়েও বেশি। সুতরাং তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের এই আধুনিক ও গতিশীল যুগে আমাদের প্রযুক্তিনির্ভরতার মাত্রাটি সহজেই অনুমেয়। তবে অপরাধপ্রবণতা, অসচেতনতা ও প্রযুক্তির অপব্যবহার আমাদের ব্যাপক নিরাপত্তাঝুঁকিও তৈরি করছে। সবকিছু ছাপিয়ে প্রকট আকারে দৃশ্যমান হচ্ছে কিশোরী ও তরুণীদের প্রতি ‘ডিজিটাল ভায়োলেন্স’ বা ‘অনলাইন জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স’–এর নতুন রূপ। বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে সাইবার ক্রাইম বিষয়ে যত মামলা হয়েছে, তা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিকটিমদের শতকরা ৬৫ ভাগই নারী। সাধারণত ১৬–২৪ বছর বয়সী কিশোরী ও তরুণীরাই সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে থাকেন। এ লেখার উদ্দেশ্য কিশোর আলোর কিশোর–কিশোরী পাঠকদের এ বিষয়ে সচেতন করা।
২০২০ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ দেশের জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। স্মার্টফোন ব্যবহার করছে প্রতি চারজনের একজন। তাদের বেশির ভাগই সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন নয়। আমাদের সমাজে লিঙ্গবৈষম্য আছে। যুগের পর যুগ ধরে চলছে নারীর প্রতি নিপীড়নমূলক আচরণ। ইন্টারনেট যেহেতু মতপ্রকাশের একটি সহজলভ্য মাধ্যম, ফলে নিপীড়নকারীরাও এটিকে বেছে নিয়েছে হাতিয়ার হিসেবে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্কাইপেতে ফেক আইডি খুলে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ব্লগে ছবি ও ভিডিও আপলোড, মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণা করছে তারা। বাংলাদেশে নিয়মিত ঘটা সাইবার অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে উগ্র ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য প্রচার, ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি, সাইবার হ্যারাজমেন্ট, আইডি হ্যাকিং, প্রশ্নপত্র ফাঁস, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, অনলাইন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং–গ্যাম্বলিং ইত্যাদি। সাইবার অপরাধের শিকার হলে সাধারণত নিজের ও পরিবারের সম্মানের ভয়ে আমরা রিপোর্ট করতে আগ্রহী হই না। অনেকে মানসিক দুশ্চিন্তা, হতাশা ও অবসাদে ভেঙে পড়ে নিজেকে ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে টেনে নেয়। কিন্তু আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, এ ধরনের অপরাধীরা প্রশ্রয় পেলে অপরাধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে ঝুঁকিতে থাকা এমন অনেককে তাদের শিকারে পরিণত করবে। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে ভিকটিমকে নয়, বরং সাইবার অপরাধকে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে। আর সবার আগে নিজেদের ভেতর তৈরি করতে হবে সচেতনতা।
অনেক ক্ষেত্রে আমরাও কিন্তু অসচেতনভাবে নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলি এবং অজান্তেই সাইবার অপরাধ বিস্তারের সুযোগ তৈরি করি। অনলাইনে সুরক্ষিত থাকতে হলে আমাদের সাধারণ কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বিধানে করণীয়
যে ই–মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তা সব সময় সচল রাখতে হবে। কেননা, হ্যাকার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বা ই–মেইল অ্যাড্রেস পরিবর্তন করলে সঙ্গে সঙ্গেই ফেসবুক থেকে ই–মেইল পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারকে সতর্ক করে একটি Recovery লিংক পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ লিংকে ক্লিক করে সহজেই হ্যাক হওয়া আইডি রিকভার করা সম্ভব।
capital letter, small letter, number & symbol মিলিয়ে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে। পাসওয়ার্ডকে অনেকটা টুথব্রাশের মতো ব্যবহার করতে হবে। আমরা কিন্তু টুথব্রাশ কারও সঙ্গে শেয়ার করি না এবং অন্তত তিন মাস পরপর তা পরিবর্তন করি। ঠিক একইভাবে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কারও সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না এবং নির্দিষ্ট সময় পর তা পরিবর্তন করতে হবে।
সহজে অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন জন্মতারিখ, নিজের নাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ইত্যাদি পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
জন্মতারিখ, মুঠোফোন নম্বরসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত বা পাবলিক রাখা যাবে না। এতে বিভিন্ন রকমের হয়রানি ও প্রতারণা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা সহজ হবে।
ফেসবুকের ক্ষেত্রে Trusted Contact-এ ৩ থেকে ৫ জন ঘনিষ্ঠ ফেসবুক বন্ধুকে যুক্ত রাখতে হবে। এর ফলে আইডি হ্যাক হয়ে গেলেও তা উদ্ধার করা সহজ হবে।
ফেসবুকের Privacy Settings ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে প্রোফাইল লক করে রাখতে হবে। নিজের ছবি ‘পাবলিক’ করে রাখলে তা যে কেউ ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারে। তাই ব্যক্তিগত ছবি সুরক্ষিত রাখতে হবে। স্ট্যাটাস বা ব্যক্তিগত ছবির প্রাইভেসি নিশ্চিত করে শেয়ার করতে হবে। ফেসবুকে নিজের জীবনাচরণ যত বেশি পাবলিক হবে, তত বেশি ঝুঁকি থাকবে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাম ও জন্মতারিখ ব্যবহার করতে হবে। এতে আইডি হ্যাক হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে করণীয়
প্রথমেই www.facebook.com/hacked-এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে।
এরপর ‘Someone else got into my account without my permission’–এ ক্লিক করতে হবে। হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্টটির তথ্য চাওয়া হলে সেখানে উল্লেখ করা দুটি অপশনের (ই–মেইল বা মুঠোফোন নম্বর) যেকোনো একটির তথ্য দিতে হবে।
এরপর ‘My account is compromised’–এ ক্লিক করতে হবে। হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্টটির তথ্য চাওয়া হলে সেখানে উল্লেখ করা দুটি অপশনের (ই–মেইল বা মুঠোফোন নম্বর) যেকোনো একটির তথ্য দিতে হবে।
প্রদত্ত তথ্য সঠিক হলে প্রকৃত অ্যাকাউন্টটিই দেখাবে এবং বর্তমান অথবা পুরোনো পাসওয়ার্ড চাইবে; এখানে পুরোনো পাসওয়ার্ডটি দিয়ে ‘Continue’ করতে হবে।
হ্যাকার যদি ই–মেইল অ্যাড্রেস পরিবর্তন করে না থাকে, তাহলে আগের ই–মেইলে রিকভারি অপশন পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে হ্যাকড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করা সম্ভব।
হ্যাকার যদি ই–মেইল অ্যাড্রেস, মুঠোফোন নম্বরসহ লগইনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পরিবর্তন করে থাকে, তাহলে ‘Need another way to authenticate? > Submit a request to Facebook’–এ ক্লিক করলে ফেসবুক প্রোফাইলটি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও আইডি সরবরাহের ফরম পূরণের মাধ্যমে হ্যাকড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করা সম্ভব।
[সূত্র: বাংলাদেশের পুলিশের ওয়েবসাইট: www.police.gov.bd]
গোপনীয় বা ব্যক্তিগত কনটেন্ট ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হলে করণীয়
যে পোস্টের মাধ্যমে গোপনীয় বা ব্যক্তিগত কনটেন্ট ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে, সে পোস্টের ডান দিকে রিপোর্ট করার অপশনে গিয়ে Find support or report post–এ ক্লিক করতে হবে।
অপশনে থাকা বিভিন্ন ইস্যু, যেমন Fake news, nudity, violence, harassment ইত্যাদির মধ্য থেকে উপযুক্ত বিষয়টি নির্বাচন করতে হবে।
ভুক্তভোগী নিজে কিংবা তার ফেসবুক বন্ধুরা Me/My friends থেকে উপযুক্ত অপশনটি নির্বাচন করে মিথ্যা বা মানহানিকর পোস্টটির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট পোস্টটির সম্পূর্ণ লিংকসহ স্ক্রিনশট নিয়ে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে, যা পরবর্তী সময়ে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হবে।
গোপনীয় বা ব্যক্তিগত কনটেন্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে হয়রানি কিংবা বিড়ম্বনার শিকার হলে কালক্ষেপণ না করে নিকটস্থ থানা–পুলিশকে অবহিত করতে হবে।
[সূত্র: বাংলাদেশের পুলিশের ওয়েবসাইট: www.police.gov.bd]
অনলাইনে নিরাপদ থাকার জন্য সাধারণ সতর্কতা
একই পাসওয়ার্ড একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের জন্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ব্যক্তিগত ফোন/ল্যাপটপ বা অন্য যেকোনো পাবলিক ডিভাইসে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের পর যথাযথভাবে লগআউট হতে হবে।
চাকরি/লটারি/মূল্যহ্রাস বা কোনো আকর্ষণীয় সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব দিয়ে কোনো লিংক প্রেরণ করা হলে সেই লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে, ই–মেইলে বা ইনবক্সে প্রেরিত কোনো অপরিচিত অ্যাটাচমেন্ট ওপেন করা যাবে না।
ব্যবহার্য সব ডিভাইসে অপারেটিং সিস্টেম আপডেটেড রাখতে হবে এবং ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।
অনলাইনে কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না এবং অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে অ্যাড করা যাবে না।
যেকোনো স্পর্শকাতর কথোপকথন ডিলিট করতে হবে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত কোনো মুহূর্তের ছবি কোনো ডিভাইসে সংরক্ষণ করা উচিত হবে না।
নিজের ব্যবহৃত পুরোনো মুঠোফোন বা ল্যাপটপ অন্য কারও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেওয়ার সময় নিজের সব ব্যক্তিগত তথ্য ভালোভাবে ডিলিট করতে হবে।
সব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি অপশনে থাকা প্রাইভেসি সেটিংস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবার কাছে নিজের ব্যক্তিগত তথ্যের অ্যাকসেস দেওয়া যাবে না।
অপরিচিত কারও সঙ্গে অনলাইনে চ্যাট করা, ব্যক্তিগত ছবি শেয়ার করা বা কোনো প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো নিরাপদ নয়।
সাইবার বুলিংয়ের উদ্দেশ্যে কেউ আপত্তিকর মেসেজ পাঠালে তার উত্তর না দিয়ে বা প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে স্ক্রিনশট নিতে হবে এবং পুলিশের সহযোগিতা চাইতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে বা অন্যের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। সঠিকভাবে যাচাই না করে কোনো গুজব বা মিথ্যা তথ্য শেয়ার করা উচিত নয়।
নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষকে মেসেজ ফরওয়ার্ড করলে বা প্রেরিত লিংকে ক্লিক করলে কোনো ডিসকাউন্ট বা গিফট পাওয়া যাবে, এ ধরনের কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
অপরিচিত স্থানে বা ট্রায়াল রুমে পোশাক পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। শপিংয়ে যাওয়ার সময় প্রয়োজনে পোশাকের মাপ যাচাইয়ের জন্য মেজারিং টেপ সঙ্গে রাখতে হবে।
অনলাইনে পরিচিত হওয়া কোনো ব্যক্তি কোনো স্থানে দেখা করতে চাইলে তা এড়িয়ে চলতে হবে।
বর্তমানে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, ‘Google Yourself’। গুগলে নিজের নাম সার্চ দিয়ে দেখতে হবে আপত্তিকরভাবে কোথাও নিজের নাম বা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে কি না।
বিব্রতকর কোনো মেসেজ বা ছবি পাঠালে সে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে হবে।
কোনো ডিভাইসের ওয়েবক্যাম হঠাৎ যাতে চালু না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে অভিযোগ জানানোর উপায়
সাইবার ক্রাইম বিষয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাইবার অপরাধ তদন্তবিষয়ক সেল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্ক ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)।
সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে নিম্নবর্ণিত যেকোনো হেল্পডেস্কের সহযোগিতা নেওয়া যাবে:
সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, ডিএমপি
৩৬, মিন্টো রোড, রমনা, ঢাকা
হেল্পডেস্ক নম্বর: ০১৭৬৯৬৯১৫২২
ই–মেইল: [email protected]সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি
ফোন: ০১৩২০০১০১৪৮
ই–মেইল: https://cid.gov.bd/ফেসবুক পেজ: পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ)। এখানে সব অফিসার নারী হওয়ায় মেয়েরা সহজেই গোপনীয়তা বজায় রেখে নিজেদের সমস্যা শেয়ার করতে পারেন।
ফোন নম্বর: ০১৩২০০০০৮৮৮
ই–মেইল: [email protected]হ্যালো সিটি অ্যাপ (গুগল প্লে–স্টোর থেকে ডাউনলোড)
রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপ (গুগল প্লে–স্টোর থেকে ডাউনলোড)
৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর)
এ ছাড়া নিম্নোক্ত পেজে সংযুক্ত থাকা যেতে পারে—
বাংলাদেশ পুলিশ, সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, সাইবার পুলিশ সেন্টার
বাংলাদেশে প্রচলিত আইনসমূহ
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে দেশে রয়েছে কঠোর আইন। কিন্তু লক্ষ করা যায় যে মামলার একপর্যায়ে বাদীর অনীহা, বাদী-বিবাদীর মধ্যে আপস, আদালতে সাক্ষীর হাজির না হওয়া ইত্যাদি কারণে এসব আইনের অধীনে দায়ের করা মামলা খারিজ হয়ে যাচ্ছে। সাইবার অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সরকারের কোনো চুক্তি না থাকা। এ কারণে মামলার আলামতের জন্য তাদের কাছে সহযোগিতা পাওয়া অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। মামলা করার সময় বাদী অপরাধসংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও বা ভিডিও ফাইল অথবা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র জমা দিলেও আসামি এসব আলামত, যেমন স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও বা ভিডিও ফাইল মুছে ফেলে দাবি করেন যে তিনি এ অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তারা আসামির মুছে ফেলা ডেটা সরবরাহ করলে তা evidence হিসেবে গুরুত্ব বহন করবে এবং অপরাধীর শাস্তি প্রদান সহজতর হবে।
ক্রমপরিবর্তশীল সাইবার অপরাধের ধরন ও প্রকৃতির সঙ্গে সংগতি রেখে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। এ ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবসহ সংযোজন করা হচ্ছে সর্বশেষ প্রযুক্তি। কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সারা দেশে সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও তদন্তের জন্য ‘ডেডিকেটেড সাইবার পুলিশ ইউনিট’ গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অধিকসংখ্যক নারী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে ভুক্তভোগী নারীদের সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে আইনি প্রক্রিয়াই যথেষ্ট নয়। সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সাইবার ক্রাইমসংক্রান্ত আইন, আইনে শাস্তির বিধান, অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা ও আলোচনা প্রয়োজন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে উদ্ভূত এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যে সবাই ইন্টারনেটে বেশি সময় ব্যয় করছে, যা সাইবার অপরাধপ্রবণতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। আমরা যেসব ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার ব্যবহার করছি, তার নিরাপত্তা ফিচার সক্রিয় কি না, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে এবং কীভাবে অসংগত বিষয় এড়িয়ে চলা যাবে, তা জানতে হবে। আমাদের নিজেদের পরিবার থেকেই অন্যকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে শেখাতে হবে। কোনো সাইবার অপরাধের শিকার হলে লুকিয়ে না রেখে পরিবারের বড় সদস্যদের অবশ্যই জানাতে হবে। আমরা সবাই সতর্ক হলেই হ্রাস পাবে সাইবার ক্রাইমের ঝুঁকি।
মাহ্ফুজা লিজা: বিপিএম, অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার, ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস বিভাগ, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা।