সাইকেল
সাইকেল ছুটেছে যে পথে
দুই চাকায় ভর করে সারা দুনিয়া চষে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখে অনেকেই। এমন স্বপ্নপ্রিয় মানুষগুলোর কথা ভেবে বিশ্বের নানা প্রান্তে সাইক্লিস্টদের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে নানা রকম সড়ক। এ সড়কগুলোতে সাইকেলে পাড়ি জমালে মিলবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের। তবে এসব পথে পাড়ি জমাতে কয়েক দিন, এমনকি কয়েক মাসও টানা সাইক্লিং করতে হয়। পাহাড়, পর্বত, মরু, সমুদ্র আর জঙ্গলের নয়নাভিরাম সৃষ্টির ভেতর দিয়ে সাইক্লিস্টদের ছুটে চলার সুযোগ দেয় এসব সড়ক। চলো দেখে নেওয়া যাক সারা বিশ্বের এমন কিছু সাইক্লিস্ট সড়কের ব্যাপারে।
বন্ধুত্ব দিয়েছে যে সড়ক
তিব্বতের পর্বত ঘেঁষে চীনের লাসা শহর আর নেপালের সীমান্তে দেখা মিলবে পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার এই সাইক্লিস্ট সড়কটির। ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে যেতে সাইক্লিস্টদের পাড়ি দিতে হবে ১৬ হাজার ৪০০ ফুট উঁচু পর্বত গিয়াটসোলার। এই পর্বতটিকে কাটিয়ে যেতেই চোখে পড়বে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতমালা এভারেস্টের বরফ সাজানো চূড়া। সাইকেল চালাতে গিয়ে প্রকৃতির এমন অপার সৃষ্টিতে বিস্মিত না হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। চীন সরকার সাইক্লিস্টদের জন্য বানানো এই সড়কের নাম দিয়েছে ‘দ্য ফ্রেন্ডশিপ হাইওয়ে’ অর্থাৎ বন্ধুত্বের সড়ক। তবে বন্ধুদের নিয়ে এ সড়কে সাইকেল চালানোর জন্য পার করতে হবে ছোটখাটো কিছু পরীক্ষা পর্ব। এ ছাড়া এককভাবে এই বিশাল পথে সাইক্লিং না করার নির্দেশও দেওয়া আছে। সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পথে দেখা হয়ে যেতে পারে লাসা শহরের অধিবাসীদের সঙ্গে। সব মিলিয়ে সাইকেল চালিয়ে প্রকৃতির বুকে মিশে যাওয়ার জন্য এটাই সেরা উপায়। তাই সময়–সুযোগ মিলিয়ে বন্ধুরা মিলে বেরিয়ে পড়তে পারো এই বন্ধুত্বের সড়কের অভিযানে।
বিজয়ীদের পথ
প্রশান্ত মহাসাগর আর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ঘেরা মধ্য আমেরিকান দেশ কোস্টারিকার বুকে আছে আরও একটি নৈসর্গিক সাইকেলবান্ধব সড়ক। অনেকের মতে, ‘দ্য ফ্রেন্ডশিপ হাইওয়ে’ থেকে এ পথে সাইকেল চালানো সহজ হলেও প্রকৃতপক্ষে এটাও বেশ কঠিন। ২৭০ কিলোমিটারের এই দীর্ঘ সড়কের শুরু হয় বালু আর কাদার ভেতর দিয়ে। এরপর একে একে রেইনফরেস্ট, কফিবীজের বাগান পেরিয়ে দেখা মিলবে বিলুপ্তপ্রায় ইরাজু আগ্নেয়গিরি। প্রতিবছর নভেম্বর মাস নাগাদ তিন দিনব্যাপী এই পথে আয়োজন করা হয় এক বিশাল সাইকেল রেসিং প্রতিযোগিতা। যার নাম ‘La Ruta de los Conquistadores’ যার অর্থ বিজয়ীদের পথ। এ নামেই সড়কটির নামকরণ করে কোস্টারিকার সরকার। ১৬ শতকে স্প্যানিশ অভিযাত্রী হুয়ান দে ক্যাভেলন এই পথের সন্ধান বের করেন। এ পথে সাইকেল চালাতে গিয়ে দেখা যাবে সুইজারল্যান্ডের জাতীয় পার্কের কিছু অংশ। শুরুতে জ্যাকো বিচ পেরোনোর পর থেকেই ধীরে ধীরে কঠিন হতে শুরু করে এই পথ। গোটা সড়কটি পার হতে গিয়ে প্রায় ১ হাজার ফুট উঁচুতেও সাইকেল চালাতে হবে সাইক্লিস্টকে। তাই প্রয়োজনমতো অনুশীলন শেষে বেরিয়ে পড়তে পারো এ পথে।
ইউরোপের সেরা পথ—ইউরোভেলো
ইউরোপের আটটি দেশের ভেতর দিয়ে ছুটে চলা এক সাইকেল সড়ক হলো উত্তর সাগরীয় সাইকেল রুট। যার স্থানীয় নাম ইউরোভেলো রুট ১২। সারা পৃথিবীতে রাস্তার নির্দেশনা দেওয়া আছে এমন সবচেয়ে দীর্ঘ পথ হলো এটি। ৬ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথটি স্টকল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের শেটল্যান্ড আইল্যান্ড থেকে শুরু হয়ে ক্রমান্বয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন হয়ে শেষ হয়েছে নরওয়ের সীমানায়। একবারেই এই পুরো পথে সাইক্লিং করতে যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কেননা প্রতিটি দেশে ঢুকেই এ সড়কের প্রকৃতি বদলে গেছে তার আপন কারুকার্যে। তাই প্রতিবছর আলাদা আলাদা ঋতুতে সড়কগুলোর বিভিন্ন অংশে দেখা মেলে সাইক্লিস্টদের।
ওয়েবসাইটে আবেদন শেষে সাইক্লিস্টরা চূড়ান্ত অনুমোদন পাবেন সাইকেল আর কিছু ক্রোন (ডেনমার্ক ও নরওয়ের মুদ্রা) নিয়ে এ পথে পাড়ি জমানোর। এ ছাড়া ইউরোভেলো রুট ১২ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে এখানে।
সাইকেলে ঘুরে সমুদ্র
বিশ্বের সুন্দর সাইকেল চালানোর সড়কগুলোর ভেতরে এটাই হয়তো একমাত্র সড়ক, যেটাতে পরিবারের সবাই মিলে যাওয়া যায়। কেননা জাপানের পশ্চিম সীমান্তে হিরোশিমা শহরের এই ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। শিমানামি কাইডো নামের এই সাইকেল সড়কটি জাপানের নাগরিকদের সাইকেল চালাতে উৎসাহী করে তোলে। কারণ, সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করে যে জাপানে গাড়ির সঙ্গে সমান তাল মিলিয়ে সাইকেল চালানো সম্ভব।
এই রাস্তাটিকে আরও সুন্দর করে সাজাতে সাইকেল চালানোর পাশাপাশি মানুষের হাঁটার জন্যও আলাদা পথ বানানো হয়েছে। এই সড়কে কিছুদূর পরপর সাইকেল ভাড়া নেওয়ার স্ট্যান্ড বসানো আছে। যেখান থেকে কেউ চাইলেই সাইকেল ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসতে পারে এই সড়কটিতে। এ পথের সেরা আকর্ষণ হলো জাপানের এক অভ্যন্তরীণ সাগর, সেটো। সমুদ্রের পাশে সাইকেল চালিয়ে প্রকৃতিকে উপভোগ করার এর চেয়ে ভালো উপায় পৃথিবীতে আর বেশি নেই। সড়কের নানা অংশে আছে ছোট ছোট কিছু সেতু। যেগুলো পার হতে হলে সাইক্লিস্টকে সামান্য পরিমাণ টোল দিতে হয়। তাই এ পথে পাড়ি জমানোর আগে পকেটে কিছু পয়সা গুঁজে নিতে পারো। আর সাইকেলে চেপে দেখে আসতে পারো জাপানের এই প্রাকৃতিক নৈসর্গকে।