আমরা কোথাও জ্যামের কারণে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারলেও, শীতটা কিন্তু পায়ে পায়ে ঠিক সময়ই এসে পড়ল। হাতে করে নিয়ে এল পিঠা-পুলি। পথ দেখিয়ে নিয়ে এল অতিথি পাখি, আমাদের গায়ে সে শীত লাগতেও শুরু করল, যেন শীতটা এক প্রকার আঠা। পারদের মতো তার ওঠানামার ব্যাপারস্যাপার আছে। কখনো সে বাড়ে, কখনোবা কমে। কখনো সে ধপাস করে পড়েও যায়। আমরা তখন বলি, এবার ভালোই শীত পড়েছে। কিছু কাপড় আছে, শীতের কাপড়। সে কিন্তু নিজে ওগুলো কখনোই পরে না। শীতের কাপড় অথচ পরি আমরা। শীতের ফল, সেটাও কিন্তু খাই আমরাই। অথচ মালিক হিসেবে কখনো সে বাধা দিয়েছে বলে কখনো শুনিনি! এ জন্যই হয়তো সর্বনাশের বিপরীত হচ্ছে শীতের এই পৌষ। ওই যে বলে না, কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ।
ভাবছ এই লোক কি শীত কল্যাণ সমিতির সদস্য নাকি? শীতের পক্ষে এত কথা বলছে কেন? বলছি, কারণ লেখার বাকিটা জুড়ে শীতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়ে যাব। শুরুতেই প্রশংসা করে ওকে তাই দিকভ্রান্ত করে দিলাম। ও ঠিক আন্দাজই করতে পারবে না, আমি ওর কত বড় শত্রুতা করতে যাচ্ছি।
ব্যাটা আমাদের হাড় কাঁপিয়ে দিতেই যে ত্বক ফাটিয়ে দেহের ভেতরে ঢুকে পড়ে সেটা না হয় বুঝলাম, কিন্তু দেহের ভেতরে ঢুকতে মুখগহ্বরের মতো এত বড় একটা ফুটা থাকার পরও পাশেই থাকা ঠোঁট দুটোকেও ফাটানো কেন দরকার সেটা বুঝলাম না! ভেবে দেখো কত বড় ফাজিল এই শীত! এত কিছু করেও আমাদের ফাটা কপাইল্লা বানানোর জন্য সে আবার পুরো মুখমণ্ডলের ত্বকও ফাটিয়ে দেয়। এ কারণে তাই এই সময়টায় ত্বকের জন্য দরকার একটু বাড়তি যত্ন। শীতের কাপড় পরতে ইচ্ছে না হলে প্রয়োজন অনুসারে নিজের গরম কাপড়গুলোই ব্যবহার করো। শরীরের খোলা অংশগুলোকে (যেমন: কান, হাত, পা ইত্যাদি) ঢাকা রাখো। তুমি ঢাকার বাইরে থাকলেও এদের ঢাকা রাখতে আবার আজই প্যাকেট করে ঢাকার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়ো না। মনে রেখো মাফলার দিয়েও এদের ঢাকা রাখা যায়। ত্বকে ময়েশ্চারাইজার অথবা গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে মাখো। সাইট্রাস ফল যেমন: আপেল, কমলা, লেবু ইত্যাদির রস লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলো। ত্বকে লাগানো এই ফলগুলো ধুয়ে ফেলে দিলেও ব্যাগে থাকা বাকিগুলো খেয়ে ফেললে ত্বক তো বটেই দেহও সতেজ থাকবে। তা ছাড়া মুখে ভালো কোনো কোল্ড ক্রিম ব্যবহার করতে পারো। এদেরও তো ব্যবসাপাতি করে খেতে হবে, তাই না? আরেকটা কথা, সব সময় পেট্রোলিয়াম জেলি সঙ্গে রেখো। ঠোঁট শুকিয়ে গেলেই মেখে নেবে। ঠোঁটগুলো শুকিয়ে যাবে না, আবার কোনো কারণে যদি শুকিয়েই যায় তখন শুষ্ক আবরণ টেনে তুলতেও যেয়ো না, আবার ভেজানোর জন্য জিব দিয়ে বারবার ঠোঁট লেহনও কোরো না। ঠোঁট তো আর লজেঞ্চুস না, তাই না? আর ঠোঁট জোড়াকে যদি ভালো করে ভেজাতেই চাও, তাহলে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মধু আর গ্লিসারিন একসঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারো।
এই সময়ে জ্বর বেশি হয়, জ্বরে শরীর পুড়তে শুরু হলেও ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিলে সমাধান পাবে না, তার চেয়ে বরং শরীরটা একটা ভেজা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করে দিয়ো। না কমলে, ডাক্তারের কাছে যাও। জ্বরে শরীরের গরম ভালো না লাগলেও, শীতকালে রোদের গরমটা গায়ে মাখাতে ভালোই লাগে জানি, তাই বলে বেশিক্ষণ কিন্তু রোদে থাকা যাবে না। আর বেশি রোদে যদি বেরই হতে হয় তাহলে সানব্লকার ব্যবহার করতে পারো।
আমার একটা ধারণা কি জানো, স্বয়ং শীতের বুড়িও কনকনে শীতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসলের কথা শুনলে কাঁপতে শুরু করে, তুমি-আমি তো ছার!
শীতে গোসলের সময় তাই গরম পানি ব্যবহার করতেই পারো, তবে সেটা যেন কিছুতেই অতিরিক্ত গরম না হয়। অতিরিক্ত গরম পানি তোমার ত্বকের তেল শোষণ করে ত্বককে আরও শুষ্ক করে তুলবে। জানোই তো আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় এ সময় খুশকি খুব বেড়ে যায়। ফুটবল খেলোয়াড় হতে চাইলে মেসি-রোনালদোর টিপস মনোযোগ দিয়ে মানলেও, খুশকি কমাতে তাদের বিজ্ঞাপন মেনে শ্যাম্পু নির্বাচনের চেয়ে বরং চিকিৎসকের পরামর্শই মেনে চলা ভালো। কম খরচে খুশকি কমাতে চুলের গোড়ায় গরম তেল বা লেবুর রস ম্যাসাজ করতে পারো। অতিরিক্ত খুশকি হলে মেডিকেটেড শ্যাম্পু (যেমন: কিটোকোনাজল, অ্যালোভেরা বাটার শ্যাম্পু ইত্যাদি) ব্যবহার করলে ভালো হয়। আর এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবে। অন্তত দিনে ১০-১২ গ্লাস। দয়া করে এখন আবার জিজ্ঞেস কোরো না, ভাই এতগুলো গ্লাস পাব কোথায়? তাহলে শীতের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধবিরতি দিয়ে এখন গ্লাস খোঁজার মিশনে নেমে যেতে হবে! এ যুদ্ধটা তো আর যেনতেন যুদ্ধ না, যেখানে তুমি জানো যে শীতের সবচেয়ে বড় অস্ত্রটি কতখানি ভয়ংকর! যে অস্ত্রটি খোদ আমেরিকা সারা ইরাক জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পেল না, সেই জীবাণু অস্ত্রটিই আছে শীতের বুড়ির কাছে। রোগ-জীবাণুগুলোকে এ সময় সে দ্রুত ছড়িয়ে দেয় একজন থেকে আরেকজনে।
ছবি: কবির হোসেন