জীবনটা হলো রঙিন ক্রেয়নের মতো। বেশির ভাগ মানুষই আটটি ক্রেয়নের বাক্সের মতো হলেও সে চায় ৬৪ রঙের ক্রেয়নের বাক্সের মতো হতে।
কথাটা যিনি বলেছেন তাঁর হয়তো ভক্ত তুমি। আবার এমনও হতে পারে তাঁকে দেখলেই অসহ্য লাগে তোমার। তবে যা-ই হোক, এই কথাটা বোধ হয় ভালোই লাগছে তোমার, তাই না? সংগীতশিল্পী জন মেয়ার বলেছেন এমন। তাঁর সমস্যাটা হলো, তিনি নিজেও নাকি আশপাশে শুধু আটরঙা মানুষ দেখছেন। এত এত রং আছে চারপাশে, তবু মানুষের মধ্যে ৬৪ রং কই? তোমারও কি তাই মনে হচ্ছে? কখনো কি ভেবেছ তুমি নিজে কেমন? সাদামাটা আটটি রংই আছে তোমার ঝুলিতে, নাকি চাইলেই খুলে দেবে হরেক রকম রঙের ভান্ডার?
জলের গান ব্যান্ডের রঙের গানটা শুনেছ নিশ্চয়ই। কত রকম রঙের কথা আছে সেই গানে। শুনলেই মনটা ভালো হয়ে যায়, তাই না? এক কনসার্টে তারা একটা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল, যে বলতে পারবে কয়টি রঙের কথা আছে সেই গানে, সে-ই পাবে পুরস্কার। কালো পানকৌড়ি, শালুক সাদা ফুল, দিঘির কুচলা কালো জল, সাদা ফুলের হলুদ রেণু, সবুজ বাতাস, ধূসর কালো কাক—এই পর্যন্ত গুনে আর পারিনি। কালো রংটারই কত রকম—পানকৌড়ি, দিঘির জল আর কাকের গায়ে তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ।
তুমি কেন আটকে থাকবে তিন-চারটি রঙের মধ্যে। তোমার আশপাশে তো আছেই কত রং। তোমার পোশাক, জীবনযাত্রাতেও তুলে আনো রঙের ছটা। সাদা শার্ট আর নীল জিনসেই স্বচ্ছন্দ তুমি, স্যান্ডেলটা কি সব সময় বাদামিই হবে? সেটা কি সবুজ বা অন্য কোনো রঙের হতে পারে না? আর প্যান্টই বা নীল কিংবা এর কাছাকাছি রঙের হবে কেন? মেরুন, বাদামি, সবুজ—কত রঙের প্যান্টই তো চলছে আজকাল। পরতে পারো সেগুলোও। ভাবছ, বন্ধুরা হাসাহাসি করবে। অথবা তুমি নিজে তেমন স্বচ্ছন্দ নও। তাহলে টি-শার্টের রঙেই নাহয় বদলটা আসুক। সাদা টি-শার্টেই যেখানে ফুটে উঠত টিনটিন আর কুট্টুসের কার্টুন, সেখানে নাহয় থাকুক কোনো উজ্জ্বল রং। নেইমারের ফ্যান বলেই তো আর নেইমারের মতো চুলের স্টাইল করা সম্ভব নয়। সেটা সবাই বোঝে। চুলের রং না হোক, হাতে একটা রংচঙে ব্রেসলেট তো পরতেই পারো।
মেয়েদের পোশাকে রঙের বৈচিত্র্য ফুটিয়ে তোলা তো কোনো ব্যাপারই না। কোন রঙের সঙ্গে মিলবে কোন রং তা ভাবারও তেমন প্রয়োজন নেই। একসময় টপ আর প্যান্টের রং বা সালোয়ার আর কামিজের রঙে মিল রাখার যে ট্রেন্ড ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে। পোশাকের রঙের বেলায় কনট্রাস্ট, নিয়ন, শকিং—এ ধরনের শব্দগুলো আজকাল খুব শোনা যাচ্ছে। চড়া সবুজ, ক্যাটকেটে হলুদ, উজ্জ্বল লাল, হাওয়াই মিঠাই গোলাপি—বাদ যাচ্ছে না কোনো রংই। বরং এগুলোই এই সময়ে চলছে বেশ। শুধু কি পোশাক, ঠোঁট রাঙানোর বেলায়ও নিয়নের দাপট। কমলা, গোলাপি, লাল রংগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে। আইশ্যাডোতে চোখের সাজের চল এখন একটু কম। সে জায়গা দখল করেছে কাজল। কত রং কাজলের। গত ঈদে তো দুই বা তিনটি ভিন্ন রঙের কাজলে চোখ সাজানোর ট্রেন্ডও দেখা গেল। জাংক জুয়েলারিতেও কত রঙের বাহার। বড়সড় বিব নেকলেসগুলো এখন বেশ পরছে কিশোরীরা। তাতে দেখা যাচ্ছে নীল, সবুজ, হলুদের দাপট। তবে সাজপোশাকের পরে আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিও। রিও সিনেমার ব্লু নামের ম্যাকাও পাখিটির মতো দেখাচ্ছে না তো! পোশাক, সাজ, গয়না সবকিছুতেই যেন রঙের বাড়াবাড়ি না থাকে। চড়া রঙের পোশাক হলে গয়নায় একটু সাদামাটা ভাব রাখতে পারো। কিংবা সাদা বা এ রকম হালকা যখন তোমার পোশাকের রং, তখন ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারো গোলাপি বা কমলা।
গেল সাজপোশাকের কথা, এর বাইরেও তো জীবনের কত অংশ আছে। ঘুম থেকে চোখ মেলেই যদি সামনে পড়ে ধূসর দেয়াল, তবে কি দিনের শুরুটা চনমনে হবে? তার বদলে দেয়ালে যদি আঁকা থাকে সবুজ ডালপালা মেলা একটা গাছ, তার পেছনে আকাশে রংধনু। দারুণ হয় তাই না! খুব বেশি ঝামেলা করতে হবে না এ জন্য। নিজে যদি আঁকতে না-ই পারো, বন্ধুদের মধ্যে নিশ্চয় কেউ না কেউ আছে। বড় একটা পিত্জার বিনিময়ে তাকেই ধরিয়ে দিতে পারো রং-তুলি বা স্প্রেপেইন্ট। তবে আগে একটু কষ্ট করে মা-বাবার অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে।
রঙের কথা এত বলা হচ্ছে কেন, সত্যিই কি আমাদের মানসিকতায় রঙের কোনো প্রভাব আছে? লাল কি আসলেই আনন্দের রং, নীল মানেই বিষাদ? কিংবা সাদা কি পবিত্রতার প্রতীক, সবুজ মানেই অফুরন্ত শক্তির উত্স?
‘কতবার আমি নীল রংটা ব্যবহার করতে গিয়ে দেখেছি তা ফুরিয়ে গেছে, তার বদলে আমি লাল রংটা ব্যবহার করে ফেলেছি।’ বলেছেন পিকাসো। কাজেই নীল আর লালে যে খুব বেশি পার্থক্য হয়ে যায় তা বোধ হয় না। কোন রংটা বেছে নেবে তুমি, তা নিয়ে বেশি ভাবার তাই প্রয়োজন নেই। ‘পৃথিবীর সেরা রং হলো সেটাই, যেটাতে তোমাকে সবচেয়ে ভালো মানায়।’ এই কথাটায় গুরুত্ব দিতেই পারো। বলেছেন বিখ্যাত ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার কোকো শ্যানেল।