‘রোজ ঘর ঝাঁট দেবার পর ধুলোবালির স্থান হয় বারান্দার এক কোণে। ছোট্ট স্তূপের মতন আকার নিয়ে ধুলোর আখড়াটা বেশ মাটি মাটি চেহারা পেয়ে গেছে। রবি সেই ধুলোর ঢিবিতে একটা আতার বিচি পুঁতে দিল। প্রতিদিন নিয়ম করে দেখে আসে, কতটুকু কি হলো। আতার পাতা কিভাবে বেরোয় তা দেখতে রবির উৎসাহের আর অন্ত নেই। যত্ন করে খুব, জলও দেয় মাঝেমাঝে। কিন্তু বিধি বাম! যে ঝাঁটা একদিন ধুলো জমিয়েছিল, সেই ঝাঁটের চোটেই ধূলিসমেত আতার বিচি গেল উড়ে। রবির হলো আশাভঙ্গ।’
এমন অনেক মনকাড়া ছোটখাটো মিষ্টি গল্পের দেখা মিলবে রবীন্দ্রনাথের ‘ছেলেবেলা’ বইয়ে।
জ্যোতিদাদার সঙ্গে হাতির পিঠে চড়ে বাঘ শিকারে বেরোনো, রুদ্ধশ্বাস অ্যাডভেঞ্চার!
রাত জেগে ঢুলু ঢুলু চোখে যাত্রা দেখা, স্বপ্নের আবির বোনা।
ছোট সরদার শ্যামের কাছে ডাকাতির গল্প শোনা। রঘু ডাকাত, বিশু ডাকাত; কত নাম! ডাকাতির নিয়মও আবার বনেদি। রবির ভাষায়, ‘তারা খবর দিয়ে ডাকাতি করত, ইতরপনা করত না!’ মানে দিনে–দুপুরে ডাকাতি যাকে বলে!
একটু পরিণত বয়সে ‘ভারতী’ পত্রিকা সম্পাদনার ভার নেওয়া। ‘বঙ্গদর্শন’ নিয়ে মাতামাতি। আর সতেরোতে এসে ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেত যাওয়া। এই নাতিদীর্ঘ উপাখ্যানের শেষাংশ এমন, ‘বিলেতে গেলাম, ব্যারিস্টার হইনি। জীবনের গোড়াকার কাঠামোটাকে নাড়া দেবার মতো ধাক্কা পাইনি।’ ভাগ্যিস! শেষাবধি ওই গোড়ার কাঠামোটা অটুট ছিল। পরিণামে আমরা পেয়েছি ‘ছেলেবেলার’ মতো এমন অজস্র অনবদ্য বই। আর রবীন্দ্রনাথের মতো এক মহামানবকে।
পঁচাত্তর পৃষ্ঠার ছোট্ট বইটি বাজারে পাওয়া যায় নানান মোড়কে। বহু প্রকাশক বইটার। তবে আমি পড়েছি বিশ্বভারতীর আদি সংস্করণ।
রবীন্দ্র-ভ্রমণ শুভ হোক!