ঘরে বসে কম্পিউটারে বা ডিভিডি প্লেয়ারে তো সিনেমা দেখা যায়ই, কিন্তু বন্ধুরা মিলে সিনেমা হলে গিয়ে বড় পর্দায় সিনেমা দেখার মজাই আলাদা। আর কিছু সিনেমা তো আছে যেগুলো বড় পর্দায় না দেখলে ঠিক জমে না। তবে ১৮৯৭ সাল থেকে মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখলেও এই একুশ শতকে এসেও আমরা অনেকে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সময় অন্যের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াই। মাঝে মাঝেই জেনে বা না জেনে এমন কিছু কাজ করি, যা অন্যের সিনেমা দেখার মজাটাই মাটি করে দেয়। আর সব কাজের মতো হলে গিয়ে সিনেমা দেখার জন্যও রয়েছে বিশেষ কিছু নিয়ম। নিয়মগুলো মেনে চললে নিজের যেমন সুবিধা হয়, তেমনি হয় বাকিদেরও। সিনেমা হলের তেমনই সাধারণ কিছু আদবকেতা চলো জেনে নিই।
টিক টিক যেন হয় ঠিক ঠিক
সিনেমা হলে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করে গেলে তোমারই লস। পুরো টাকা দিয়ে পুরো সিনেমাটা না দেখতে পেলে সিনেমা হলওয়ালার কোনো ক্ষতি নেই। আর সিনেমা শুরু হয়ে যাওয়ার আধঘণ্টা পরে হাঁপাতে হাঁপাতে উপস্থিত হয়ে অন্ধকারে এখানে-সেখানে বা অন্যের গায়ে-পায়ে ধাক্কা খেয়ে নিজের নির্ধারিত আসন খুঁজতে থাকাটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। চেষ্টা করবে বন্ধুদের মধ্যে সবার আগে পৌঁছানোর। আগে পৌঁছে টিকিট কেটে নিজেদের জন্য নির্ধারিত আসনগুলো খুঁজে রাখতে পারো। চাইলে সবার জন্য পপকর্নও কিনে রাখতে পারো। এতে করে তাদের কাছে বাহবাও পাবে। সঙ্গে তাদের আদর্শ হয়েও থাকবে।
অন লাইনেই থেকো
টিকিট কাটার জন্য বা সিনেমা হলে ঢোকার সময় লাইনেই থেকো, বেলাইনে নয়। আবার লাইনে দাঁড়িয়ে কোনোভাবেই সামনের জনকে ধাক্কা দেওয়াটা মন্দ কাজই হবে মনে হয়। হুট করে লাইনের মাঝে ঢুকে পড়াটাও খুব খারাপ হবে। টিকিটের দাম যেহেতু তোমার জানা, তাই টাকা আগে থেকে প্রস্তুত রাখলে কম সময়ে তাড়াতাড়ি টিকিট নিয়ে চলে যেতে পারবে।
পশ্চাদ্দেশ দেখিয়ো না
নিজ সারিতে প্রবেশের সময় দর্শকের দিকে মুখ করে অর্থাৎ পর্দার দিকে পিঠ দিয়ে প্রবেশ করবে। বসে থাকা মানুষকে সামনে দিয়ে নিজেদের পেছন দিক দেখিয়ে হাঁটা তাদের জন্য বেশ অপমানজনক। আর তোমার হাইহিল বা জুতোর নিচে যেন বসে থাকা দর্শকের পা চিড়েচ্যাপ্টা না হয়, সেদিকটাও তোমাকেই খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু।
মুঠোফোন থাকুক মুঠোতেই
সিনেমা চলার সময় মুঠোফোনের রিংটোন বন্ধ রাখাটাই মনে হয় উত্তম। চিন্তা করে দেখো নিস্তব্ধ কোনো দৃশ্যের মাঝখানে যদি হঠাত্ তোমার ফোনটি সুতীব্র চিত্কার দিয়ে ওঠে তাহলে কী ঘটবে। অন্ধকারে মুখ লুকানোর জায়গা পেলেও গালির হাত থেকে কিন্তু বাঁচতে পারবে না। অনেকের ধারণা, মুখ-হাত দিয়ে ধরে ফিসফিস করে কথা বললে হয়তো কোনো সমস্যা হয় না। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সবাই না হলেও সামনে-পেছনের লোকজন তো শুনতে পায়ই। আর খুব প্রয়োজন হলে ফোন নিয়ে বাইরে বের হয়ে কথা বলো। সিনেমার মাঝে বন্ধুকে মেসেজ বা ফেসবুকে চেক-ইন দেওয়া যাবে না। অন্ধকারের মাঝে মুঠোফোনের আলো জ্বলে থাকলে তা পেছনের দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আর আব্বু-আম্মুর সঙ্গে গেলে ভাগ্যে বকাও জুটতে পারে।
কত কথা বলে রে
একান্তই বাধ্য না হলে কোনো কথা ঠিক হবে না। আশপাশের লোকজন সিনেমা হলে গেছে সিনেমা দেখতে, তোমার টক শো শুনতে নয়। নিজের ভাবনাটা নিজের কাছে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সিনেমা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনার সময় তো আর ফুরিয়ে যাচ্ছে না। সিনেমাটা তোমার আগে থেকেই দেখা হয়ে থাকলে রানিং কমেন্ট্রি দিয়ে অন্যের মজা মাটি কোরো না। হাসির যেকোনো দৃশ্যে হাসি আসবেই। তবে খেয়াল রাখবে, হাসিটা যেন হয় মার্জিত এবং পরিমিত।
অযথা আসন ছেড়ে উঠো না
বারবার আসন ছেড়ে ওঠা অন্যের বিরক্তির কারণ হয় সব সময়। তুমি উঠলে তোমার পেছনের জনের দেখতে সমস্যা হবে। আবার তুমি বাইরে গেলে তোমার সারির সব মানুষকেই বিরক্ত করা হবে। তোমার যা কিছু প্রয়োজন, সেগুলো ভেতরে ঢোকার আগেই গুছিয়ে নেবে। ভেতরে ঢোকার পর কোনো কিছুর প্রয়োজন বোধ করলে বিরতি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
সামনের আসনে পা নয়
তুমি দিতে চাইলেও তোমার সামনের জন বোধ হয় শরীরে বিনামূল্যের ম্যাসাজটি পছন্দ করবে না। তার আসনের পেছনে লাথি মারাটা অবশ্য ম্যাসাজ করার সঠিক পন্থা নয়ও। গুঁতাগুঁতি করার চেয়ে শান্তভাবে বসে থাকাটাই বরং সমীচীন হবে।
বাঁ-ডান-বাঁ
সৈন্যদের মতো মার্চ করতে বলছি না। হলে গিয়ে নিজ আসনে বসার পর অনেকেই চিন্তায় পড়ে যায় কোন পাশের কাপ-হোল্ডারটি তার। মনে রাখবে, তোমার আসনের বাঁ দিকেরটি তোমার ব্যবহারের জন্য, ডানেরটি নয়।
সামাজিকভাবে দায়িত্ববান থাকো
ভুলে গেলে চলবে না, তুমি চলে যাওয়ার পর তোমার স্থানে আরেকজন এসে বসবে। তোমার কারণে তার যেন কোনো সমস্যা না হয়, এটি দেখার দায়িত্ব কিন্তু তোমারই। পপকর্ন বা অন্য যেকোনো খাবার খেয়ে নিচে একগাদা জমিয়ে রেখে যাবে না। নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলো।
এসব নিয়ম মানার পাশাপাশি নিজের চোখ-কান খোলা রাখবে। তোমার সাধারণ বুদ্ধি দিয়েই যেকোনো
অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা সামলে নিতে পারবে। শুধু একটাই কথা, যে সমস্যায় তুমি পড়তে না চাও, ঠিক সেই
সমস্যাটা তুমি অন্যের জন্য তৈরি কোরো না।
মডেল: দেবু, রিনাত, তানহা, তৃণা ও নভেল | কৃতজ্ঞতা: ব্লকবাস্টার সিনেমাস