যদি আমরা মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ ব্যবহার করি...

কী কী করতে চাও তুমি? পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেতে চাও? সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটার হতে চাও? লেখক হতে চাও? নাকি আঁকতে চাও চমৎকার কার্টুন? তোমার এত কিছু চাওয়ার সব কটিই কিন্তু পূরণ করা সম্ভব। কীভাবে? তোমার মস্তিষ্ক ব্যবহার করেই এসব সম্ভব।

তোমার মস্তিষ্ক যদি সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারো, তাহলে এগুলোর সবকিছুই করা সম্ভব। কয়েক শ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা নানাভাবে আমাদের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করছেন। মস্তিষ্কের গঠন, উপাদান, কার্যক্ষমতা—এসব বিষয়ে ভাবছেন তাঁরা। তবু প্রতি মুহূর্তেই মস্তিষ্কের নানা অজানা বিষয় সামনে আসছে। তাই মস্তিষ্ক সম্পর্কে পুরোপুরি এখনো আমরা জানতে পারিনি।

অনেকেই ভাবে, যার মস্তিষ্ক যত বড়, তার চিন্তা করার শক্তি তত বেশি। ধারণাটি কিন্তু ভুল। মানুষের থেকে তিমির মস্তিষ্ক অনেক বড়। কিন্তু তিমির থেকে মানুষ বেশি বুদ্ধিমান। নেতৃত্ব, জ্ঞান–বিজ্ঞান, সাহিত্যচর্চা—এসব বিষয়ে মানুষ উন্নতি করতে পেরেছে। আবার তোমার ক্লাসে প্রথম হওয়া বন্ধুর মস্তিষ্কের সঙ্গে তোমার মস্তিষ্কের কোনো পার্থক্য নেই। একজন সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের ওজন ১ হাজার ৪০০ গ্রাম। মোটামুটি আমাদের সবার মস্তিষ্কের ওজনই এর কাছাকাছি। প্রতিটি প্রাণীর মস্তিষ্কই এমন মানানসই আকৃতিতে বানানো, যেন সেটা আমাদের দেহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। আকার যা–ই হোক না কেন, প্রতিটি প্রাণী যেন তার আশপাশের সমস্যা কাটিয়ে জীবন ধারণ করতে পারে, সেটা ঠিক রাখা মস্তিষ্কের কাজ।

কিন্তু এত কসরতের পরেও মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে। মানুষ তার মস্তিষ্কের পুরোটা ব্যবহার করতে পারে না। যাঁরা একটু বেশি ব্যবহার করতে পেরেছেন, তাঁরাই বদলে দিয়েছেন পৃথিবী। ধারণা করা হয়, লেওনার্দো দা ভিঞ্চি, বব ডিলান, স্টিভ জবস, অ্যারিস্টটলসহ দুনিয়ার সব জ্ঞানী মানুষই তাঁদের মস্তিষ্ক ব্যবহারের মাত্রাকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন।

তুমি কীভাবে মস্তিষ্কের পুরোটা ব্যবহার করবে? শুরুতেই তোমার টেবিলের কোণে পড়ে থাকা ধুলোজমা রুবিকস কিউবটা সমাধান করে ফেলতে পারো কিংবা দাবা খেলতে পারো বন্ধুর সঙ্গে। অথবা সমাধান করার চেষ্টা করতে পারো কঠিন কোনো গাণিতিক সমস্যা।

তবে একটা সহজ পথেরও সন্ধান দিতে পারি তোমাকে। কী করতে ভালো লাগে তোমার? ছবি আঁকতে? অঙ্ক করতে, নাকি ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে? এগুলোর সব কটিই কিন্তু তোমাকে আরও চৌকস করে তুলবে। তবে এগুলোর সবকিছু কিন্তু একসঙ্গে করতে পারবে না তুমি।

জ্ঞানচর্চা ছাড়াও অনেক কাজ করে আমাদের মস্তিষ্ক। খাবার পরিপাক, শ্বাস নেওয়া, দেখা, এমনকি শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণেও মস্তিষ্ক কাজ করে। তাই আমরা চাইলেও মস্তিষ্কের পুরোটাই আমাদের প্রিয় কাজের অনুশীলনে ব্যবহার করতে পারব না। আমাদের মস্তিষ্ক পুরোটা কর্মক্ষম হয়ে উঠলেও স্বাভাবিক দৈহিক কাজের জন্য তা সম্ভব নয়।

তাই এই লেখার শুরুর দিকে তোমাকে যে বলেছিলাম, মস্তিষ্কের ১০ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করতে পারে, সেটাও কিন্তু একধরনের ভুল তথ্য। আমাদের মস্তিষ্কের ১০ শতাংশ হচ্ছে নিউরন। আর বাকি ৯০ শতাংশ গ্লিয়াল কোষ। এই ১০ শতাংশের মধ্যে আলাদা ধরনের কোষ আছে। নানা রকম তথ্য বিশ্লেষণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজ করে এ কোষগুলো। অন্যদিকে গ্লিয়াল কোষগুলো মূলত নিউরন কোষকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে, সেগুলোতে প্রোটিন সরবরাহ করে। আমাদের সবার মস্তিষ্কই একই গঠনে বানানো।

কারও মস্তিষ্কের আকৃতিতে ব্যবধান থাকলেও নিউরন কোষ আর গ্লিয়ার কোষের অনুপাত একই রকম থাকে।

তাহলে এখন উপায়? উপায় সোজা। অনুশীলন করতে থাকো। নানাভাবে মস্তিষ্ক ব্যবহার করো। প্রতিদিন নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। নতুনভাবে নতুন কিছু শিখতে হবে। নিজেকে নিজের থেকে আরেকটু ভালো করার চেষ্টা করতেই পারো তুমি। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে চিন্তা করবে যে তুমি আজ এমন কী শিখেছ, যা তুমি গতকাল জানতে না? এভাবে নতুন নতুন বিষয়ের সঙ্গে তোমার পরিচয় ঘটলে তোমার মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে।

তবে এসব করতে গিয়ে স্বাস্থ্যের অবনতি করা চলবে না কিন্তু। নিয়মিত ছয়–সাত ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে প্রতিদিন। আর পরিমিত পরিমাণে পানি খেতে হবে।

এসব নিয়ম মেনে চললে তোমার মস্তিষ্ক সহজেই ভালো থাকবে। আর তখনই তুমি তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করতে পারবে।

ইনিশ ডট কম অবলম্বনে