আমার মাকে আমি কোনো কথাই বুঝিয়ে বলতে পারি না। কারণ, মা আমার কথা শুনতে চান না। সব সময় নিজের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত ও সঠিক মনে করেন। আমার শখ বই পড়া। আমি শার্লক হোমস পড়তে চাইলে বলেন, আমি নাকি শুধুই চোর-ডাকাতের গল্প পড়ি। অথচ আমি অন্যান্য বইও বেশি পড়ি। মা এটা বুঝতে চান না। আমি যদি বোঝাতে চাই, মা আমাকে মারধর করেন। তখন জীবনটাকে বিস্বাদময় মনে হয়। আমার বয়স মাত্র ১১। মা মনে করেন, আমাকে অনেক জ্ঞানী-বুদ্ধিমান হতে হবে। আমিও হতে চাই। কিন্তু মা আমার মনোবল ভেঙে দেন তাঁর আচরণের মাধ্যমে। এখন আমি কী করব? আমি কোনো কাজেই মনোযোগ বসাতে পারি না। আমাকে পরামর্শ দাও।
বাহরিন বিনতে ইউসুফ
উত্তর: প্রথমত মা কেন এ ধরনের আচরণ তোমার সঙ্গে করছেন, তা জানা দরকার। তাঁর মধ্যে কোনো হতাশা, বিষণ্নতা বা নিরাপত্তাহীনতার বোধ কাজ করছে কি না, সেটা জানতে হবে। বই পড়ার বিষয়ে তাঁর হয়তো কিছু ভুল ধারণা আছে—শার্লক হোমস কে, তাঁর বইয়ে কী আছে, এ বিষয়গুলো মাকে বোঝানো জরুরি—প্রয়োজনে তাঁকে সেই বইগুলো পড়তে দিতে হবে। সন্তানকে শারীরিক নির্যাতন করলে তার পক্ষে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হওয়া কঠিন। তোমার মা যদি আমাদের এই পরামর্শ পড়ে থাকেন, তবে তিনি জানবেন যে জ্ঞানী আর বুদ্ধিমান হওয়ার জন্য পাঠ্যবইয়ের চেয়ে অন্যান্য বই পড়া অনেক জরুরি, আর পরীক্ষার জিপিএর চেয়ে বেশি দরকার সামাজিক দক্ষতা। এর জন্য ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। মা-বাবার কোনো আচরণ সন্তানের মনোবল কমিয়ে দিলে, ভবিষ্যৎ জীবনে সফল হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এ মুহূর্তে তুমি যেটা করতে পারো তা হচ্ছে মা বা কারও আচরণে হতাশ না হয়ে, দুঃখ না পেয়ে নিজেকে তৈরি করতে থাকো। একসময় দেখবে, তোমার সফলতায় মা নিজেও আনন্দিত হবেন। মনে রাখবে, মা-বাবা যা করেন, তা সব সময় সন্তানের মঙ্গলের জন্যই করেন। কিন্তু অনেক সময় তাঁরা যেভাবে করেন, তা সঠিক হয় না। তাতে সন্তানের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। মা-বাবার জন্য বিষয়টি বোঝা অনেক জরুরি।
এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - ‘মনোবন্ধু’, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।