ফেসবুকের নীল পর্দায় সাইক্লিং নিয়ে কত কিছুই দেখো তোমরা। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গলে মাইলের পর মাইল পথ কত মানুষ সাইকেল চালায়। কারও সাইকেল একটু দামি। আবার কারোটা খুব সাধারণ। এখন তো সাইকেলে চড়ে তাঁবু গেড়ে ক্যাম্পেও যায় অনেকে। চারপাশের মানুষের সাইক্লিং নিয়ে এত উদ্যোমী চিন্তা দেখে তুমি হয়তো ভাবতে বসো, ‘হায়, আমার কী হবে!’
অন্যদের এই কাজ দেখে তুমি যখন সংকল্প করো সাইকেল চালিয়ে দূরদূরান্তে যাওয়ার, তখনই বাধে বিপত্তি। কারণ, তোমার দীর্ঘ সময় ধরে সাইকেল চালানোর শক্তি নেই। সেই শক্তি তৈরির জন্য তোমার চাই নিয়মিত অনুশীলন। তবে হুট করে এভাবে শুরু করা চলবে না। নিয়মিত সাইকেল চালাতে হবে। দূরত্ব বাড়ানোর অনুশীলন করতে হবে ধীরে ধীরে। তবে সাইক্লিস্ট হিসেবে তুমি দুর্বল, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। নিয়মিত অনুশীলন করলে তুমি অন্যদের মতো দূরদূরান্তে সাইকেল চালিয়ে যেতে পারবে।
এ জন্য অবশ্য একা অনুশীলন করার চেয়ে তোমার মতো সাইকেল চালায়, এমন বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেল চালাতে যেতে পারো। এতে কখনো তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়লেও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে চনমনে হয়ে উঠতে পারবে। একসঙ্গে অনুশীলনের ক্ষেত্রে কোনো আঘাত পেলেও সেটা সামলে নেওয়ার জন্য পাশে থাকবে তোমার বন্ধুরা।
তবে এ ক্ষেত্রে ছোটখাটো আঘাতেই সাইক্লিং ছেড়ে দেওয়া চলবে না। আবার আঘাত নিয়েই সাইকেল চালাতে যেয়ো না। সাইকেল চালাতে গিয়ে চোট পেলে বাসায় লুকাবে না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে যাবে। ঠিকমতো সেরে উঠলে তবেই আবার সাইকেল চালানো শুরু করবে।
তবে এই দল বেঁধে সাইকেল চালাতে গিয়েও সংযত থাকা প্রয়োজন। অনেক দূরের পথে আনন্দ করতে গিয়ে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সেই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। তোমাদের মধ্যে অনেকে সাইকেল চালিয়ে স্টান্ট করতে চেষ্টা করো। তবে এর জন্য দক্ষ বা অভিজ্ঞ কারও থেকে সাহায্য নিতে হবে। তার উপস্থিতিতে অনুশীলন করতে হবে। স্টান্ট করার সময় অবশ্য গ্লাভস, হেলমেট ও সেফটি গার্ড ব্যবহার করতে হবে। নিজের ব্যক্তিগত সোশ্যাল প্রোফাইলের জন্য আকর্ষণীয় ছবি তোলার চেষ্টা করবে না। তুমি সাইক্লিং করো, সেটা প্রকাশের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চমককপ্রদ ছবি দেওয়া কিন্তু জরুরি নয়।
কেউ কেউ আবার সাইক্লিংয়ের শুরুটাই করে শারীরিক ব্যায়ামের জন্য। ওজন কমানো, স্ট্যামিনা বাড়ানো, পেশির শক্তি বাড়ানো এগুলো নিয়েই ব্যস্ত থাকে তারা। তবে সাইক্লিং করার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু সেটা নয়। অনেকে এ বিষয়ে জোর দিতে গিয়ে আর সাইক্লিংয়ে নজর দেয় না। সাইকেল চালানোর উদ্দেশ্য আনন্দ পাওয়া, শরীরচর্চার সঙ্গে সঙ্গে নতুনভাবে চারপাশ ঘুরে দেখা। তাই শারীরিক কসরতের জন্য শুরু করলেও শুধু আনন্দের জন্যই সাইকেল চালানো উচিত।
আনন্দ নিয়ে যখন চালাবে তখন তাহলে এত বাধ্যবাধকতা কেন? তোমাকে কেউ হয়তো বলেছে রোজ সকাল পাঁচ কিলোমিটার সাইকেল চালাতে হবে। তোমার ইচ্ছা না থাকলেও তুমি প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ো এই সময়। কিন্তু এই যে বাধ্যবাধকতা থেকে নিয়ম মেনে সাইকেল চালানো কিন্তু ঠিক নয়। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এভাবে সাইকলে চালালে তোমার শারীরিক উন্নতি তো হবেই না, বরং তুমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারো।
তাই সব মিলিয়ে আপন মনেই উপভোগ করো তোমার সাইক্লিং। আর সাইকেলে চেপেই ঘুরে দেখো গোটা বিশ্ব।