প্রিয় মনোবন্ধু,
কেমন আছো? মানুষ অনেক সমস্যায় পড়ে। আর সেই সমস্যার সমাধান অনেকে পায়, অনেকে পায় না। তাই আমিও তোমাকে আমার সমস্যাটির কথা বলতে চাই। আর সেটি হলো, যখন আমি আমার স্যার, ম্যাডামদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি তখন আমার পা দুটো খুব জোরে কাঁপতে থাকে। এমনকি ক্লাসে সবার সামনে এসে রিডিং পড়তে গেলেও তাই হয়। অনেক চেষ্টার পরও আমি এর সমাধান পাই না। তাই দয়া করে আমাকে এই সমস্যার সমাধান দিয়ো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
সপ্তম শ্রেণি, গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা
উত্তর: ধন্যবাদ তোমাকে, সমস্যাটি খুলে বলার জন্য। এটি তেমন কোনো বড় সমস্যা নয়। তুমি সামাজিক পরিবেশে বিশেষ করে স্যার–ম্যাডামদের সামনে অতি উৎকণ্ঠিত থাকো। ফলে তোমার উৎকণ্ঠা বা এংজাইটি তোমার বেশ কিছু শারীরিক পরিবর্তন আনে। যেমন পা কাঁপা। কারও কারও বুক ধড়ফড় করে, মুখ শুকিয়ে আসে। এগুলোর সবই এংজাইটর লক্ষণ। তোমাকে বেশি বেশি করে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে, স্যার–ম্যাডামদের কাছ থেকে দূরে থাকা চলবে না। যতই পা কাঁপুক, তত বেশি করে রিডিং পড়ার অভ্যাস করবে, সাহস নিয়ে স্যার–ম্যাডামদের সামনে দাঁড়াবে।
বুক ভরে বড় বড় শ্বাস নেবে, শরীরের মাংসপেশিকে ক্রমান্বয়ে শক্ত আর শিথিল করার ব্যায়াম (রিল্যাক্সেশন পদ্ধতি, ইউটিউবে দেখে নিতে পারো) চর্চা করো। আর তোমার স্কুলের পাশেই জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিউট, অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে একদিন সেই হাসপাতালে চলে এসো, সাইকিয়াট্রিস্ট তোমাকে আরও পরামর্শ আর প্রয়োজন হলে ওষুধও দিয়ে দেবেন।
প্রিয় মনোবন্ধু,
হয়তো আমার মানসিক সমস্যা। কিন্তু আমি ভীষণ ভুগছি এ সমস্যায়। কাউকে বলতেও পারছি না, তোমায় বলছি। যদি সম্ভব হয়, সাহায্য করো মনোবন্ধু। আমার সমস্যাটা এক অদ্ভুত সমস্যা। টিভিতে, সিনেমায় কিংবা কোনো ভিডিও দেখলেই ভয় লাগে। আর এটা কোনো ভূতের ভিডিও দেখে ভয় নয়, ভয় হয় যখন দেখি সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসের পানি। সমুদ্রের ভয়ংকর সব ছবি দেখেই আমার খুব ভয় করে। এর চেয়েও বেশি ভয় লাগে যখন দেখি হাঙর বা তিমি মাছের ছবি অথবা ভিডিও। এখন এ কথা লিখতেও ভয়ে আমার হাত কাঁপছে। মনে হচ্ছে আমার ঘরের দেয়াল ভেঙে এসব চলে আসবে। সত্যি কথা বলতে, সরাসরি নিজের চোখে কখনোই এসব দেখিনি। কিন্তু টিভি ও মোবাইলে দেখেছি। যখন কোনো বইয়েও এসবের ছবি দেখি, তখনো খুব ভয় লাগে। পাঠ্যবইয়ে এ ধরনের কোনো ছবি থাকলে এর ওপর কলম দিয়ে স্কেচ করে দিই, যাতে ওই ছবি দেখে আর ভয় না লাগে।
কিশোর আলোর ২০১৭ নভেম্বর সংখ্যায় একটি বড় নীল তিমির ছবি ছাপানো হয়েছিল। নীল তিমির ছবিটা দেখে আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। ভয় পেয়ে পৃষ্ঠা দুটি আমি ছিঁড়ে ফেলে দিই। যেদিনই আমি এ ধরনের কোনো কিছু দেখি, সেদিন রাতে একা ঘুমাতে পারি না। এমনকি ভয়ে ওয়াশরুমেও যেতে পারি না। আমি এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই।
মনোবন্ধু, তোমার কাছে বিশেষ অনুরোধ, আমাকে এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য সাহায্য করো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
নবম শ্রেণি, হাটহাজারী পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
উত্তর: ধন্যবাদ তোমাকে। তুমি যে ভয়ের কথা বলেছ তা ফোবিয়া বা অহেতুক ভীতিজনিত সমস্যার কারণে হতে পারে। তোমাকে মনে রাখতে হবে, যে ছবিগুলো দেখে তুমি ভয় পাচ্ছো সেগুলো নিতান্তই ছবি, কোনোভাবেই তোমাকে ক্ষতি করতে পারবে না। কোনো ছবিকরের পক্ষে তোমার ক্ষতি করা সম্ভব নয়। তুমি প্রথমে মনে মনে যে ছবিগুলোকে ভয় পাও তার ইমেজ কল্পনা করবে, প্রথমে কষ্ট হতে পারে, তাই অল্প সময় ধরে সেই তিমি, হাঙর বা জলোচ্ছ্বাসের ছবি চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকবে, এরপর বই বা ইন্টারনেট থেকে তিমি, হাঙর আর জলোচ্ছ্বাসের ছবি দেখা শুরু করবে, সম্ভব হলে ভিডিও দেখবে। কখনোই এগুলোকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করবে না। প্রথম প্রথম কষ্ট হতে পারে, তাই অল্প সময় ধরে করবে। একটা পর্যায়ে দেখবে তোমার এই ভীতি চলে গেছে। আর যদি সুযোগ পাও তবে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের বহির্বিভাগে সাক্ষাৎ করতে পারো। ফোবিয়া ছাড়াও কখনো অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের কারণেও এমনটা হতে পারে, তাই ওপরে দেওয়া পরামর্শে তোমার সমস্যা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নেবে।
মনে রাখবে ফোবিয়া নিতান্তই একটি মনের সমস্যা, এটিকে যত কম গুরুত্ব দেবে ততই তোমার ভয় কাটতে থাকবে। ভয় ভয়কে বাড়ায় আর সাহস সাহসকে বাড়ায়। ভয়কে জয় করো, প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও ধৈর্য ধরলে ঠিক হয়ে যাবে।
প্রিয় মনোবন্ধু,
আমার সমস্যাটা অন্য সবার মতো নয়। একটু বিচিত্র। আমি ফুটবল খেলতে খুব ভালোবাসি এবং মোটামুটি ভালোই খেলি। আমার স্বপ্ন হলো, আমি ফুটবল খেলে দেশের জন্য কিছু করতে চাই। কিন্তু আমার মা–বাবা তা চান না। তাঁরা আমাকে খেলাধুলা না করে ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। যাতে আমি আগ্রহী নই। আবার পড়াশোনাতেও আমি খুব বেশি খারাপ নই। গত বার্ষিক পরীক্ষায়ও অষ্টম হয়েছি। পড়াশোনা করে কি কেউ খেলাধুলা করতে পারে না? তোমার পরামর্শ চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বাংলাদেশ
উত্তর: পড়াশোনা আর খেলাধুলার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। বিশ্বের বহু নামী ফুটবলার আর ক্রিকেটোর রয়েছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও খেলোয়াড়ের সংখ্যাও কম নয়। অনিল কুম্বলে একজন ইঞ্জিনিয়ার, রাহুল দ্রাবিড় একজন উচ্চ ডিগ্রিধারী, সুতরাং তাঁরা পড়ালেখা করেও জগদ্বিখ্যাত ক্রিকেটার হয়েছেন। তাই ক্রিকেটার হতে হলে পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অবশ্যই পড়ালেখা করে খেলোয়াড় হওয়া যায়। তবে যেহেতু তুমি এখন স্কুলে পড়ছ, তোমার মূল লক্ষ্য হবে এখন পড়ালেখা করা, আর খেলাধুলা অবশ্যই চলবে। মা–বাবাকে বুঝিয়ে বলবে, আমাদের লেখাটা দেখাবে। তাঁদের বুঝতে হবে যে খেলা কিন্তু একটা অনেক বড় ক্যারিয়ার। তুমি যদি সত্যি সত্যি খেলোয়াড় হতে চাও তাহলে খেলা নিয়েও কিন্তু পড়তে হবে।
ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার চেয়ে একজন ভালো মানুষ হওয়া অনেক জরুরি। আর ভালো মানুষেরা তার পেশা আর কাজকে সব সময় ভালোবাসে। তুমি বড় হয়ে যা হতে চাও সেদিকে লক্ষ্য স্থির রাখো আর পড়ালেখা তোমাকে সেই লক্ষ্যেই নিয়ে যাবে।