র্যাংক কি শুধু বড়রাই পাবে? জামার ওপরে একটার পর একটা ব্যাজ বাড়বে শুধুই পদোন্নতি পাওয়া আর্মি অফিসারদের? এই ভাবনা এবার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। কাল থেকে নিজেই শুরু করতে পারো ব্যাজ ধারণ। শুধু জামার ওপর কেন, ব্যাগ, কোট বা সোয়েটারের সঙ্গে নানা রকম ব্যাজ লাগিয়ে নিতে পারো। অনেকেই বাজার থেকে ব্যাজ কিনে নিজের স্কুলব্যাগ ভরিয়ে ফেলছে। নিজে ব্যবহারের পাশপাশি বন্ধুদের উপহার হিসেবেও দিতে পারো ব্যাজ ।
অবশ্য বন্ধুদের ব্যাজ দেওয়ার আগে মনিপুর স্কুলের ফারহান তৌফিকের বুদ্ধিটা শুনে নিতে পারো। নিজের ব্যাগে আটটা ব্যাজ ধারণকারী তৌফিক বলল, ‘ব্যাগের সঙ্গে ব্যাজ পরতে ভালো লাগে। তবে স্কুলে গেলে সারাক্ষণ গোয়েন্দার মতো ব্যাগ পাহারা দিতে হয়। সুযোগ পেলেই বন্ধুরা হাওয়া করে দিচ্ছে ব্যাগের ব্যাজ। তাই বন্ধুদেরও উপহার দিয়েছি। সেটা আবার একটু নাটকের সঙ্গে। যেমন: এক বন্ধুকে বললাম, তুই হলি আমাদের দুষ্টুমির সরদার। তাই তোর জন্য এই ভ্যাম্পায়ারের ছবিসহ ব্যাজ। আরেক বন্ধুকে দিয়েছি একটা স্মাইলি। কারণ, সে আমাদের জোকস বলে মজা দেয়। গণিতে সেরা বন্ধুকে দিয়েছি ম্যাথ অলিম্পিায়াডের ব্যাজ।’
কিশোর থেকে তরুণ সবাই ব্যাজ পরছে হরহামেশা। আর তাই রাজধানীতে ব্যাজ তৈরি ও বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। রাজধানীর কাঁটাবনের ক্রেস্টের দোকান আর্ট অ্যান্ড গিফটের স্বত্বাধিকারী কাওসার হোসেন বলেন, ‘আগেও ব্যাজ তৈরি করতাম, তবে সেটা অনেক কম পরিমাণে। আজকাল তো দেখছি স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা প্রচুর পরিমাণে ব্যাজ কিনছে এবং পরছে। ফলে আমরাও আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ব্যাজ তৈরি করছি। প্লাস্টিক ও স্টিল—এই দুই ধরনের ব্যাজ পাওয়া যায়। কেউ যদি ফরমাশ দিয়ে তৈরি করে নেয়, তাহলে অনেক অল্প টাকায় পেয়ে যাবে।’
তৈরি হয় যেভাবে
প্লাস্টিক বা স্টিলের গোলাকার, চারকোণা, ত্রিভুজ ইত্যাদি আকৃতির একটা প্লেটের ওপরে দোকান থেকে তোমার পছন্দমতো একটা নকশা দেখিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া নিজেরা নকশা করেও দিতে পারো। সেটা ব্যাজ তৈরির মেশিনে দিয়ে বাছাই করা প্লেটের ওপর ফেলে ছাপ দেওয়া হয়। পেছন দিকে কাপড় বা ব্যাগের সঙ্গে আটকানোর জন্য একটা সেফটিপিন বা ঢাকনাসহ আলপিন জুড়ে দেওয়া হয়। ব্যস, এটুকুই। আকার হিসেবে সাধারণত তিন ধরনের ব্যাজ দেখা গেল বাজারে। সোয়া ইঞ্চি, দেড় ইঞ্চি ও দুই ইঞ্চি।
কেমন নকশা থাকতে পারে
যাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা আছে, তারা গুগলে সার্চ দিয়ে হাজার হাজার নকশা থেকে বেছে নিতে পারো। এ ছাড়া বিশেষ কোনো কথা বা নকশা নিজেরা তৈরি করে দিতে পারো। এ তো গেল যারা বিশেষ দিন উপলক্ষে বিশেষ ব্যাজ বানাতে চাও তাদের জন্য পরামর্শ। এ ছাড়া একটা-দুটা কিনতে চাইলে বাজারে দেখা মিলবে নানা ধরনের নকশার ব্যাজ।
ব্যাজে কোন ধরনের নকশা বেশি চলছে জানতে চাইলে বিডি ফাইভের স্বত্বাধিকারী জয়দ্বীপ সরকার বলেন, সাধারণত স্মাইলি ও কাটুর্ন চরিত্রের ব্যাজই বেশি কিনছে কিশোররা। বাজারে যেসব ব্যাজ আছে, তার মধ্যে ইমোশন স্মাইলি চিহ্নিত ব্যাজগুলোই বেশি দেখা চোখে পড়ল। কোনোটায় মিষ্টি হাসি, কোনোটা আবার চাঁদের মতো বাঁকা হাসি, আছে সন্দেহজনক হাসি বা আবেগপূর্ণ হাসি। প্রফেশন বুঝেও ব্যাজ পরতে পারো। যেমন: নৃত্যশিল্পী, সংগীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, খেলোয়াড়, শিক্ষার্থীসহ নানা ধরনের প্রফেশন চিহ্নিত ব্যাজ আছে। ট্যাবলেট, স্মার্টফোন, চশমা, আইসক্রিম, চকলেট ইত্যাদি নিয়েও আছে নকশা। উলফ এগ, বিড়াল, খরগোশ—কী নেই ব্যাচের নকশায়! নানা ঢংয়ের ফুটবল দিয়ে বানানো স্মাইলি মিলবে অনেক দোকানে। এ ছাড়া যেহেতু ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে এই মাসেই, তাই ক্রিকেট ব্যাট, বল বা স্ট্যাম্প নকশার ব্যাজও বেশ মানাবে এখন।
কেনাকাটার তথ্য চাও!
তাহলে জেনে নাও, বাজারে প্লাস্টিক ও স্টিলের ব্যাচের দাম দুই রকম। আবার ব্যাচের আকারটা ছোট না বড় সেটাও একটা ফ্যাক্টর। তবে প্লাস্টিকের ব্যাজ হলে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যেই কিনতে পারবে। আর স্টিলের হলে দাম ১০ থোক ১৫ টাকা বেশি হবে। ঢাকায় ব্যাজ কিনতে চাইলে যেতে পারো নিউমার্কেটে। এ ছাড়া নীলক্ষেত ও কাঁটাবনের দোকনগুলোয় খুচরার পাশাপাশি ফরমাশ দিয়ে তৈরি করে নিতে পারো। সে ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০০ পিস বানাতে হবে। এতে অবশ্য খরচ অনেক কম হবে। আকারভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় তৈরি করে নিতে পারবে। বসুন্ধরা সিটি, পল্টন, গুলিস্তানের খেলাধুলার দোকানগুলোতেও পাবে ব্যাজ। আর ঢাকার বাইরের যারা ব্যাজ কিনতে চাও, তারা ই-কমার্স সাইটে খুঁজে দেখতে পারো। অনেক সাইটে মৌসুম বুঝে ব্যাজ তোলে। কিশোর আলোর পাঠক বলে তোমাকে আরও একটা তথ্য জানিয়ে রাখি, কিশোর আলোর ‘কিআনন্দ’ উৎসব উপলক্ষে কিন্তু কিআর বিশেষ ব্যাজ বানানো হয়েছিল। এই ব্যাজ কিনতে চাইলে তোমাকে কিআ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। আর নানা সময়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠোনেও থাকে কিআর স্টল। চাইলে সেখান থেকেও সংগ্রহ করা যাবে কিআর ব্যাজ।
মডেল: বাসনীন ও অরিয়ন
ছবি: সুমন ইউসুফ