অনেক মা-বাবাই এমন কথা বলেন। বলেন, আমার ছেলে বা মেয়েটা বাংলায় ভালো না। আমি কিন্তু ওই ছেলে বা মেয়েকে একটুও দোষ দিই না। আসল দোষটা আমাদের শিক্ষকদের। কিছুটা দোষ মা-বাবারও। আমরাই ভুল পথে নিয়ে গেছি তোমাদের। ঠিক নিয়মে পড়াতে পারিনি। পরীক্ষাতেও ঠিক প্রশ্ন করতে পারিনি। ক্লাস ওয়ান থেকেই বইয়ের সব উত্তর লিখে দিয়েছি। মুখস্থ করার জন্য চাপ দিয়েছি। আর পরীক্ষার খাতায় লিখতে না পারলে বকেছি। এত কিছুর পরও তোমাকে শুনতে হচ্ছে, ‘আমার ছেলে বা মেয়েটা বাংলায় ভালো না!’
খারাপ হলেও নিজে লেখো
স্কুলের পাঠ্যবইয়ের গল্প-কবিতা থেকে উত্তর লিখতে হয়। ছোট ক্লাস থেকেই এই উত্তরগুলো নিজে লেখার অভ্যাস করতে হবে। শিক্ষক বা মা-বাবা শুধু বুঝিয়ে দেবেন। এরপর নিজে পড়েও তা বুঝতে হবে। হোক তোমারটা খারাপ, তবু কারও তৈরি করে দেওয়া উত্তর মুখস্থ করা যাবে না। তোমার উপলব্ধি ও বিশ্লেষণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটা খুব দরকার। নইলে পাঠ্যবইয়ের বাইরে ভিন্ন কোনো অংশ থেকে প্রশ্ন করলে বিপদে পড়ে যাবে। শিক্ষকের কাজ প্রশ্নের উত্তরকে ছাত্রের বয়স বিবেচনায় নিয়ে নম্বর দেওয়া। আর কী করলে বা কীভাবে লিখলে আরও ভালো করা যায়, সেটা শেখানো। আবার বলি, শিক্ষকের বা গাইড বইয়ের কয়েকটি নির্দিষ্ট উত্তর মুখস্থ করে বাংলায় দক্ষ হওয়া যায় না।
স্যারের আগেই পড়ে ফেলো
ক্লাসে অবশ্যই মনোযোগী থাকবে। তবে কানে কানে একটা কথা বলি। স্যার ক্লাসে যা কালকে পড়াবেন, চেষ্টা করবে তা আগের দিনেই পড়ে ফেলতে। এভাবে অ্যাডভান্স পড়ার সুবিধা অনেক। তোমার বোঝার কোনো ভুল আছে কি না, তা ক্লাসেই ধরতে পারবে। প্রয়োজনে ক্লাসে শিক্ষককে প্রশ্ন করে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে নেবে।
অর্থ ও বানানের জন্য অভিধান
বাংলা পড়ার সময় একটা অভিধান সব সময় পাশে রাখবে। যখনই কোনো শব্দের অর্থ বুঝতে সমস্যা হবে, অভিধান খুলবে। অভিধান দেখতে না জানলে আজই কারও কাছ থেকে শিখে নাও। এমনকি লিখতে গিয়ে বানান সমস্যা হলেও সমাধান দেবে অভিধান।
পাঠ্য বাংলা পড়ার নিয়ম
পাঠ্যবই পড়ার সময় কাগজ-কলম নিয়ে বসো। গল্প, প্রবন্ধ আর কবিতা পাঠের বিশেষ নিয়ম রয়েছে।
গল্প পড়ার সময় চরিত্রগুলোর নাম লিখে ফেলো কাগজে। নামের পাশে চরিত্রের পরিচয়ও লিখে ফেলো সংক্ষেপে। এখন দেখো, তুমি কি বুঝতে পারছ, মূল চরিত্র কে? অন্য চরিত্রগুলোর ভূমিকা কী কাহিনিতে? গল্পটার মূল বিষয় কী? তোমার আগে পড়া কোনো গল্পের সঙ্গে এই গল্পের কোনো চরিত্রের বা কাহিনির মিল পাচ্ছ কি না? গল্পটা আর কীভাবে শুরু বা শেষ করা যেত? গল্পের পরিণতি ঠিক বিপরীত হলে কেমন হতো? এ রকম অনেক জিজ্ঞাসা তৈরি করতে হবে নিজের মধ্যে।
প্রবন্ধ পড়ার পর প্রথমেই ভাববে, এই প্রবন্ধের মূল আলোচনা কী নিয়ে? বোঝার জন্য প্রয়োজনে আবার পড়ো, আবার পড়ো। এরপর অল্প কথায় পুরো প্রবন্ধের বিষয়বস্তু নিজে লিখে ফেলো। লেখার সময় তোমার মূল বই অবশ্যই খোলা থাকবে। প্রবন্ধ বেশি কঠিন মনে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি প্যারা আলাদাভাবে বোঝার চেষ্টা করো। একেকটি প্যারা ধরে ধরে তার বক্তব্য লিখতে থাকো।
কবিতা অবশ্যই জোরে জোরে পড়বে। পারলে পরিবারের অন্য সদস্য বা বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে আবৃত্তি করবে। কবিতা বোঝার জন্য একেকটি অংশ নিয়ে আলাদা আলাদা করে ভাববে। দুই লাইন, চার লাইন করে একটু একটু করে বুঝে বুঝে এগোতে হবে। ওই লাইনগুলো দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন, বারবার পড়ে বোঝার চেষ্টা করো।
হাতের লেখা যেন চোখে সয়
দিন পনেরো অনুশীলন করলেই হাতের লেখা ভালো হয়ে যায়। পরীক্ষার খাতায় সুন্দর লেখা বলতে আমরা স্পষ্ট লেখাকেই বুঝিয়ে থাকি। খাতার ওপরে ও বাঁয়ে ১ ইঞ্চি পরিমাণ মার্জিন রেখে লিখতে হয়। যাদের হাতের লেখা বেশি খারাপ, অথচ ভালো করার যথেষ্ট সময় হাতে নেই, তাদেরও উপায় আছে। সে ক্ষেত্রে অক্ষর বা বর্ণকে অনেক ছোট করে ফেলো এবং দুই লাইনের মাঝখানে যথেষ্ট ফাঁকা রাখো।
ব্যাকরণের কারণ খোঁজো
ব্যাকরণ হলো কিছু নিয়ম বা সূত্র। উদাহরণসহ বুঝে বুঝে ব্যাকরণ পড়তে হয়। এক নিয়মের যত উদাহরণ তুমি পর্যবেক্ষণ করবে, ততই তোমার ব্যাকরণ-দক্ষতা বাড়তে থাকবে। পর্যবেক্ষণ মানে নিয়মের সঙ্গে উদাহরণকে মিলিয়ে দেখা। মুখস্থের কথা বলিনি কিন্তু!
নির্মিতি অংশের নির্মাণ
ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ, রচনা ইত্যাদি সব ধরনের নির্মিতি অংশ নিজে বানিয়ে লিখবে। অন্তত দু-তিনটি নমুনা পড়ে একটি বানানোর চেষ্টা করবে। তোমার বাসায় যদি একটি বই থাকে, তবে অনলাইনে সার্চ দিয়ে আরও নমুনা পেতে পারো। ভাবসম্প্রসারণের জন্য আলোচ্য অংশটুকু বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে হয়। আবার সারমর্ম বই পড়ে লেখা যাবে না। অবশ্যই নিজে বুঝতে চেষ্টা করবে কী বলা হয়েছে। আর তা নিজেই লিখবে। তোমার ভাবনা বা লেখা ঠিক আছে কি না, তা বই দেখে তুলনা করে দেখতে পারো। রচনা কী কী পয়েন্টে বা উপশিরোনামে লেখা যায়, তা নিজে নির্ধারণের চেষ্টা করবে।
বাংলা এক্সপার্ট!
বাংলায় এক্সপার্ট হওয়ার জন্য ক্লাসের বইয়ের বাইরে অন্যান্য বইও পড়তে হবে। আর নিজের স্বাধীন লেখার চর্চা করতে একটি চমত্কার খাতা কিনবে। সেখানে লিখতে পারো গল্প, কবিতা, প্রতিদিনের ঘটনা—যা খুশি তা–ই। একেকটি শব্দ নিয়েও ভাববে। মানে ওই শব্দটা কীভাবে তৈরি হলো, শব্দটার আর কোনো অর্থ আছে কি না, শব্দটা এমন কেন...এসব আরকি!