বলা হয়ে থাকে, সাইক্লিস্টদের সবচেয়ে প্রিয় ঋতু শীতকাল। মাইলের পর মাইল আরাম করে সাইকেল চালানো যায় শীতকালে। বসন্ত ও গ্রীষ্মেও খুব একটা অসুবিধা হয় না সাইক্লিংয়ে। তবে বিপত্তি বাধে বর্ষায় এসে। সারা দিন ঝিরঝির বৃষ্টিতে সাইকেল নিয়ে বের হওয়াটা খুব মুশকিল। অঝোর বৃষ্টিতে সাইক্লিংয়ের অন্য রকম আনন্দ থাকলেও বৃষ্টি-কাদায় নাজেহাল হয়ে পড়তে পারে প্রিয় সাইকেলটি। তাই বর্ষায় সাইকেলের প্রতি দরকার বিশেষ যত্ন।
বর্ষার প্রস্তুতি
সাইকেলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ চাকা। চাকার টায়ারের ভেতর বাতাস কম থাকলে সাইকেল চালানো যেমন কঠিন, তেমনি খুব বেশি বাতাস থাকলেও আছে সমস্যা। বর্ষায় সাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামার আগে খেয়াল রাখতে হবে টায়ারের চাপের দিকে। টায়ার সাধারণত কতটা চাপ নিতে পারে, তা টায়ারের গায়েই লেখা থাকে। অন্য সব মৌসুমে তুমি যতটা চাপে সাইক্লিং করো, বর্ষা মৌসুমে সাইক্লিংয়ের আগে টায়ারের চাপ তার চেয়ে কিছুটা কমিয়ে নেবে। এতে করে টায়ারে গ্রিপ পাবে আর ভেজা রাস্তায় পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না।
বৃষ্টির দিনে টায়ার পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়াটা খুব জরুরি। ভেজা রাস্তায় পিছলে যাওয়া থেকে বাঁচায় টায়ারের খাঁজকাটা অংশ, যাকে বলে ‘থ্রেড’। শুকনা রাস্তায় ক্ষয়ে যাওয়া থ্রেড খুব একটা সমস্যা না করলেও, ভেজা রাস্তায় এটি দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। পরীক্ষা করে দেখো, তোমার সাইকেলের টায়ারে অন্তত দুই মিলিমিটার গভীর থ্রেড আছে কি না। না থাকলে দ্রুত পাল্টে ফেলো তোমার টায়ার।
এ মৌসুমে সাইকেল এবং নিজেকে কাদা থেকে বাঁচাতে অবশ্যই প্রয়োজন মাডগার্ড। সামনে ও পেছনে দুই চাকায়ই লাগাতে হবে মাডগার্ড। সিটপোস্টের একদম নিচের দিকে মাডগার্ড লাগানোই ভালো। এতে করে সিটপোস্টটাও বেঁচে যাবে কাদা থেকে।
বৃষ্টিবিলাসে সতর্কতা
আমাদের দেশের রাস্তায় অঝোর বৃষ্টির মধ্যে সাইকেল চালানোর সময় কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বৃষ্টির দিনে কাদা-পানিতে ভরপুর রাস্তা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়, পিছলে যাওয়ার ভয়টা থাকবে না। ঠিকভাবে ব্রেক ব্যবহার করতে পারলে পিছলে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনা থাকে না। ভেজা রাস্তায় খুব বেশি গতিতে সাইক্লিংয়ের সময় হঠাৎ পুরোপুরি ব্রেক কষলে পিছলে যেতে পারে পুরো সাইকেল, ঘটতে পারে মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা। অতএব ভেজা রাস্তায় সাইক্লিংয়ের সময় গতি রাখতে হবে নিজের আয়ত্তে, ব্রেক কষতে হবে আস্তে–ধীরে।
বর্ষায় অনেক রাস্তার অবস্থা পুরোপুরি পাল্টে যায়। চেনা রাস্তাও হয়ে পড়ে নাকাল। তাই সামনের রাস্তা যতই পরিচিত হোক, মোড় বা বাঁক ঘোরার সময় অবশ্যই গতি একদম কমিয়ে আনতে হবে। ভারী বৃষ্টিতে অন্যান্য পরিবহন হতে পারে চোখের আড়াল। অনেক সময় বৃষ্টির শব্দে হর্নের আওয়াজ শোনাটাও কঠিন হয়ে যায়। তাই চোখ-কান খোলা রাখতে হবে সব সময়।
রাইড শেষে
বৃষ্টির পানি ও কাদা সাইকেলের জন্য খুব ক্ষতিকর। রাইড শেষে অবশ্যই দ্রুত সাইকেল ধুয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে সাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশে পানি ও কাদা জমে যেতে পারে। এতে করে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে সাইকেলের যন্ত্রাংশ।
সাইকেলের গোসল নাহয় হলো, গোসল শেষে প্রথম কাজ হচ্ছে সাইকেলের চেইনসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশ লুব করা। বৃষ্টির দিনে চেইন ভিজলে প্রতিবার লুব করতে হবে। লুবিংয়ের কাজ তুমি চাইলে নিজেই করতে পারো। বাজারে বিভিন্ন রকম লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায়। বৃষ্টির দিনে ‘ওয়েট লুব’ ব্যবহার করা উচিত। তোমার যদি ডিস্ক ব্রেকের সাইকেল হয়, তবে লুবিংয়ের খেয়াল রাখবে। ডিস্কে যেন লুব্রিকেন্ট বা তৈলাক্ত কোনো পদার্থ না লাগে। ব্রাশ ও লুব্রিকেন্ট দিয়ে ঠিকভাবে লুবিং করলে এই বৃষ্টির দিনেও সুস্থ থাকবে তোমার সাইকেলের চেইনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভেজা রাস্তায় টায়ার ক্ষয়ে যায় দ্রুত। পরবর্তী রাইডের আগে অবশ্যই চেক করে নাও টায়ারের থ্রেড ক্ষয়ে গেল কি না।
বর্ষা মৌসুম শখের বসে সাইক্লিংয়ের জন্য নয়। অপ্রয়োজনে বৃষ্টিতে সাইকেল নিয়ে বের না হওয়াই ভালো। যদি একান্ত প্রয়োজন হয়, তবেই কেবল বৃষ্টিতে সাইকেল চালাও। বৃষ্টিতে ভিজে সাইকেল চালালে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারো। এমনটা হলে কিন্তু বর্ষা শেষে গ্রুপ রাইডটা মিস হয়ে যেতে পারে!