ফ্যাশনের সময় বহিয়া যায়

সময়ের ফ্যাশন ঘড়ি এখন দেখা যায় ছোট-বড় সবার হাতেই
সময়ের ফ্যাশন ঘড়ি এখন দেখা যায় ছোট-বড় সবার হাতেই

প্রচলিত আছে, সময় ও নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। কিন্তু কে বলেছে সে কথা? চাইলেই তো বাধ দিয়ে নদীর স্রোতকে আর ব্যাটারি খুলে ফেলে ঘড়ি থামিয়ে দিয়ে সময়কে অপেক্ষা করানো যায়। তবে সেই তর্কে না গিয়ে বলা যায়, নষ্ট করার মতো সময় আমাদের কারও হাতেই নেই। ঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করতে না পারলে জীবনে সাফল্যেও দেখা দিতে অনেক ঝামেলা করে। আর তাই, সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহারের একটা প্রাথমিক উপাদান হতে পারে ঘড়ি। ঘড়িই পারে সময়-সংক্রান্ত সমস্যার অনেক খানি সমাধান দিতে। তবে শুধু সময় দেখার জন্য ঘড়ি না, ফ্যাশনেরও আরেক নাম হাতের ঘড়ি। ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়েই ঘড়ি প্রতিদিন হচ্ছে আধুনিক। বাড়াচ্ছে নিজের কার্যক্ষমতাও।

সময় দেখার জন্য যে ঘড়ির উদ্ভব, শুরুতে তার চাহিদা মেটাত আকাশের সূর্য আর জমিনের বালু। কারণ, প্রাচীন মানুষেরা সময় নিরূপণ করতে সূর্যঘড়ি ও বালুঘড়ির প্রচলন ঘটিয়েছিল। এই ঘড়ির সাহযে্যই তখন সমুদ্রে নাবিক বা পাহাড়ের অভিযাত্রীরা সময় নির্ধারণ করতেন।

বর্তমান ঘড়ির দেখা মেলে প্রথম জার্মানির নুরেমবার্গ ও অক্সবার্গে। কাঁটার এই ঘড়ি সেখানে দেখা যায় ১৬শ শতকের দিকে। নুরেমবার্গের সেই ঘড়ির মাধ্যমে ঘড়ির জনক হিসেবে নিজের নাম উজ্জ্বল করেন পিটার হেনলেন। তিনিই সময় গণনার জন্য ঘড়িকে কাঁটার ঘরে আবদ্ধ করেন। এই সময়ে ঘড়ির শুধু একটা ঘণ্টার কাঁটা ব্যবহার করা হতো। এসব ঘড়ির কোনো ধরনের আবরণও ছিল না। ১৬৮০ সালে ব্রিটেনে এসে ঘড়িতে মিনিটের কাঁটা যুক্ত হয়। অবশ্য তারও কিছু সময় আগে ঘড়ির ওপরে কাচ দিয়ে আবরণের ধারণা চালু হয়। ১৯৫০ সালে আমেরিকায় এসে ঘড়ির আরেক ধাপ উন্নতি ঘটে। এই সময়ে সেখানে ইলেকট্রিক ঘড়ির উদ্ভব হয়।

ফ্যাশনে হাতঘড়ি

 ফ্যাশনে হাতঘড়ি যোগ হয়েছে আরও শত বছর আগে থেকেই। হাল আমলেও নানা ধরনের ঘড়ির দেখা মেলে বাজরে। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির ঘড়ি বিক্রেতা শরাফত রায়হান বলেন, ‘ছোট-বড় সবার কাছেই হাতঘড়ি এখনো সমান জনপ্রিয়। কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েদের এখন রঙিন ঘড়ির প্রতি বেশি চাহিদা দেখা যাচ্ছে। জামা বা জুতার রঙের সঙ্গে ঘড়ির বেল্ট বা ডায়ালের রং মিলিয়ে ঘড়ি কেনেন অনেকে। ছেলেদের একটু বড় ডায়াল পছন্দ হলেও মেয়েরা নিচ্ছে ছোট্ট ডায়ালের ঘড়ি। অনেকে আবার বালা বা ব্রেসলেটের ওপরে বসানো ঘড়ি কিনছেন।’ চেইনের চেয়ে বেল্টের বা রিং দেওয়া ঘড়িই কিশোরদের জন্য বেশি ফ্যাশনেবল। এ ছাড়া ঘড়িতে কাটু‌র্ন, ফুল, প্রজাপতি, এলইডি, রেকর্ডার, ক্যামেরা বা মুঠোফোনের দেখাও মিলছে এই সময়ে।

হলিক্রস স্কুলের অনিমিতা হাসান জানাল, ‘ঘড়ি খুব ভালো লাগলেও আমি এমনিতে খুব একটা ঘড়ি পরি না। কিন্তু পরীক্ষার সময়গুলোয় ঘড়ি পরি মাস্ট। পরীক্ষার হলে হাতে ঘড়ি না থাকলে খুব সমস্যা হয়।’

জনপ্রিয় কিছু ঘড়ির ব্র্যান্ড

 নামকরা ব্রান্ডের ঘড়ির চাহিদা সারা বিশ্বে। এর মধ্যে আছে রাডো, টাইটান, সোয়াচ, ওমেগা, সিকে, সিটিজেন ওয়াচ, ক্যাসিও, ফেরারি, অ্যাডিডাসসহ নানা ব্র্যান্ড।

 ব্র্যান্ড নাকি ননব্র্যান্ড

 বাজার ঘুরে দেখা গেল, ব্র্যান্ডের ঘড়ির চাহিদা মূলত এর আভিজাত্য ও স্থায়িত্বের জন্য। অন্যদিকে, নন ব্র্যান্ডের ঘড়িও দেদারসে বিকোচ্ছে । শপিং মল, খুচরা দোকান থেকে ফুটপাতের ঝুড়ি—সবখানেই দেখা মিলছে নন ব্র্যান্ডের ঘড়ির।

অনেক দামের ঘড়ি

 পারমিগিনি কালপা নামে জাপানি ঘড়িটি তৈরিতে ৪০০ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। এই ঘড়িতে ব্যবহৃত হয় সোনা, হিরা-মুক্তা, পাথরসহ ২৮ প্রকারের ধাতব। ঘড়িটির দাম ১৫০ লাখ ডলার। ভ্যাকেরন কন্সটানটিন নামে আরও একটি দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি আছে। এই ঘড়িই ব্যবহার করতেন নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, হ্যারি ট্রু ম্যানের মতো জনপ্রিয় ব্যক্তিরা।

এটি মূলত আকর্ষণীয় ডায়াল প্লেটের জন্য পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। তুমিও চাইলে নিজের হাতে ওঠাতে পারো এই ঘড়ি, তবে তার আগে তোমাকে গুনতে হবে ছয় লাখ ৮৭ হাজার ২০০ ডলার।

 ঘড়ির রকমফের

 আজকাল ঘড়ি শুধু সময় দেখার জন্য না, সে কথা তো আগেই জেনেছ। এতে এখন প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন কিছু। সময়ের পাশাপাশি কোনো ঘড়িতে দেখা যাবে দিন-তারিখ, কোনোটাতে দিক নির্ণয়ের জন্য আলাদা কম্পাস দেওয়া আছে। ঘড়িতে রেডিয়াম বা এলইডিও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে অনেকের কাছে। আছে মুঠোফোন বা ছবি তোলার মতো প্রযুক্তির ঘড়ি। চাইলে ঘড়িতে দেখা যাবে সেখানকার তাপমাত্রা। এ ছাড়া খুব শিগ্‌গিরই স্যামসাং বা তোশিবা নিয়ে আসতে চলেছে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট ঘড়ি।

দরদাম

 বিশ্ববাজারের সবচেয়ে দামি ঘড়ির দাম তো শুনেছ। নিশ্চই তাতে মন খারাপ? ভাবছ, তোমার আর ঘড়ি পরা হলো না? ওটা তো ছিল সবচেয়ে দামি ঘড়ির খবর। তুমি চাইলে ১২০ টাকায়ও ঘড়ি কিনতে পারো। ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার ঘড়িতে ফ্যাশন বা নকশার কোনো অভাব পাবে না। নিজের ইচ্ছেমতো কিনে নিতে পারো সেখান থেকে।

তারচেয়ে একটু ভালো কিনতে চাইলে বাজেটও বাড়াতে হবে আরেকটু। ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় কেনা যাবে বেশ ভালো ঘড়ি। তবে, ব্র্যান্ডের ঘড়ি কিনতে চাইলে যেতে হবে চার সংখ্যার ঘরে। ১০০০ থেকে ৮০০০ টাকায় কিনতে পারবে ভালো মানের ব্র্যান্ডের ঘড়ি।

 যেখানে কিনবে

 ঢাকায় ঘড়ির এক বিশাল বাজার পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী। সেখানে দেখা মিলবে হরেক রকমের ঘড়ি। এ ছাড়া মিরপুর বা যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা—সবখানেই কেনা যাবে হাতঘড়ি। আর কারওয়ান বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, মতিঝিল, নিউমার্কেট এলাকায় দোকানের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের যেকোনো শপিং সেন্টারেই দেখা মিলবে ভালো ঘড়ির।

ছবি: সাবহানাজ রশীদ ও তৌসিফ ফরহাদ

আঁকা: নামিস্তা তাবাসসুম

মডেল: পিউ, ফাহাদ ও তিথি