ছাদে যাওয়া বারণ
এই কোয়ারেন্টিনে ঘরে থাকা আসলেই একটা আজব ব্যাপার। কেউ ভাবেনি এভাবে একটানা ঘরে থাকা যায়। আমি এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কলেজে ওঠা বা ভর্তি কোনোটাই হয়নি। কোথাও গল্প লিখতে গিয়ে ক্লাস আর প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হবে ভেবে আর গল্পই পাঠাই না। কিসে পড়ি তাই তো জানি না, কী লিখব বলো?
আমি সারা দিন গল্পের বই, মুভি নিয়ে থাকলেও প্রতিদিন ছাদে যাই। আমাদের বিল্ডিংয়ে থাকা বান্ধবীর সঙ্গে একদিন দাবা খেলছিলাম ছাদে। খেলায় এতই মগ্ন ছিলাম, কখন যে দারোয়ান এসে ছাদে তালা লাগিয়ে গেছে, কেউ টের পাইনি। অবশ্য তাঁরও দোষ নেই। আমরা বসে ছিলাম এমন জায়গায়, যেখান থেকে আমাদের দেখা যায় না। প্রায় সন্ধ্যার দিকে যখন খেলা শেষ করলাম, তখন দেখি আমরা ছাদবন্দী। একটু ভয়ই পেয়েছিলাম, কারণ আমাদের কারও কাছে ফোন ছিল না।
রাত প্রায় একটা বেজে গেল। দুজনের পরিবারই আমাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। ছাদে যেহেতু তালা দেওয়া, তাই এই দিকে কেউ আসেনি। অনেক ডাকাডাকির পরও আমাদের যখন কেউ শুনতে পেল না, আমরা ক্লান্ত হয়ে রাতের ঢাকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলাম। ঘরের মধ্যে তো আর চাঁদের দেখা মেলে না। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার আরকি!
হঠাৎ আমার বান্ধবী গাছের টব দেখিয়ে বলল, ‘শোন, আমরা যদি টবগুলো রাস্তায় ফেলে দিই? সবাই তো তখন বুঝতে পারবে যে ছাদে কেউ আছে।’ যেই ভাবা সেই কাজ। ছোট টবগুলো বেছে এনে অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন দেখলাম দূর থেকে কেউ একজন আসছে। দুজন একসঙ্গে টবগুলো রাস্তায় ফেলতে শুরু করলাম। তিনটা ফেলেই নিচে তাকিয়ে দেখি অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। আমরা নিচে উঁকি দিতেই আমাদেরও দেখল সবাই। অবশেষে ছাদ থেকে আমরা বাসায় গেলাম।
ছাদবন্দী অবস্থা থেকে বের হলেও আমাদের ছাদে যাওয়া বারণ করে দিল। গত কয়েক দিন আর ছাদে যাই না। এখন বারান্দা থেকে একচিলতে আকাশের দিকে তাকিয়ে কংক্রিটের শহরের সুস্থতার আশায় থাকি।
লেখক : শিক্ষার্থী, উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা