বাদলা দিনে নাকি বড়দের মনে পড়ে ছেলেবেলার গান। কিন্তু এখন যাদের ছেলেবেলা তাদের কী মনে হয়? বৃষ্টি মানেই স্কুল ফাঁকি দেওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে কাকভেজা হয়ে বাড়ি ফেরা অথবা ভেজার পরে খুকখুক কাশি? আরও একটা জিনিস আমার মনে হয় অনেকেরই কমন পড়বে সেটা হচ্ছে স্কুলে ছাতা হারানো। সবকিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখলেও ভোলামন ছাতার কথা ঠিকই ভুলে বসে থাকবে। বাড়ি থেকে ঝরঝর বৃষ্টিতে ছাতা নিয়ে স্কুলে আসার পর ঝকঝকে রোদ। ব্যস, ছাতা হারাতে আর কী চাই! ছুটির ঘণ্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ির পথে দে দৌড়। আর ছাতা পড়ে থাকল ক্লাসরুমের এক পাশে সম্পূর্ণ একলা। বাসায় ফিরে মায়ের বকুনি হজম করতে তখন কানে আশ্রয় হলো হেডফোনের। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলে, আর ছাতা ধরব না। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া আর মাথা ব্যথার ভয়ে মাথা কেটে ফেলা একই ধরনের বোকামি। তবে ছাতাটা যদি হয় তোমার মনের মতো, তাহলে কিন্তু হারানোর ভয় কম। বৃষ্টির দিনে ছাতা ছাড়া তো চলাটাই দায়। তাই ছাতাকেই বানিয়ে নিতে পারো তোমার বন্ধু। ভাবছ, ছাতা আবার বন্ধু হবে কীভাবে? আরে, সেই কথাটাই তো জানাতে চাই তোমাদের। আচ্ছা, ছাতা নাহয় তোমার বন্ধু হতে পারে না, তবে একটা ছোট্ট মিষ্টি পুতুল তো বন্ধু হয়। কিংবা তোমার প্রিয় সুগন্ধির বোতল। তাকে তো কাছে কাছে রাখতেই পারো। তাহলেই চলবে। কারণ, বাজারে এমনই ঢঙের ছাতার দেখা মিলছে আজকাল, যা দেখতে আস্ত একটা পুতুলই। মাথার দিকটাতে মোড় দিলেই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে ছাতাটা। রাজধানীর নিউমার্কেটের ছাতার দোকানি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বাদলা দিনে ছাতা তো সকলেরই দরকার পড়ে। তবে বাচ্চারা যাতে ছাতা হারিয়ে না ফেলে, তাই এমন খেলনা ছাতা তাদের জন্য বেশি ভালো। এ ছাড়া কয়েক দফা ভাঁজ করে রাখা যায় এমন ছাতাও পছন্দ করছে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা।’
দেখো ছাতার বাহার
কিশোরদের উপযুক্ত নানা ধরনের ছাতা আছে বাজারে। লম্বা বাঁটের ছাতা তো আছেই, সেই সঙ্গে বাজারে এসেছে নতুন নতুন নকশার ছাতা। ছোট্ট বোতলের ভেতরে ভরে রাখা ছাতা বাংলাদেশে অনেকটা নতুন। এটা মূলত চীন ও মালয়েশিয়া থেকে আসে। এর বাইরের দিকে নানা ধরনের ছবি ও লেখা দিয়ে সাজানো। ভেজা ছাতাও সহজে মুখ আটকে ব্যাগে ভরে রাখা যায়। চাইলে স্টাইল করতে হাতে ঝুলিয়ে নিয়েও হাঁটতে পারো। অনেক ছাতার মাথার ওপরে শিং আছে। কাটুর্ন প্রিন্টের ছাতার কদরও মন্দ না। আছে ছাতার নিচের অংশে নানা ধরনের লেসের ব্যবহার। অনেক ছাতাই একাধিক ভাঁজ দিয়ে একদম ছোট্ট করে সঙ্গে থাকা ওয়াটারপ্রুফ কাপড়ে জড়িয়ে ব্যাগে রাখতে পারো। ছাতা মেলে ধরার জন্য পুরোনো পদ্ধতিতে হাতের টান ছাড়াও আজকাল টিপ বোতামের ব্যবহার হয়। ছাতার সামনের অংশে থাকা বোতামে টিপ দিলেই সহজে সেটা মেলে যায়। আবার চাইলে হাতের টানেই গুটিয়ে রাখা যায় সহজে। ছাতার রং কেমন হবে, সেটা নিজেই বেছে নিতে পারো। কারণ, কালো কাপড়ের বদলে আজকাল নানা রঙের ছাতাও চলছে সমান তালে। বল প্রিন্ট, একরঙা, লেস কাপড়, সাদা পলি কাপড়েও ছাতা তৈরি হচ্ছে। আছে প্লাস্টিক কাগজের ফুল, ফল আঁকা ছবি।
কোনটার দাম কেমন
সাধারণ লম্বা বাঁটের ছাতা কেনা যাবে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া এক ভাঁজের সাধারণ ছাতার দাম ৯০ থেকে ২০০ টাকা। নকশা করা ছাতার দাম ২৫০ থেকে ১০০০ টাকা। এ ছাড়া পুতুল, সুগন্ধি ও নানা ধরনের রেপ্লিকার মধ্যে থাকা ছাতার দাম পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে।
যেখানে কিনতে পারবে
সাধারণ ছাতা তো শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই কিনতে পারবে। তবে একটু নকশাদার ছাতা কিনতে চাইলে বেশি সংগ্রহের ছাতার দোকানে যেতে হবে। রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট, বেবি কালেকশন ধানমন্ডি, প্রিন্স বাজার, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, মোস্তফা মার্ট, ফার্মগেট, গুলিস্তান, পল্টন, শুলশানের বিভিন্ন শপিং মলে পাওয়া যাবে ছাতা। এ ছাড়া পুতুল নকশার ছাতা পাবেন ধানমন্ডির এডিসি এম্পায়ার প্লাজার ‘গিফট লাগবে’ দোকানে। নিউমার্কেট ও পল্টনের কয়েকটি দোকানে এমন ছাতার সংগ্রহ আছে।
ছাতার যত্নে
ছাতা কেনার আগে অবশ্যই এর শিক ও বাঁট মজবুত কি না দেখে নাও। না হলে একটু হাওয়াতেই সেটা উল্টে ও ভেঙে যেতে পারে। ছাতার শিকের নিচের বাড়তি অংশে গোল পুঁতি বা সুতা দিয়ে আটকানো থাকলে তা থেকে আঘাত লাগার সম্ভাবনা কম। আর ভেজা ছাতা ভাঁজ করে না রেখে শুকিয়ে রাখতে হবে। ছাতার বাঁট ও শিকে যেহেতু লোহা বা স্টিলের ব্যবহার থাকে, তাই ভেজা অবস্থায় রেখে দিলে মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। ছাতার কাপড় এমন দেখে বেছে নাও, যাতে সহজেই সেটা শুকিয়ে যায়। ভেজা ছাতা ব্যাগে রাখলে কিন্তু তোমার বইও নষ্ট হতে পারে। তাই ছাতা যত্নে আর সাবধানে রেখো।
ছবিঃ সুমন ইউসুফ
মডেলঃ অরিন, এলিন, অহর্নিশ, রাকিন, আশির ও নিহাল
ছাতা সরবরাহঃ ইনফিনিটি